নয়া দিল্লি: দুর্নীতি নিয়ে বরাবরই বিরোধীদের আক্রমণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বারংবার বলেছেন, দুর্নীতির জন্য বলি হতে হত সাধারণ মানুষকে। আগে বড় কুমিররা (দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি) ছাড় পেয়ে যেত। এখন এই কুমিররা ধরা পড়ছে। তাই এখন প্রশ্ন উঠছে কেন এদের ধরা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, ‘খান মার্কেট গ্যাং’ রয়েছে যারা নিজেদের লোকজনদের বাঁচাতে এই দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করছে।
সংবাদ সংস্থা আইএএনএস (IANS) কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “২০১৯ সালের আগে আমাকে যখন প্রশ্ন করা হত এই দুর্নীতিতে যুক্ত বড় বড় কুমিরদের কেন ধরা হয় না, তখন আমি বলতাম এটা স্বাধীন সংস্থার (এজেন্সি) কাজ। তারা নিজেদের কাজ করবে। যাই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হত, তা তথ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতেই করা হত। অফিসাররা কঠোর পরিশ্রম ও তদন্ত করে সত্যি তথ্য বের করে আনতেন। এখন যখন পদক্ষেপ করা হচ্ছে তখন ওরা প্রশ্ন তুলছে।”
প্রধানমন্ত্রী সাফ জানান যে, গ্রেফতারিগুলি নিরপেক্ষ তদন্তকারী সংস্থার কাজ, আদালত সিদ্ধান্ত নেয় কাউকে জেলে রাখা হবে কি না। দেশের কাছে চিন্তার বিষয় হল এই দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষদের এখন উচ্চ-আসনে বসানো হচ্ছে। আগে আমাদের দেশে যখন কেউ দুর্নীতি করত তখন সবাই তার থেকে শতহস্ত দূরে থাকত। আজ তাদেরই কাঁধে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন যে, দেশের মানুষ দুর্নীতি নিয়ে তিতিবরক্ত হয়ে গিয়েছে। দুর্নীতি দেশকে ছাড়পোকার মতো ভিতর থেকে ফাঁকা করে দিচ্ছে। তিনি বলেন, “যখন ২০১৪ সালে আমি দুর্নীতি নিয়ে কথা বলতাম। তখন সকলে বলতেন এই বিষয়ে কিছু করা প্রয়োজন। আমরা ক্ষমতায় আসার পরই প্রথম সিস্টেমে কী কী ভুল রয়েছে তা খুঁজে বের করি। উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করি। ৩৮ লক্ষ কোটি টাকা সরাসরি মানুষের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়েছি আমরা। যদি রাজীব গান্ধীর সময়ের কথা বলি, তখন বলা হত এক টাকা খরচ হলে তার মধ্যে মাত্র পনেরো পয়সা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছত। সেই হিসাব অনুযায়ী এই ৩৮ লক্ষ কোটি টাকাও উধাও হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রযুক্তির ব্যবহার করে এক টাকাও এদিক ওদিক যেতে দিইনি।
প্রধানমন্ত্রী এও বলেন, “দেশের গণতন্ত্র শক্তিশালী। নির্বাচনে সুষ্ঠ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। তাই বাইরের কারোর কথায় দেশের ভোটাররা প্রভাবিত হবে না। কিছু জনের জন্য পাকিস্তান থেকে সমর্থন আসছে। এর তদন্ত করা প্রয়োজন। আমি মনে করি না এই বিষয়ে আমার আর কোনও মন্তব্য করা উচিত।”
প্রধানমন্ত্রী আত্মনির্ভর ভারত প্রসঙ্গে বলেন, “যাঁরা দেশের বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছে তাঁরাই আমাদের দেশের অনেক ক্ষতি করেছে। আগে যখন বিদেশ থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানি হত তখন ওরা বলত দেশ বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। এখন যখন দেশেই সব কিছু তৈরি হচ্ছে তখন এরা বলছে এটা বিশ্বায়নের যুগ। ভারতের মতো দেশে যেখানে মানব ক্ষমতা ও দক্ষতা রয়েছে সেখানে আমি গম রফতানি করে রুটি আমদানি করতে পারি না। আমার প্রধান লক্ষ্যই হল দেশের যুব সমাজ যেন সুযোগ পায়। এবং তাদের কর্মসংস্থান হয়। দেশের সম্পদ যেন দেশের বাইরে না যায়। কৃষকদের যাতে উন্নতি হয়। আমি ‘নেশন ফার্স্ট’ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই চলি।”
জি২০ প্রসঙ্গে প্রধানমমন্ত্রী বলেন, “ভারত বৈচিত্র্য ভরপুর। প্রতিটি রাজ্য-জেলার নিজস্ব পরিচিতি, ক্ষমতা রয়েছে। তাই আমি একটা মিশন তৈরি করেছিলাম। জি-২০ হাত ধরে আমরা বিশ্বে ভারতের পরিচয় তৈরি করেছি। গোটা বিশ্ব থেকে এক লক্ষের বেশি মানুষ ভারতে এসেছিলেন। তাঁরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছেন এবং নিজেদের ভারতের সঙ্গে যুক্ত করেছেন।”
প্রধানমন্ত্রী করোনাকালের প্রসঙ্গও টেনেছেন। তিনি বলেন, “যখন আমি ডিজিটাল ইন্ডিয়া চালু করেছিলাম প্রাথমিকভাবে অভিযোগ উঠেছিল নির্দিষ্ট কিছু পরিষেবা প্রদানকারীদের সুবিধার জন্য এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটা একবিংশ শতাব্দী। যদি আজ ইউপিআই না থাকত আমরা কীভাবে করোনার বিরুদ্ধে লড়তাম? আমরা মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে ১১ কোটি কৃষককে টাকা পাঠাতে পারি। ইউপিআই এতটাই সহজ একটা ব্যবস্থা আজ মানুষ পকেটে টাকা না নিয়েই গোটা বিশ্ব ঘুরে আসতে পারে। আমি যখন সংসদে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করতাম তখন বড় বড় বিদ্যজনেরা হাসাহাসি করতেন। আমি পুরনো চিন্তাধারা অনুসরণ করি না। এখনকার যুব সমাজকে বুঝি। ওরা লাফ দিতে চায়। তাই আমাদের লঞ্চিং প্যাড তৈরির প্রয়োজন। আমি পরীক্ষা নিয়ে কথা বলি। লাখ পড়ুয়ার সঙ্গে কথা বলি যারা পরীক্ষায় বসছে। যদি সরকার যুব সমাজকে বুঝতে ব্যর্থ হয় তবে তাহলে দেশের ক্ষতি হবে।”