নয়া দিল্লি : গত বছর থেকে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরকে (Prashant Kishore) দল টানতে দফায় দফায় বৈঠক করতে দেখা যায় কংগ্রেস নেতৃত্বদের। তবে বাংলায় বিধানসভা ভোটে ঘাসফুল শিবিরে বড় জয় এনে দেওয়ার পর পিকে-কংগ্রেস (PK-Congress Meeting) দূরত্ব বেশ খানিকটা বেড়ে যায়। কংগ্রেসে যোগদান নিয়ে গত বছর আলোচনা শুরু হলেও তা মাঝপথে থমকে যায়। তবে নতুন বছর পড়তে না পড়তেই ফের প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে সখ্য বাড়তে শুরু করে গান্ধীদের। এমনকী হাত শিবিরে তাঁর যোগদান নিয়েও বাড়তে থাকে জল্পনা। এমতাবস্থায় এবার ফের গান্ধীদের সঙ্গে দেখা করলেন এই পোড় খাওয়া ভোটকুশলী। সূত্রের খবর, শনিবার কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধী(Sonia Gandhi), রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi) ও কে সি বেণুগোপালের সঙ্গে দেখা করেন পিকে। এরপরই এই নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে দিল্লির রাজনৈতিক মহলে।
এদিকে গত মাসেও রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর (Priyanka Gandhi) সঙ্গে দেখাও করেন পিকে। তারপরই কংগ্রেসে তাঁর যোগদান নিয়ে জল্পনা আরও তীব্রতর হয়। যদিও তার আগেও দলের পরামর্শদাতা হিসাবে পিকে-কে নিতে একাধিক বৈঠক করে হাত শিবির। কিন্তু কোনোভাবেই ঐক্যমত্যে পৌঁছতে পারেনি দু’পক্ষ। সদ্য সমাপ্ত ৫ রাজ্যের নির্বাচনে কার্যত ভরাডুবি হয়েছে কংগ্রেসের। প্রশ্ন উঠেছে গান্ধী পরিবারের নেতৃত্ব নিয়েও। ক্ষোভ বেড়েছে দলের নিচুতলাতেও। এমতাবস্থায় দেশের রাজনৈতিক ময়দানে দলের পুনরুত্থান যে বিশেষভাবে প্রয়োজন তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে কংগ্রেসের হাইকমান্ড। আর সেই কারণেই পিকে-কে চাইছে দলের একাংশ। তবে পিকে কংগ্রেসের প্রস্তাবে রাজি হবেন কিনা তা নিয়েই জল্পনা চলছে দীর্ঘদিন ধরে।
এমতাবস্থায় এবার সরাসরি সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে পিকের বৈঠকের জল কোনদিকে গড়ায় এখন সেটাই দেখার। কিন্তু এর মধ্যেও রয়ে গিয়েছে একটা বড় সমস্যা। গত বছর প্রশান্তের সঙ্গে কথাবার্তা ভেস্তে যাওয়ার পর তাঁরই প্রাক্তন সহযোগী সুনীল কানুগোলুকে পরামর্শদাতা হিসাবে নিয়োগ করেছে হাত শিবির। সুনীল এখন কর্ণাটক এবং তেলেঙ্গানায় নির্বাচন ও দলের বিস্তার নিয়ে কংগ্রেসের হয়ে কাজ করছেন। এই পরিস্থিতিতে এবার পিকে যদি কাজ শুরু করেন তাহলে সুনীলের কী হবে তা নিয়ে শুরু হয়েছে চর্চা। যদিও সুনীলের দাবি প্রশান্তের সঙ্গে কাজ করতে আপাতভাবে তাঁর কোনও সমস্যাই নেই।
যদিও অসমর্থিত সূত্রের খবর, গুজরাট ও হিমাচলের ভোট নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে কাজ করার প্রস্তাব এসেছিল পিকের কাছে। এমনকী পাঁচ রাজ্যে কংগ্রেসের ভরাডুবির পর নিজেই এই বিষয়ে আগ্রহও দেখিয়েছিলেন তিনি। পরে তা ভেস্তে যায়। অন্য একটি অংশের মতে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের পক্ষে ভোটের স্ট্র্যাটেজি ঠিক করতেই মাঠে নামতে পারেন পিকে। যদিও এমতাবস্থায় সোনিয়া-পিকে বৈঠকের পর নতুন সমীকরণ কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেদিকে নজর রয়েছে রাজনৈতিক মহলের। তবে পিকে কংগ্রেসে যোগ দিলেও দলে তাঁর ভূমিকা শুধুই পরামর্শদাতার হবে নাকি শীর্ষস্থানীয় কোনও পদে জায়গা পাবেন তা নিয়ে রয়েছে নানা জল্পনা। তবে কংগ্রেস সূত্রে খবর, দলের তরফে তাঁকে শুধুমাত্র গুজরাট নির্বাচনের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। তবে অন্য একটি সূত্র বলছে, পিকে যেহেতু একাধিক রাজনৈতিক দলের ভোটকুশলীর কাজ করেছেন তাই তাই তাঁর উপর দলের রাশ পুরোপুরি ছাড়তে ভরসা পাচ্ছে না কংগ্রেস হাইকমান্ড। তাই ‘বিশ্বস্ত সঙ্গী’ হিসাবে এখনই পিকের কাঁধে কোনও গুরু দায়িত্ব দিতে নারাজ শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ। অন্যদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পিকে মনে করছেন কংগ্রেস বর্তমানে কার্যত আইসিইউতে রয়েছে। তাই শতব্দী প্রাচীন দলের স্বাস্থ্য়োদ্ধারের জন্য গোটা সংগঠনেরই আগাপাশতলা বদলে ফেলতে চাইছেন তিনি। সরাসরি বদল চাইছেন শীর্ষ নেতৃত্বের। এখন আদৌও পিকে-র রাস্তায় কংগ্রেস হাঁটে কিনা সেদিকে নজর রয়েছে রাজনৈতিক মহলের।