দেহরাদুন: চারদিনের আঁধার কাটিয়ে অবশেষে দেবভূমির আকাশে দেখা মিলল সূর্যের। তবে যা ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার, তা হয়েই গিয়েছে, এমনটাই মত স্থানীয় বাসিন্দাদের। উত্তরাখণ্ডে (Uttarakhand) টানা তিনদিনেরও বেশি সময় ধরে বৃষ্টিতে ৭ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানানো হয়েছে রাজ্য প্রশাসনের তরফে।
বৃহস্পতিবারই আকাশপথে বিপর্যস্ত এলাকাগুলি পরিদর্শন করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। হেলিকপ্টার থেকে পরিদর্শনের পর জলিগ্রান্ট বিমানবন্দরে ফিরে একটি প্রশাসনিক বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সেখানে উদ্ধারকার্য কেমন চলছে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কতটা, সে সম্পর্কে প্রশাসনিক শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন তিনি। উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি (Pushkar Singh Dhami) সাংবাদিকদের জানান, তিনদিনের বৃষ্টিতেই ৭ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশী হতে পারত, যদি প্রশাসন অতি তৎপরতার সঙ্গে উদ্ধার ও ত্রাণকার্য শুরু না করত।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও বলেন, “আগে থেকেই ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি বেশ অনেকটা এড়ানো সম্ভব হয়েছে। চারধোম যাত্রাও আগে থেকেই স্থগিত করে দেওয়ায় বহু মানুষকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও দ্রুত তল্লাশি ও উদ্ধারকার্য শুরু করা হয়েছে। বায়ুসেনার হেলিকপ্টারও উদ্ধারকার্যে বিশেষ সাহায্য করেছে।”
আবহাওয়ার দিকে নজর রাখলে বর্তমানে উত্তরাখণ্ডে বৃষ্টি থেমে গেলেও জাঁকিয়ে ঠাণ্ডা পড়তে শুরু করেছে। একাধিক জায়গায় তুষারপাতও চলছে। এরই মাঝে জারি রাখা হয়েছে উদ্ধারকার্য। কুমায়ুন অঞ্চল, যেখানে সর্বাধিক পরিমাণ ট্রেকাররা যান ট্রেকিংয়ের জন্য, সেখানে একাধিক উদ্ধারকারী দল পৌঁছেছে এবং পার্বত্য পথগুলি ধরে তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে।
ভারী বৃষ্টির জেরে অধিকাংশ এলাকাতেই বিদ্য়ুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। সেই পরিষেবাও পুনরায় চালু করার চেষ্টা চলছে। গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও সেতুগুলিও দ্রুত মেরামত করে জনজীবন স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের পাশাপাশি এনডিআরএফ, সেনাবাহিনী ও বায়ুসেনাও উদ্ধারকার্যে সাহায্য করছে। স্থানীয় প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, আটকে পড়া মানুষদের সুরক্ষিতভাবে ফিরিয়ে আনাই আপাতত প্রধান লক্ষ্য।
এক আধিকারিক জানান, পাঁচ পর্যটক সহ আরও একজনের মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ায় বর্তমানে বিপর্যয়ে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫-তে। এরমধ্য়ে সর্বাধিক মৃত্যু হয়েছে নৈনিতালে, সেখানে ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও চারজনকে উদ্ধার করা হয়েছে গতকাল। বাঘেশ্বরে এখনও প্রায় ৬৫ জন পর্যটক আটকে রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। উদ্ধারকারী দল সেখানে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।
পর্যটকে ভরা নৈনিতালে প্রায় দুদিন বাদে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট পরিষেবা চালু হয়েছে আজ। তবে একাধিক জায়গাতেই এখনও নেটওয়ার্কের সমস্যা রয়েছে। প্রত্যন্ত গ্রাম গুলিতেও এখনও বিদ্যুৎ পরিষেবা চালু করা সম্ভব হয়নি। নৈনি ঝিল উপচে পড়ায় পার্শ্ববর্তী রাস্তাগুলি এখনও জলমগ্ন। তবে রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর, এনডিআরএফ, সেনাবাহিনীর মিলিত প্রচেষ্টায় রাস্তা অনেকটাই সাফ করা গিয়েছে। বৃষ্টি থামতেই পর্যটকদেরও বাড়ি ফেরার জন্য ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে ভিড় জমাতে দেখা যায়।
বুধবার সকাল থেকেই ধীরে ধীরে আকাশ পরিস্কার হতে থাকায় চারধাম যাত্রাও আংশিকভাবে পুনরায় শুরু করা হয়েছে। সকাল থেকেই বাস স্ট্যান্ডগুলিতে পর্যটকদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। তবে প্রশাসন সূত্রে খবর মিলেছে, উচ্চ পার্বত্য এলাকাগুলিতে আবহাওয়া এখনও প্রতিকূল। বৃষ্টি থামলেও কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে সেখানে। অতিরিক্ত তুষারপাত হলে ফের রাস্তা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।