অফিস থেকে বেরলেই কোনও ফোন বা ইমেইলের জবাব নয়, লোকসভায় পেশ বিল, আইনে পরিণত হবে?
Right to Disconnect :শ্রম মন্ত্রকের তরফে সম্প্রতিই চারটি নতুন শ্রম কোড চালু করা হয়েছে যেখানে কর্মীদের কর্মক্ষেত্রে অধিকার, ওভারটাইমের জন্য অতিরিক্ত টাকা, নির্দিষ্ট কাজের সময়, গ্রাজুয়িটির সুবিধার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে অনেক কর্মক্ষেত্রেই এই নিয়ম চালু করা সম্ভব নয়।

নয়া দিল্লি: অফিসের কাজ অফিসেই শেষ। অফিস থেকে বেরলেই আর অফিস সংক্রান্ত কোনও ফোন বা ইমেইল করা যাবে না। কর্মীরাও এই ফোন ধরতে বা ইমেইলের জবাব দিতে বাধ্য নয়। এমনই আইন চেয়ে লোকসভায় বিল পেশ করলেন এনসিপি (শরদ পওয়ার) সাংসদ সুপ্রিয়া সুলে (Supriya Sule)। সত্যিই কি এই বিল আইনে পরিণত করা সম্ভব?
চলতি সপ্তাহের শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর এনসিপির সাংসদ সুপ্রিয়া সুলে লোকসভায় রাইট টু ডিসকানেক্ট বিল ২০২৫ (Right to Disconnect Bill, 2025) পেশ করেন। এই বিলে কর্মীদের একটি কল্যাণমূলক কমিটি বা প্রতিষ্ঠান গঠনের কথা বলা হয়েছে। এই প্রস্তাবিত বিলে প্রত্য়েক কর্মীকে অফিস শেষ হয়ে যাওয়ার পর বা ছুটিতে থাকাকালীন কাজ সংক্রান্ত ফোন কল বা ইমেইল থেকে দূরে থাকার অধিকারের কথা বলা হয়েছে। কর্মীরা অফিসের বাইরে কোনও ফোন বা ইমেইলের জবাব দিতে অস্বীকারও করতে পারবেন। এর জন্য তার বিরুদ্ধে অফিস কোনও পদক্ষেপ বা ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন নিতে পারবে না।
এই বিলে আরও বলা হয়েছে যে একটি কমিটি গঠন করা হবে যেখানে অফিস শেষ হওয়ার পর কাজ সংক্রান্ত কোনও ইমার্জেন্সি হলে, তা কীভাবে সামাল দেওয়া হবে, সেই সংক্রান্ত যাবতীয় শর্তাবলী তৈরি করা হবে। কর্মী ও অফিস যে সময়ে মিলিতভাবে সম্মত হবে, একমাত্র সেই নির্দিষ্ট সময়েই অফিস থেকে কর্মীকে ফোন, ভিডিয়ো কল, মেসেজ, ইমেইল বা অন্য কোনও মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারবেন।
এই বিল আনার প্রধান কারণ হিসাবে এনসিপি সাংসদ জানিয়েছেন যে দেশে ক্রমাগত কর্ম সংক্রান্ত মানসিক চাপে কর্মীদের মৃত্য়ু বা আত্মহত্যার ঘটনা বাড়ছে। হার্ভার্ড ও স্ট্যানফোর্ডের একাধিক সমীক্ষাতেও উঠে এসেছে যে অফিস শেষ হয়ে যাওয়ার পরও ক্রমাগত ইমেইল বা মেসেজ দেখতে গিয়ে কর্মীদের ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স নষ্ট হচ্ছে। এর ফলে মানসিক স্বাস্থ্যে যেমন প্রভাব পড়ছে, তেমনই ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্পর্কেও প্রভাব পড়ছে।
শ্রম মন্ত্রকের তরফে সম্প্রতিই চারটি নতুন শ্রম কোড চালু করা হয়েছে যেখানে কর্মীদের কর্মক্ষেত্রে অধিকার, ওভারটাইমের জন্য অতিরিক্ত টাকা, নির্দিষ্ট কাজের সময়, গ্রাজুয়িটির সুবিধার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে অনেক কর্মক্ষেত্রেই এই নিয়ম চালু করা সম্ভব নয়।
প্রসঙ্গত, অস্ট্রেলিয়াতে ইতিমধ্যেই গত বছর রাইট টু ডিসকানেক্ট আইন চালু হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় কর্মীদের অফিস শেষ হওয়ার পর ফোন বা মেসেজ না ধরার অধিকার দেওয়া হয়েছে। ভারতেও একাধিক সমীক্ষায় এই অধিকারের সপক্ষেই জনগণ মতামত দিয়েছেন। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদর মধ্যে ৭৯ শতাংশই এই নিয়মের সমর্থন করেছেন। ৮৮ শতাংশ কর্মীই জানিয়েছিলেন যে তাদের অফিস শেষ হয়ে যাওয়ারর পরও সর্বক্ষণ অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হচ্ছে। ৮৫ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা অসুস্থ হলে বা ছুটিতে থাকলেও কাজ সংক্রান্ত মেসেজ আসে। আবার ৭৯ শতাংশ এই শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন যে এই ফোন বা ইমেইলের জবাব না দিলে, তাদের কেরিয়ারে প্রভাব পড়বে, প্রোমোশন আটকে যাবে।
ভারতে কত ঘণ্টা কাজ করা উচিত, তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই চর্চা চলছে। ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তি থেকে শুরু করে এল অ্যান্ড টি-র সিইও এসএন সুব্রহ্মণ্যম সপ্তাহে ৭০ থেকে ৯০ ঘণ্টা কাজ করার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন, যা নিয়ে তুমুল বিতর্ক হয়। এবার সংসদে পেশ হল এই আইন।
উল্লেখ্য, এই বিল সংসদে প্রাইভেট বিল আকারে পেশ করা হয়েছে। যেকোনও প্রয়োজনীয় বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে সরকারি বিধানের দরকার হলে, লোকসভা ও রাজ্যসভার সাংসদরা বিল পেশ করতে পারেন। প্রস্তাবিত আইন নিয়ে সরকার জবাব দেওয়ার পর প্রাইভেট মেম্বার বিল প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
