Porsche Crash: পুনে পোরশে কাণ্ড: বিচারের বাণী আজও নীরবে নিভৃতে কাঁদে?
Porsche Crash: টাকা দিয়ে কি সব কেনা যায়? কেনা যায় ন্যায়বিচারও? প্রশ্ন তুলে দিল পুনেতে পোরশে গাড়িতে দুই তথ্য প্রয়ুক্তি কর্মীর চাপা পড়ার ঘটনা। গত কয়েক দশকে বেশ কয়েকবার উঠেছে 'ভিআইপি সংস্কৃতি' দূর করার কথা। কিন্তু, ভিআইপি সংস্কৃতি যে কীভাবে ভারতীয় প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে রয়েছে, তা এই ঘটনা প্রতিদিন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।

পুণে: টাকা দিয়ে কি সব কেনা যায়? কেনা যায় ন্যায়বিচারও? প্রশ্ন তুলে দিল পুণেতে পোরশে গাড়িতে দুই তথ্য প্রয়ুক্তি কর্মীর চাপা পড়ার ঘটনা। দুর্ঘটনা বলা হবে না হত্যা, এখনও তা ঠিক করা যাচ্ছে না। এক পার্টি থেকে মোটরবাইকে চড়ে বাড়ি ফিরছিলেন অনীশ অবস্তি এবং অশ্বিনী কোস্তা। মদ্যপ অবস্থায়, বহুমূল্য পোরশে গাড়ি চালিয়ে এসে তাদের পিছন থেকে ধাক্কা মারে এক বড়লোক বাবার ‘নাবালক’ ছেলে। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তরুণ দম্পতি। স্থানীয় মানুষ ওই নাবালককে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিল। ভেবেছিল ন্যায়বিচার মিলবে। কিন্তু, মাত্র ১৪ ঘণ্টার মধ্যেই জামিন পেয়ে যায় অভিযুক্ত কিশোর। গত কয়েক দশকে বেশ কয়েকবার উঠেছে ‘ভিআইপি সংস্কৃতি’ দূর করার কথা। কিন্তু, ভিআইপি সংস্কৃতি যে কীভাবে ভারতীয় প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে রয়েছে, তা এই ঘটনা প্রতিদিন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।
অভিযুক্ত কিশোরের বাবার নাম বিশাল আগরওয়াল। ব্রহ্মা রিয়েল এস্টেট নামে, এক রিয়েল এস্টেট ডেভেলপিং সংস্থার মালিক তিনি। কতটা বড়লোক তিনি? যে গাড়িটি নিয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাঁর ছেলে, সেই পোরশে তাইকান গাড়িটি গত মার্চ মাসে বিদেশ থেকে আমদানী করিয়েছিলেন বিশাল। ছেলে এখনও অপ্রাপ্তবয়স্ক হলেও, ২.৪৪ কোটি টাকা দামের সেই গাড়িটি তাকেই উপহার দিয়েছিলেন। পছন্দের রেজিস্ট্রেশন নম্বর পেতে ৪৫,০০০ টাকা খরচ করেছিলেন, অথচ, গাড়িটির রেজিস্ট্রেশনের জন্য মাত্র ১৭৫৮ টাকা দিয়ে উঠতে পারেননি তিনি। গত মার্চ থেকে বিনা নম্বর প্লেটেই গাড়িটি চালাচ্ছিল ওই কিশোর। আর কিশোর হওয়াতে, লাইসেন্সও ছিল না তার কাছে।
এই বিপুল অর্থের জোরেই দারুণ প্রভাবশালীও বিশাল আগরওয়াল। আর সেই কারণেই, এই ঘটনার একেবারে শুরু থেকে ওই কিশোরকে বাঁচানোর চেষ্টা করে চলেছে পুলিশ, এমন অভিযোগ উঠছে। পুলিশের এই প্রয়াসের একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখা গিয়েছে, পোরশে গাড়িটি চালানর আগে, পুনের কোজি অ্যান্ড ব্ল্যাক ম্যারিয়ট বারে বসে মদ্যপান করছিল ছেলেটি। সিবিএসই পরীক্ষার ফল বেরিয়েছে, তার উদযাপন চলছিল। মাত্র ৯০ মিনিট বা দেড় ঘণ্টায় ৪৮,০০০ টাকা খরচ করেছিল সে। অথচ, পুলিশ তার রক্তের যে নমুনা পরীক্ষায় পাঠিয়েছিল, তার ফল এসেছে নেগেটিভ। অর্থাৎ, সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী ওই কিশোরের রক্তে অ্যালকোহল ছিল না। কীভাবে সম্ভব হল এই ঘটনা? অভিযোগ, এর পিছনেও আছে পুলিশের হাত।
বিরোধী দলগুলি থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে, ঘটনার দিন রাতে ওই কিশোরকে হেফাজতে নেওয়ার পর তাকে পেট পুরে খাইয়েছিল পুলিশ। পিৎজা, বার্গার, বিরিয়ানি খাওয়ানো হয়েছিল। এই জামাই আদরের লক্ষ্য ছিল, তার রক্তে অ্যালকোহলের মাত্রা কমানো। এমনকি, এই একই উদ্দেশ্যে নাকি, ঘটনার বেশ কয়েক ঘণ্টা পরে তার রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেছিল পুলিশ। এমন অভিযোগও উঠেছে। আর তাতেই কিশোরের রক্তে অ্যালকোহল পাওয়া যায়নি। এমনকি, ওই ব্যবসায়ীর ছেলেকে বাঁচাতে মাঝরাতেই থানায় হাজির হয়ে গিয়েছিলেন অজিত পওয়ারের এনসিপি-র সদস্য এক বিধায়ক।
১৭ বছর ৮ মাস বয়স হলেও, জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের সামনে পুলিশ তাকে নাবালক বলেই পেশ করেছিল। জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডও সামান্য কিছু শর্তের ভিত্তিতে জামিন দিয়ে দিয়েছিল। কীরকম শর্ত? নাবালকের ঠাকুর্দা নিশ্চয়তা দেন, তাকে বদসঙ্গে পড়তে দেবেন না। নাবালক পড়াশোনা নিয়েই থাকবে। নাবালককে দুর্ঘটনার বিষয়ে একটি ৩০০ শব্দের রচনা লিখতে বলা হয়। সেই সঙ্গে তার মদের নেশা ছাড়াতে কাউন্সেলিংয়ের সুপারিশ করা হয়।
জনগণের চাপে পড়ে এখন অবশ্য প্রশাসন এই ভিআইপি সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। বুধবার জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের সামনে শুনানি ছিল। শুনানির আগে, পুনে পুলিশ অভিযুক্ত কিশোরের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি কঠোর ধারা যুক্ত করেছে। মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো, দ্রুত বা বিপজ্জনকভাবে গাড়ি চালানো, মোটর গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে বয়সসীমা লঙ্ঘনের মতো ধারা যোগ করা হয়েছে। কিশোরের বাবা, বিশাল আগরওয়ালের বিরুদ্ধেও জুভেনাইল জাস্টিস আইনের ৭৫ এবং ৭৭ নম্বর ধারা এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির প্রাসঙ্গিক ধারায় মামলা দায়ের করেছে। ৭৫ নম্বর ধারাটি শিশুর প্রতি ইচ্ছাকৃত অবহেলা এবং ৭৭ নম্বর ধারাটি শিশুকে মাদকদ্রব্য সরবরাহের বিষয়ে। বিশাল আগরওয়ালকে এদিন দুদিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।
