সুদেষ্ণা ঘোষাল: দেশে করোনার (COVID 19) তৃতীয় ঢেউ অনিবার্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন দ্বিতীয় ঢেউ শেষের ৭-৮ মাসের মধ্যে আছড়ে পড়তে পারে তৃতীয় ঢেউ। চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন এই তৃতীয় ঢেউয়ে বেশি সংক্রমিত হতে পারে শিশুরা। তবে রয়েছে বিপক্ষ দাবিও। নীতি আয়োগের সদস্য ভিকে পাল থেকে শুরু করে একাধিক বিশেষজ্ঞের দাবি, এমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি যেখান থেকে বলা যায় তৃতীয় ঢেউয়ে শিশুদের ওপরই বেশি প্রভাব পড়বে। এই জল্পনার মাঝেই সমীক্ষায় আশার আলো দেখাচ্ছে এইমস ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
দুই সংস্থার যৌথ সেরো সার্ভের দাবি, তৃতীয় ঢেউয়ে শিশুদের করোনা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ অধিক অংশের শিশুরাই সেরো পজেটিভ। অর্থাৎ তাদের দেহে করোনাভাইরাসের অ্য়ান্টিবডি দেখা গিয়েছে। সমীক্ষার দাবি দিল্লির ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে শিশুদের সেরোপ্রিভেলেন্স হার ৭৪.৭ শতাংশ। দ্বিতীয় ঢেউয়ের আগেও ১৮ বছরের কম বয়সী ৭৩.৯ শতাংশ শিশুর মধ্যেই অ্যান্টিবডি দেখা দিয়েছিল।
এর আগে এইমস হাসপাতালের ডিরেক্টর ডঃ রণদীপ গুলেরিয়া জানিয়েছিলেন, ভারত বা আন্তর্জাতিক স্তরেও এমন কোনও তথ্য নেই যেখানে বলা হয়েছে যে শিশুরাই সবথেকে বেশি প্রভাবিত হবে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে একটি যুগ্ম সাংবাদিক বৈঠকে ডঃ গুলেরিয়া জানিয়েছিলেন, করোনা সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ নিয়ে ভুল তথ্যের জেরে সাধারণ মানুষের মনে ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হচ্ছে। এমন কোনও তথ্যই নেই, তা দেশেরই হোক বা আন্তর্জাতিক স্তরে, যেখানে বলা হয়েছে যে শিশুরা তৃতীয় ঢেউয়ে সবথেকে বেশি প্রভাবিত হবে।
প্রসঙ্গত, করোনার তৃতীয় ঢেউকে মাথায় রেখে ইতিমধ্যেই শিশুদের জন্য নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে কেন্দ্র। ৫৮ পাতার নির্দেশিকায় কেন্দ্র জানিয়েছে শিশুদের তুলনায় প্রাপ্তবয়স্কদের দেহে করোনার প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। তাই খুব চিন্তার কারণ না থাকলেও শিশুদের বেশ কিছু নিয়ম মানার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় আয়ূষ মন্ত্রক।
১. প্রাপ্তবয়স্কদের মতোই শিশুদের মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় আয়ূষ মন্ত্রক। ৫ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের জন্য মাস্ক বাধ্যতামূলক করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। ২ থেকে ৫ বছরের জন্য মাস্ক বাধ্যতামূলক না করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় আয়ূষ মন্ত্রক। বাবা-মায়ের তত্ত্বাবধানে এ বিষয়ে ২ থেকে ৫ বছরের শিশুদের মাস্ক পরা বা না পরার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্র।
২.শিশুদের মেডিক্যাল মাস্ক না পরানোর কথা বলছে কেন্দ্র। তার পরিবর্তে ত্রি-স্তরীয় মাস্ক পরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে নির্দেশিকায়।
৩. শিশুদের যতটা সম্ভব বাড়িতে থাকতে ও আত্মীয় পরিজনদের সঙ্গে ভিডিয়ো কলে বা ফোন কলে কথা বলিয়ে মন ভাল রাখার পরামর্শ দিচ্ছে কেন্দ্র।
৪.দাদু-দিদা গুরুতর অসুস্থ হলে শিশুদের সঙ্গে তাঁদের সংযোগ এড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছে কেন্দ্র।
৫. ৫ দিনের বেশি জ্বর থাকলে, শিশুদের মধ্যে অলসতা দেখা দিলে, শ্বাস-প্রশ্বাসে কোনও সমস্যা দেখা দিলে বা অক্সিজেনের হার ৯৫ শতাংশের নীচে নেমে গেলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসের পরামর্শ নেওয়ার কথা বলেছে কেন্দ্র।
৬. শিশুদের হালকা গরম জল পান করার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্র। তেল মালিশ করা, প্রণায়ামের পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্র।
আরও পড়ুন: লক্ষদ্বীপের ‘অভিযুক্ত’ পরিচালককে রক্ষাকবচ হাইকোর্টের