Kerala High Court: মহিলার নগ্ন দেহকে সবসময় যৌনতা বা অশ্লীলতা হিসাবে বিবেচনা করা উচিত নয়: কেরালা হাইকোর্ট

Kerala High Court: কোনও মহিলার নগ্ন দেহকে সবসময় যৌনতা বা অশ্লীলতা হিসাবে বিবেচনা করা উচিত নয়। তাৎপর্যপূর্ণ পর্যবেক্ষণ কেরালা হাইকোর্টের। তাঁর অনাবৃত ঊর্ধ্বাঙ্গে সন্তানদের ছবি আঁকার একটি ভিডিয়ো তৈরি করেছিলেন কেরলের এক মহিলা। এই ভিডিয়োর প্রেক্ষিতে তাঁর বিরুদ্ধে অশ্লীলতার অভিযোগ উঠেছিল।

Kerala High Court: মহিলার নগ্ন দেহকে সবসময় যৌনতা বা অশ্লীলতা হিসাবে বিবেচনা করা উচিত নয়: কেরালা হাইকোর্ট
প্রতীকী ছবি
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 05, 2023 | 8:19 PM

তিরুবন্তপুরম: কোনও মহিলার নগ্ন দেহকে সবসময় যৌনতা বা অশ্লীলতা হিসাবে বিবেচনা করা উচিত নয়। তাৎপর্যপূর্ণ পর্যবেক্ষণ কেরালা হাইকোর্টের। তাঁর অনাবৃত ঊর্ধ্বাঙ্গে সন্তানদের ছবি আঁকার একটি ভিডিয়ো তৈরি করেছিলেন কেরলের এক মহিলা। এই ভিডিয়োর প্রেক্ষিতে তাঁর বিরুদ্ধে অশ্লীলতার দায়ে যৌন অপরাধ আইন, পকসো আইন, তথ্য প্রযুক্তি আইন এবং শিশুদের সুরক্ষা আইনের একাধিক ধারায় মামলা করা হয়েছিল। সেই মামলার রায়দানের সময়ই এই পর্যবেক্ষণ করেছে কেরল হাইকোর্ট। শুনানি চলাকালীন অভিযুক্ত মহিলা যুক্তি দিয়েছিলেন, পুরুষতান্ত্রিক ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করতে এবং নারীদেহকে অতিরিক্ত যৌনতার সঙ্গে সম্পর্কিত করার বিরুদ্ধে বার্তা দিতেই তিনি ওই ভিডিয়োটি তৈরি করেছিলেন। তাঁর এই যুক্তি বিবেচনা করে বিচারপতি কওসের এড়াপ্পাগথ জানিয়েছেন, ভিডিয়োটিকে অশ্লীল বলা যায় না। অভিযুক্ত মহিলাকে যাবতীয় অভিযোগের হাত থেকে মুক্তি দিয়েছে আদালত।

বিচারপতি বলেন, “দেহ নিয়ে পুরুষদের স্বতন্ত্রতার নিয়ে কদাচিৎ প্রশ্ন ওঠে। কিন্তু, পুরুষতান্ত্রিক কাঠামোয় কোনও মহিলার দেহ এবং তাঁর নিজ দেহের উপর স্বায়ত্তশাসন নিয়ে ক্রমাগত প্রশ্ন ওঠে। তাঁদের দেহ ও জীবন সম্পর্কে নিজের পছন্দ প্রকাশ করার জন্য নির্মমতা, বৈষম্য, বিচ্ছিন্নতার শিকার হন মহিলারা।” আদালত স্পষ্ট জানিয়েছে, এই মামলায় ক্ষেত্রে একজন মা যাতে তাঁর সন্তানদের তাঁর নগ্ন দেহকে স্বাভাবিক হিসাবে দেখার ধারণা তৈরি হয়, তার জন্য তাঁর দেহকে ক্যানভাস হিসাবে ব্যবহার করতে দিয়েছেন। এই ক্ষেত্রে কোনও ভুল নেই। বিচারপতি বলেন, “একজন মায়ের শরীরের উপরের অংশে তাঁর নিজের সন্তানরা যদি ছবি আঁকে তাহলে তাকে যৌন ক্রিয়া হিসাবে চিহ্নিত করা যায় না। এটাও বলা যায় না যে, যৌন তৃপ্তির উদ্দেশ্যে বা যৌন অভিপ্রায়ে এটা করা হয়েছে। এই নির্দোষ শৈল্পিক অভিব্যক্তিটিকে ‘বাস্তব বা ছদ্ম যৌন কার্যকলাপে শিশুর ব্যবহার’ বলা যায় না। শিশুদের পর্নোগ্রাফি তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয়েছে, তা প্রমাণ করার মতো এই মামলায় কিছুই নেই। ভিডিয়োটিতে যৌনতার কোনও ইঙ্গিত নেই।”

বিচারপতি কওসের এড়াপ্পাগথ পর্যবেক্ষণ করেছেন, কোনও মহিলার শরীরের উপরিভাগ নগ্ন থাকলেই তাকে যৌনক্রিয়া বলা উচিত নয়। একইভাবে, কোনও মহিলার নগ্ন দেহের উপর ছবি আঁকাকেও অশ্লীল, অশালীন বা যৌনতাপূর্ণ বলা যায় না। বর্তমান মামলার বিষয়ে আদালত জানিয়েছে, এটি অভিযুক্ত মহিলার রাজনৈতিক এবং শৈল্পিক অভিব্যক্তি। সুপ্রিম কোর্টের অতীতের এক রায়ের উল্লেখ করে বিচারপতি জানান, নগ্নতাকে কখনই যৌনতার সঙ্গে যুক্ত করা উচিত নয়। তিনি বলেন, “নগ্নতাকে অশ্লীল বা অনৈতিক হিসাবে দেখা ভুল। এই রাজ্যে এক নির্দিষ্ট নিম্নবর্ণের মহিলারা এক সময় তাঁদের স্তন ঢেকে রাখার অধিকারের জন্য লড়াই করেছিলেন। সারাদেশে প্রাচীন মন্দিরগুলিতে অর্ধ-নগ্ন ম্যুরাল, মূর্তি রয়েছে। সেই সব নগ্ন ভাস্কর্য ও চিত্রকর্মকে শিল্প হিসেবে বিবেচনা করা হয়, পবিত্র বলে মনে করা হয়।”

পুরুষ ও মহিলাদের নগ্নতা সম্পর্কে সমাজ যে দ্বৈত অবস্থান নেয়, তারও সমালোচনা করেছে আদালত। বিচারপতি জানান, অভিযুক্ত মহিলাও এই দ্বৈত অবস্থানকে ফাঁস করবেন বলেই এই ভিডিয়ো বানিয়েছিলেন। বিচারপতি এড়াপ্পাগথ বলেন, কেরলের ত্রিশুরে ‘পুলিকালি’ উৎসবের সময় পুরুষদের গায়ে ছবি আঁকার ঐতিহ্য রয়েছে। মন্দিরে যখন বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান চলে, সেই সময় বাইরে পুরুষ শিল্পীদের শরীরে ছবি আঁকা হয়। পুরুষরা সিক্স-প্যাক অ্যাবস, বাইসেপস ইত্যাদি প্রদর্শন করেন, আমরা প্রায়ই পুরুষদের বিনা শার্টে ঘুরে বেড়াতে দেখি। কিন্তু, এই সব কর্মকাণ্ডকে কখনই অশ্লীল বা অশোভন বলে বিবেচনা করা হয় না। কোনও মহিলার শরীরকে একইভাবে দেখা হয় না। কিছু কিছু লোক তো মহিলাদের নগ্ন শরীরকে শুধুই আকাঙ্ক্ষার বস্তু হিসাবে বিবেচনা করেন। সমাজ মহিলাদের নগ্নতার উপর বিধিনিষেধ জারি করেছে, কারণ তারা মনে করে মহিলাদের শরীর শুধুই কামোত্তেজনার বিষয়।”