সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী ও সরকারকে আক্রমণ, ভুয়ো অ্যাকাউন্টের রমরমা, অভিযোগ দায়ের মহারাষ্ট্র পুলিসের
জুন মাসে অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় আক্রমণের শিকার হন মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর মহা বিকাশ আগাড়ি সরকার। পুলিসের মতে, অভিনেতার মৃত্যুর পরই মুখ্যমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে পরিকল্পিতভাবে আক্রমণ করা হয়েছে। নানা ধরনের কুরুচিকর মন্তব্য ও ট্রোলিং-র শিকার হতে হয়েছে তাঁকে।

TV9 বাংলা ডিজিটাল: সুশান্ত সিং রাজপুতের (Sushant Singh Rajput) মৃত্যুতে কাঠগড়ায় দায় করানো হয়েছিল মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে ( Uddhav Thackeray)-কে। লাখ লাখ টুইট ও পোস্টে নানা কুরুচিকর মন্তব্য় ও পদত্য়াগের দাবি উঠেছিল। তাদের ‘শায়েস্তা’ করতেই এবার মাঠে নামল পুলিস। সোশ্যাল মিডিয়ায় (Social Media) মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে ও তাঁর ছেলে আদিত্য ঠাকরের (Aaditya Thackeray) বিরুদ্ধে মানহানিকারক পোস্ট করায় ১০জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করল পুলিস।
জুন মাসে অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় আক্রমণের শিকার হন মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর মহা বিকাশ আগাড়ি (Maha Vikas Aghadi) সরকার। পুলিসের মতে, অভিনেতার মৃত্যুর পরই মুখ্যমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে পরিকল্পিতভাবে আক্রমণ করা হয়েছে। নানা ধরনের কুরুচিকর মন্তব্য ও ট্রোলিং (Trolling)-র শিকার হতে হয়েছে তাঁকে।
মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কুরুচিকর মন্তব্য করার ঘটনায় অভিযুক্তদের মধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে একাধিক এফআইআর দায়ের করেছে পুলিস। ইতিমধ্যেই চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং বাকিদের খোঁজ চালাচ্ছে পুলিস। একটি ইউটিউব চ্যানেলের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে, তবে এখনও সেই চ্যানেলের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। তবে শুধু সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু নয়, করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েও আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছিল ঠাকরে সরকারকে। এপ্রিল মাসেই মানহানির অভিযোগে একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল।
তদন্তে জানা গিয়েছে, যারা মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর ছেলেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় আক্রমণ করেছেন, তাদের অধিকাংশই বিজেপির সমর্থক। অভিযুক্তদের মধ্যে একজন হলেন সমীত ঠক্কর, যাকে টুইটারে ফলো করেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi)। তবে অভিযুক্তের আইনজীবী প্রকাশ জয়সওয়াল আদালতে বলেন,” সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টের ভিত্তিতে লোকজনদের জেলে পাঠিয়ে রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতার পরিবেশ সৃষ্টি করছে সরকার। যদি টুইটারে পোস্ট করাকে কেন্দ্র করে লোকজন গ্রেফতার করা হয়, তবে রাজ্যে একটি নতুন টুইটার জেল তৈরি করতে হবে।”
অধিকাংশ এফআইআর-ই সাইবার পুলিস স্টেশনে তথ্যপ্রযুক্তি ধারায় (IT Act) দায়ের করা হয়েছে। শিবসেনার আইনি বিভাগের সদস্য আইনজীবী ধরম মিশ্র-র অভিযোগের ভিত্তিতেই দায়ের হয়েছে অভিযোগগুলি। তিনি বলেন, “অধিকাংশ অভিযুক্তই বিজেপির সমর্থক। আমার বিজেপির কাছে প্রশ্ন, আপনারা কীভাবে এই টুইটগুলির সাফাই দেবেন যেখানে কেবলমাত্র মুখ্যমন্ত্রীর সম্পর্কে নিম্নরুচিকর মন্তব্যই নয়, পাশাপাশি সোশ্য়াল মিডিয়ায় অশ্লীল ও অশালীন বিষয়বস্তু পোস্ট করে নারীদের অসম্মান করা ও সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের বিরুদ্ধে আপত্তিজনক ও খারাপ মন্তব্য করে তাদের অসম্মান করা হয়েছে। ”
তিনি আরও যোগ করে বলেন, “এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার গর্বের সঙ্গে বলে যে তাদের প্রধানমন্ত্রী ফলো করেন। প্রধানমন্ত্রীর একবার যাচাই করে দেখা উচিত তিনি কীধরনের অ্য়াকাউন্টগুলিকে ফলো করছেন।” গত মাসেই একটি সাবাদিক সম্মেলনে মুম্বইয়ের পুলিস কমিশনার পরমবীর সিং জানান, কমপক্ষে এক লাখ টুইটার অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হয়েছে সরকার ও পুলিসের বিরুদ্ধে আক্রমণ করতে এবং সুশান্ত সিং রাজপুত মামলায় নানা মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দিতে। পুলিস প্রায় ৫০টি বট অ্যাকাউন্ট (Bot Account)খুঁজে পেয়েছে, যার মাধ্যমে একাধিক ভুয়ো অ্যাকাউন্ট চালানো হত।
অভিযুক্তদের গ্রেফতারের পরে চুপ করে থাকেনি বিজেপিও। বিধায়ক আশিস সেলার বলেন, রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় আক্রমণ করতে বিজেপি মদত দেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তিনি বলেন,”যদি মহারাষ্ট্র সরকার এইধরনের আক্রমণ পছন্দ না করেন, তবে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে যে আক্রমণ করা হয়, সেগুলি কী?আইন সবার জন্য সমান হওয়া উচিত। সাধারণ মানুষের কী অধিকার আছে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে লেখার? সমালোচনা গণতন্ত্রেরই একটি অংশ এবং একে স্বাগত জানানো উচিত।”
মঙ্গলবার মুম্বই পুলিস একটি প্রেস নোট প্রকাশ করে, সেখানে বলা হয়েছে, #Babypenguin, #JusticeforSSR ও #ParambirSinghResign-র বেশ কিছু হ্য়াশট্যাগ সাইবার ও ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা খতিয়ে দেখে জানতে পেরেছে টুইটারের এই অ্যাকাউন্টগুলি সম্প্রতি সময়েই (জুন ২০২০-অক্টোবর ২০২০) তৈরি হয়েছে। ১.৫ লাখ টুইটার অ্যাকাউন্ট, যেখান থেকে সরকার ও পুলিসকে অআক্রমণ করা হয়, তার ৮০ শতাংশই ভুয়ো। এই অ্যাকাউন্টগুলি চিন, পানামা, হংকং, নেপাল থেকে পরিচালিত হয়। এর মাধ্যমেই জানা গিয়েছে অ্যাকাউন্টগুলি প্রক্সি সার্ভারের (Proxy Server) সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে।
