নয়াদিল্লি ও কলকাতা: সওয়াল। পাল্টা সওয়াল। সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার শুনানিতে তখন আইনজীবীরা নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরছেন। আর সেই সময়ই উঠল ২১ বছর আগের এক চিকিৎসককে খুনের মামলার প্রসঙ্গ। ২০০৩ সালে রানাঘাট হাসপাতালের শল্য চিকিৎসক চন্দন সেন খুনের মামলার প্রসঙ্গ তুললেন জনস্বার্থ মামলাকারীর আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি। আদালতে এইভাবে নাম উল্লেখ করায় আপত্তি জানালেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা।
চিকিৎসক চন্দন সেন মামলায় কী হয়েছিল?
২০০৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রানাঘাট থানায় একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। অভিযোগপত্রে লেখা হয়, ওইদিন চিকিৎসক চন্দন সেন রানাঘাট হাসপাতালের স্টাফ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন। তাঁকে নিমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। চিকিৎসক শুভরঞ্জন খাঁড়া ও তাঁর স্ত্রী, অপূর্ব মোহন সান্যাল-সহ আরও অনেকে আমন্ত্রিত ছিলেন। রাত সাড়ে ৯টার সময় খেতে দেওয়া হয় তাঁদের। রাত ১০টা ২০ থেকে সাড়ে দশটার মধ্যে খাওয়া শেষ হয়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও চন্দন সেন খাবার খাওয়ার শেষে হাত-মুখ ধুতে যান।
হাত-মুখ মোছার জন্য চিকিৎসক সেনকে একটি তোয়ালে দেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। সেইসময় একটি রুমে টিভিতে ক্রিকেট ম্যাচ দেখছিলেন অপূর্ব মোহন সান্যাল। মিনিট ১৫-২০ পরে রুমে ঢুকে সুনীল বলেন, চিকিৎসক সেনকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর খোঁজ শুরু হয়। স্থানীয় ক্লাবের ছেলেরাও খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। অবশেষে একটি পুকুরে তাঁর দেহ পাওয়া যায়। তাঁর দেহ চিকিৎসক খাঁড়ার গাড়িতে হাসপাতালে আনা হয়। গাড়িতে ছিলেন সুনীল ও চিকিৎসক খাঁড়া। অপূর্ব মোহন সান্যাল ও সুনীলের জামাই মোটরবাইকে চেপে তাঁদের পিছনে পিছনে আসেন। হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক চন্দন সেনকে ‘ব্রট ডেড’ ঘোষণা করা হয়।
২০০৩ সালের ১২ জুন তদন্তকারী অফিসার চার্জশিট জমা দেন। সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দেওয়া হয় ওই বছরের ২৭ অগস্ট। চিকিৎসক চন্দন সেনের দেহের ময়নাতদন্ত করেছিলেন চিকিৎসক এ কে গুপ্ত। ময়নাতদন্তে তিনি জানান, ১১টি বাহ্যিক ও ৪টি অভ্যন্তরীণ আঘাত রয়েছে মৃতদেহে। প্ল্যাস্টিক ব্যাগ, বালিশ কিংবা অন্য কিছু মুখে চাপা দেওয়ার ফলে মৃত্যুর সম্ভাবনার কথা উঠে আসে ময়নাতদন্তে। অভিযোগ উঠে, সৎ চিকিৎসক চন্দন সেন একটি কায়েমি চক্রের মুনাফার পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়াচ্ছিলেন।
২০০৫ সালের জুলাইয়ে কৃষ্ণনগর আদালত শুভরঞ্জন খাঁড়া, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, রহমত এ আলম এবং আব্বাস আলি কারিকরকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত। প্রমাণ লোপাটের দায়ের অপূর্ব সান্যালের পাঁচ বছর কারাদণ্ড হয়। তবে ২০১০ সালে কলকাতা হাইকোর্ট সকলকে বেকসুর খালাস করে দেয়।
এদিন ওই ঘটনার উল্লেখ করেন আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি। তিনি বলেন, এই ঘটনায় ফেক মেডিসিনের বাংলাদেশি মডিউল যুক্ত ছিল। আরজি করেও ফেক মেডিসিনের ঘটনা রয়েছে। বাংলাদেশি মডেল সক্রিয় রয়েছে। আইনজীবী বলেন, বয়স্ক ব্যক্তিরা কলকাতার রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছেন, কারণ তাঁদের স্মৃতিতে একুশ বছর আগের এই ঘটনা রয়েছে। প্রকাশ্য আদালতে এইভাবে নাম উল্লেখ করায় আপত্তি জানালেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা।