মুম্বই: মাদককাণ্ডের তদন্তে (Mumbai Cruise Drug Case) এনসিবি(NCB) বনাম বলিউডের লড়াই ধীরে ধীরে রূপান্তরিত হয়েছে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে। সম্মুখ সমরে নেমেছেন এনসিপি নেতা নবাব মালিক (Nawab Malik) ও বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফড়ণবীস (Devendra Fadnavis)। এই লড়াইয়েই এবার ঢুকে পড়লেন নবাব মালিকের জামাতা সমীর খান(Sameer Khan)-ও। মানসিক অত্যাচার ও আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ এনে মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবীসকে আইনি নোটিস (Legal Notice) পাঠালেন তিনি। ক্ষতিপূরণ হিসাবে ৫ কোটি টাকার দাবিও জানিয়েছেন নবাব মালিকের জামাতা।
সম্প্রতি একটি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবীস মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী নবাব মালিকের পাশাপাশি তাঁর জামাতা সমীর খান সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছিলেন, তাতে পরিবারের মানসক হেনস্থা, সম্মান হানির পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতিও হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসেই মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী নবাব মালিকের জামাতার নাম জড়িয়েছিল মাদককাণ্ডে। প্রায় ২০০ কেজি মাদক পাচারের সঙ্গে যুক্ত এক ব্যক্তির সঙ্গে সমীর খানের যোগাযোগ ও ২০ হাজার টাকার লেনদেনের প্রেক্ষিতেই এনসিবি সমন জারি করেছিল সমীর খানের বিরুদ্ধে। একটানা জেরার পর তাঁকে গ্রেফতার করে এনসিবি। তবে সেপ্টেম্বর মাসেই তাঁকে জামিন দেয় আদালত। সেই সময় নবাব মালিক দাবি করেছিলেন, এনসিবি যে জিনিসকে মাদক বলে দাবি করছে, তা আসলে ভেষজ তামাক।
নবাব মালিক ও তাঁর মেয়ে নিলোফার মালিক খানের টুইটারে শেয়ার করা ওই আইনি নোটিস অনুযায়ী, মামলা চলা সত্ত্বেও দেবেন্দ্র ফড়ণবীস সরাসরি সমীর খানকেই মাদককাণ্ডে অভিযুক্ত বলে উল্লেখ করেছেন। দেবেন্দ্র ফড়ণবীসের দাবির সঙ্গে এনসিবির দাখিল করা চার্জশিটের কোনও মিল নেই বলেই দাবি করেছেন তারা।
মানহানি নিয়ে ওই আইনি নোটিসে বলা হয়েছে, “২০২১ সালের ১৪ জানুয়ারি এনসিবির দাখিল করা পঞ্চনামায় স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে যে বাড়ির তল্লাশি চালানো হয়েছিল কিন্তু কোনও মাদক বা সন্দেহজনক বস্তু উদ্ধার হয়নি। কিন্তু আপনি যে অভিযোগ এনেছেন, তা সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।”
আইনি নোটিস পাঠানোর প্রসঙ্গে নবাব মালিক বলেন, “আমার মেয়ে-জামাই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফড়ণবীসকে আইনি নোটিস পাঠিয়েছে। তিনি অভিযোগ করেছিলেন যে আমাদের বাড়ি থেকে মাদক উদ্ধার করা হয়েছিল। উনি যদি ক্ষমা না চান, তবে আমরা মানহানির মামলা দায়ের করব।”
মুম্বইয়ের প্রমোদতরী থেকে মাদক উদ্ধার ও শাহরুখ পুত্র আরিয়ান খানের গ্রেফতারি নিয়ে ইতিমধ্যেই বাকযুদ্ধে জড়িয়ে রয়েছেন নবাব মালিক ও দেবেন্দ্র ফড়মবীস। একে অপরের বিরুদ্ধে নানা বিস্ফোরক অভিযোগ এনেছেন। সম্প্রতিই নবাব মালিক অভিযোগ তুলেছিলেন, রাজ্যে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফড়ণবীসের ইশারাতেই মাদক চক্র চলে। বিজেপির সঙ্গে এনসিবিরও যোগসাজশ রয়েছে।
পাল্টা অভিযোগে দেবেন্দ্র ফড়ণবীস দাবি করেন, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে নবাব মালিকের। ১৯৯৩ সালে মুম্বই বিস্ফোরণের সঙ্গে যাঁর নাম জুড়েছিল, তাঁর থেকে জমি কিনেছিলেন নবাব মালিক। যে প্রাইভেট লিমিটেডের নামে ওই জমি, তা নবাব মালিকের পরিবারের সঙ্গে যুক্ত। নবাব মালিক নিজেও ওই কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে মন্ত্রী হওয়ার পর ইস্তফা দেন।
গতকালই সাংবাদিক বৈঠক করে ফের মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করেন নবাব মালিক। তিনি দাবি করেন, দাউদের এক সঙ্গীর সঙ্গে ঘনিষ্ট যোগাযোগ রয়েছে দেবেন্দ্র ফড়ণবীসের। ২০১৬ সালে নোটবন্দির সময়েও দেবেন্দ্র ফড়ণবীস ভুয়ো নোটের চক্রকে সুরক্ষা দিয়েছিলেন, এই কাজে তাঁকে সাহায্য করেছিল সমীর ওয়াংখেড়ে, এই অভিযোগও এনেছেন এনসিপি নেতা। তাঁর দাবি, ২০১৬ সালে যখন নোটবন্দি ঘোষণা করা হয়েছিল, তখন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রচুর নকল টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। এক বছর পরও দেবেন্দ্র ফড়ণবীসের দৌলতে সেই টাকা রমরমিয়ে চলছিল মহারাষ্ট্রে।