চণ্ডীগঢ়: লুধিয়ানার আদালত চত্বরে বিস্ফোরণের (Ludhiana Court Blast) সঙ্গে আগেই পাওয়া গিয়েছিল খলিস্তানি যোগ। এ বার, সেই বিস্ফোরণকাণ্ডে জার্মানি থেকে গ্রেফতার খলিস্তানপন্থী জঙ্গি জসবিন্দর সিং। জানা গিয়েছে, ধৃত জসবিন্দর সিং মুলতানি কানাডা-ভিত্তিক খলিস্তানপন্থী শিখ সংগঠন ‘শিখস ফর জাস্টিস’-এর সদস্য। শুধু লুধিয়ানাই নয়, দিল্লি মুম্বইতেও হামলার ছক ছিল জসবিন্দরের (Jaswinder Singh)।
কীভাবে হামলার ছক কষেছিলেন জসবিন্দর?
সূত্রের খবর, পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের নির্দেশেই দিল্লি ও মুম্বইতে হামলার ছক কষেছিলেন জসবিন্দর। লুধিয়ানা বিস্ফোরণকাণ্ডের পরেই খলিস্তানি গোষ্ঠীর ধৃত সদস্য জার্মানিতে পালিয়ে যান। সেখানেই ছিলেন তিনি। জসবিন্দরকে গ্রেফতার করতে মোদী সরকারের তরফে অনুরোধ করা হয় জার্মান প্রশাসনকে। সোমবার রাতে তাঁকে মধ্য জার্মানির এরফ্রুট থেকে জার্মান পুলিশ গ্রেফতার করে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, পঞ্জাবের হোশিয়ারপুর জেলার মনসুরপুর গ্রামের বাসিন্দা মুলতানির সঙ্গে আইএসআই এবং পাক চোরাচালান চক্রের যোগাযোগ ছিল। সেই সূত্র ব্যবহার করেই ভারতে অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহ করা হয়েছিল।
গোয়েন্দা সূত্রে খবর, শিখ ফর জাস্টিসের প্রতিষ্ঠাতা গুরপতওয়ান্ত সিং পান্নুর ঘনিষ্ঠ বছর চল্লিশের জসবিন্দরের অঙ্গুলিহেলনেই চলছিল অস্ত্রের চোরাচালান ও বিস্ফোরণের পরিকল্পনা। শুধু তাই নয়, পঞ্জাব পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, লুধিয়ানা আদালত চত্বরের বিস্ফোরণের তদন্তের সময় খলিস্তানি এবং মাদক চোরাচালানকারীদের সঙ্গে যোগসূত্র পাওয়া গিয়েছে। সেই মোতাবেক তদন্ত করতে গিয়ে উঠে আসে চোরাচালান চক্রের নেতা রিন্দা সাধুর নামও। এই রিন্দার সঙ্গে অত্যন্ত সুসম্পর্ক ছিল ‘শিখস ফর জাস্টিস’-এর সভাপতি অবতার সিং পান্নুর। যাঁর সঙ্গে জড়িয়েছিল জসবিন্দরের নামও।
গগনদীপকে কাজে লাগিয়েছিল জসবিন্দর
শুক্রবারই পঞ্জাব পুলিশ(Punjab Police)-র তরফে জানানো হয়েছিল, গত ২৩ ডিসেম্বর পঞ্জাবের লুধিয়ানা জেলা আদালতে যে বিস্ফোরণটি হয়েছিল, তা ঘটিয়েছিল গগনদীপ সিং নামক এক ব্যক্তি। তিনি প্রাক্তন পুলিশকর্মী। তিনি হেড কন্সটেবল ছিলেন, কিন্তু ২০১৯ সালে তাঁকে চাকরি থেকে বের করে দেওয়া হয়। এই গগনদীপকে বিস্ফোরণকাণ্ডে কার্যত ব্যবহার করেছিলেন জসবিন্দর অন্তত এমনটাই জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।
গত ২৩ তারিখ লুধিয়ানার রেকর্ডরুমের পাশে শৌচালয়ে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল ওই মামলার যাবতায় প্রমাণ লোপাট করতেই। প্রাথমিক তদন্তের পর জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনী এই তথ্যগুলি জানায়। শনিবার পঞ্জাব পুলিশ সরাসরি গগনদীপের বাড়িতে হানা দেয়। খান্নায় তাঁর বাড়ি থেকে তুলে আনা হয় গগনদীপের ভাইকে। পুলিশের তরফে জানানো হয়, মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যই তাঁকে আটক করা হয়েছে। তাঁর কাছ থেকে একটি মোবাইল, ল্যাপটপ ও কিছু নগদ টাকা উদ্ধারও হয়। ঘটনায় গগনদীপের এক বান্ধবীকেও গ্রেফতার করা হয়।
ঠিক কী হয়েছিল গত ২৩ ডিসেম্বর?
ওইদিন, আচমকাই বিস্ফোরণ হয় লুধিয়ানা জেলা আদালতে (Ludhiana District Court)। দুপুর ১২টা ২২ মিনিট নাগাদ বিস্ফোরণটি হয়। ওইদিনই আইনজীবীদের ধর্মঘট ছিল। সেই সময় আদালত চত্বরেই তারা বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। বিস্ফোরণে এক মহিলা সহ দুইজনের মৃত্য়ু হয়। বিস্ফোরণের অভিঘাতে ও পদপিষ্ট হয়ে আরও পাঁচজন গুরুতর আহত হন।
প্রাথমিক তদন্তের পর জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর (National Security Guard) তরফে জানানো হয়, বিস্ফোরণস্থল থেকে যে ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, তিনিই বিস্ফোরণটি ঘটিয়েছিলেন। মৃত ওই ব্যক্তির নাম গগনদীপ সিং। তিনি প্রাক্তন পুলিশকর্মী। যাবতীয় দুষ্কর্মের প্রমাণ লোপাট করতেই ওই বিস্ফোরণ।
সূত্রের দাবি, যে সময়ে আদালতের ভিতরে বিস্ফোরণ হয়েছিল, ঠিক সেই সময়েই গগনদীপের ফোনেও বিস্ফোরণ হয়। কিন্তু তাঁর কাছে একটি ইন্টারনেট ডঙ্গল ছিল, সেটি দিয়েই অনলাইনে কারোর কাছ থেকে বিস্ফোরণটি কীভাবে ঘটাতে হবে, সেই সম্পর্কে গগনদীপকে যাবতীয় তথ্য দিচ্ছিল অন্য কেউ। তবে অভিজ্ঞতা না থাকায়, সঠিকভাবে বোমাটি তৈরির আগেই তা ফেটে যায়। মৃত গগনদীপের সিম কার্ড ও ওয়্যারলেস ডঙ্গলের মাধ্যমেই পরিচয় জানা সম্ভব হয়। পরে পরিবারের সদস্যরাও তাঁর হাতের ট্যাটু দেখেই দেহ শনাক্তকরণ করেন। তদন্তের কিছুটা অগ্রগতি হতেই বিস্ফোরণের নেপথ্যে বাব্বার খালসা নামক পাকিস্তান সমর্থিত একটি খলিস্তানি সংগঠনের নাম উঠে আসে। অবশেষে সোমবার গ্রেফতার হয় জসবিন্দর।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১০ জুলাই ‘শিখস ফর জাস্টিস’ সংগঠনকে ইউএপিএ আইনের আওতায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ভারত সরকার। গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, ওই সংগঠনটির সোশ্যাল হ্যান্ডেলে পাকিস্তান, বিশেষ করে আইএসআই এজেন্টদের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে । দেশ-বিরোধী কার্যকলাপে আর্থিকভাবে সাহায্য ওই নিষিদ্ধ সংগঠন। নাশকতায় মদতের পাশাপাশি ধারাবাহিক ভাবে সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে ভারত বিরোধী প্রচার চালায় এই সংগঠন।
আরও পড়ুন: Dilip Ghosh on Municipal Elections 2021: ‘তৃণমূলের হয়ে কাজ করছে নির্বাচন কমিশন’