মুম্বই: যত সময় গড়াচ্ছে, ততই জটিল হচ্ছে মুম্বই মাদককাণ্ড (Mumbai Cruise Drug Case)। এনসিবি অফিসার সমীর ওয়াংখেড়েকে ছেড়ে এবার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবীস(Devendra Fadnavis)-র পিছনে পড়েছেন নবাব মালিক (Nawab Malik)। মঙ্গলবারই তিনি জানিয়েছিলেন, আজ “হাইড্রোজেন বোমা” ফাটাবেন। সেই প্রতিশ্রুতি মতোই সাংবাদিক বৈঠক করলেন মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী। সেখানেই তিনি দাবি করলেন ফড়ণবীসের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে দাউদ ইব্রাহিমের অন্যতম ঘনিষ্ঠ সঙ্গী রিয়াজ ভাটি(Riyaz Bhati)-র।
গত ২ অক্টোবর মুম্বইয়ের প্রমোদতরীতে মাদক চক্রের হদিশ এবং শাহরুখ খানের ছেলে আরিয়ান খানের গ্রেফতারির পর থেকেই সরব হয়েছেন এনসিপি নেতা নবাব মালিক। টুইটারে একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ এনেছেন তিনি। তাঁর আক্রমণ থেকে রক্ষা পাননি এনসিবির মুম্বই শাখার জ়োনাল অফিসার সমীর ওয়াংখেড়েও। শাহরুখ পুত্রকে মাদককাণ্ডে গ্রেফতার করে রাতারাতি দেশের কাছে “হিরো” হয়ে ওঠা অফিসারের বিরুদ্ধেই ঘুষ ও তোলাবাজির অভিযোগ এনেছেন তিনি।
সম্প্রতিই নবাব মালিক অভিযোগ তুলেছিলেন, রাজ্যে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফড়ণবীসের ইশারাতেই মাদক চক্র চলে। বিজেপির সঙ্গে এনসিবিরও যোগসাজশ রয়েছে। সে সময়ই পাল্টা জবাবে দেবেন্দ্র বলেছিলেন, “দিওয়ালির আগে নবাব তো খালি ফুলঝুড়ি ফাটালেন। দিওয়ালির পর আমি বোমা ফাটাব। নবাব মালিক আমার উপর শুধু অভিযোগ এনেছেন। আমি নবাবের সঙ্গে অপরাধ জগতের যোগাযোগ কতটা সুদৃঢ় তা প্রমাণ-সহ আপনাদের জানাব।”
পরে তিনি দাবি করেন যে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে নবাব মালিকের। ১৯৯৩ সালে মুম্বই বিস্ফোরণের সঙ্গে যাঁর নাম জুড়েছিল, তাঁর থেকে জমি কিনেছিলেন নবাব মালিক। যে প্রাইভেট লিমিটেডের নামে ওই জমি, তা নবাব মালিকের পরিবারের সঙ্গে যুক্ত। নবাব মালিক নিজেও ওই কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে মন্ত্রী হওয়ার পর ইস্তফা দেন। ওই জমি আন্ডার ওয়ার্ল্ডের লোকের কাছ থেকে কেনা হয়েছিল ৩০ লক্ষ টাকায়। এই অভিযোগ ওঠার পরই গতকাল নবাব মালিক বলেছিলেন, “দেবেন্দ্র ফড়নবিশের প্রসঙ্গে আমি আগামিকাল হাইড্রোজেন বোমা ফাটাব। আমি দেবেন্দ্র ফড়ণবীসের আন্ডারওয়ার্ল্ড লিঙ্ক ফাঁস করব।”
এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে নবাব মালিক বলেন, “রিয়াজ ভাটি কে জানেন? ভুয়ো পাসপোর্ট নিয়ে ধরা পড়েছিল, দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে তাঁর সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। মাত্র দুইদিনের মধ্যই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। রিয়াজকেই দেবেন্দ্র ফড়ণবীসের সঙ্গে এবং বিজেপির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছে।”
তিনি আরও যোগ করে বলেন, “আমরা প্রধানমন্ত্রীকে এই বিষয়ে জড়াতে চাই না, কিন্তু রিয়াজ ভাটি প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে গিয়েছে এবং তার সঙ্গে ছবিও তুলেছে। অন্যান্য দেশের আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডনরা থানেতে দেবেন্দ্র ফড়ণবীসের নিয়োগ করা পুলিশ অফিসারদের ফোন করেছিল, পরে বিষয়টি নিয়ে রফা করা হয়।”
দেবেন্দ্র ফড়ণবীস মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীনও একাধিক দুর্নীতি ও আন্ডারওয়ার্ল্ডের মাফিয়াদের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে দাবি করেন নবাব মালিক। তিনি বলেন, “ফড়নবীস যখন ক্ষমতায় ছিলেন, নাগপুরের কুখ্যাত দুষ্কৃতী মুন্না যাদবকে ঠিকে শ্রমিক সংগঠনের চ্য়ারম্যান পদে নিয়োগ করা হয়েছিল। হায়দার আজ়িম নামক এক ব্যক্তি, যে বাংলাদেশীদের অনুপ্রবেশ করতে সাহায্য করে, তাঁকে মৌলানা আজাদ ফিন্যান্স কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ করেছিলেন ফড়ণবীস।”
২০১৬ সালে নোটবন্দির সময়েও দেবেন্দ্র ফড়ণবীস ভুয়ো নোটের চক্রকে সুরক্ষা দিয়েছিলেন, এই কাজে তাঁকে সাহায্য করেছিল সমীর ওয়াংখেড়ে, এই অভিযোগও এনেছেন এনসিপি নেতা। তাঁর দাবি, ২০১৬ সালে যখন নোটবন্দি ঘোষণা করা হয়েছিল, তখন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রচুর নকল টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। এক বছর পরও দেবেন্দ্র ফড়ণবীসের দৌলতে সেই টাকা রমরমিয়ে চলছিল মহারাষ্ট্রে। ২০১৭ সালের ৮ অক্টোবর মুম্বইয়ের বিকেসি থেকে ডিআরআই ১৪.৫৬ কোটি টাকার নকল নোট বাজেয়াপ্ত করেছিল। কিন্তু সেই মামলাটিকেও ধামাচাপা দিয়ে দেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।
ওই নকল নোটগুলি পাকিস্তান থেকে আসত বলেই দাবি নবাব মালিকের। ঘটনায় যাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাদেরও দ্রুত জামিন দিয়ে দেওয়া হত। গোটা মামলার তদন্ত এনআইএ-র হাতেও তুলে দেওয়া হয়নি। সেই সময় দেখানো হয়েছিল যে জাল নোট চক্রে অভিযুক্ত ব্যক্তি কংগ্রেসের সঙ্গে জড়িত ছিল বলে দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু ওই ব্যক্তি আসলে হাজি আরাফত শেখের ভাই ছিল, যাকে দেবেন্দ্র ফড়ণবীসই সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান বানিয়েছিল।
আরও পড়ুন: NSA Meeting: ভারতের সভাপতিত্বে আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে নিরাপত্তা বৈঠকে ৮ দেশ