মুম্বই: তাঁর শেষ বয়সের সঙ্গী ছিলেন। বলা ভাল বন্ধু। শেষ কয়েকটা বছর রতন টাটার সঙ্গে সবসময় দেখা যেত শান্তনু নাইডুকে। একেবারেই অসম বয়সের দুই বন্ধু। কিন্তু, তাঁদের জুড়ে দিয়েছিল কুকুরের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসার মতো বেশ কিছু বিষয়, যা নিয়ে আগ্রহ ছিল দুজনেরই। হয়তো বা শান্তনুর মধ্যে নিজের ফেলে আসা তরুণ বয়সের প্রাণোচ্ছলতাকে খুঁজে পেয়েছিলেন টাটা সাম্রাজ্যের অধিপতি। বুধবার (৯ অক্টোবর) রাতে, রতন টাটার প্রয়াণে থেমে গিয়েছে এই আশ্চর্য বন্ধুত্বের পথ চলা। বৃহস্পতিবার সকালে, তাঁর ‘পরামর্শদাতা এবং প্রিয় বন্ধু’র প্রয়াণে শোক প্রকাশ করলেন শান্তনু। প্রকাশ করলেন অশীতিপর বন্ধুর প্রতি তাঁর আবেগ। জানালেন রতন টাটা ছিলেন তাঁর জীবনে লাইটহাউস বা বাতিঘরের মতো। অসীম সমুদ্রে যেমন জাহাজদের পথের দিশা দেয় বাতিঘর, তাঁর জীবনে রতন টাটার ভূমিকা ছিল তেমনই। একই সঙ্গে জানিয়েছেন, দুঃখ দিয়েই এই ভালবাসার মূল্য চোকাতে হচ্ছে তাঁকে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এদিন রতন টাটার সঙ্গে তাঁর একটি ছবি পোস্ট করেছেন শান্তনু নাইডু। সঙ্গে লিখেছেন, “এই বন্ধুত্ব এখন আমার মধ্যে যে ছিদ্র তৈরি করল, আমি সারা জীবন তা ভরাট করার চেষ্টা করব। ভালবাসার মূল্য হল দুঃখ। বিদায়, আমার প্রিয় বাতিঘর।”
বছর ৩০-এর এই যুবক, টাটা ট্রাস্টের সর্বকনিষ্ঠ জেনারেল ম্যানেজার। শেষ কয়েক বছর রতন টাটার প্রায় সর্বক্ষণের সঙ্গী হয়ে উঠেছিলেন তিনি। অবিবাহিত রতন টাটার নিজের কোনও সন্তান ছিল না। শান্তনু নাইডুকে তিনি যেভাবে লালন-পালন করেছেন এবং পারিবারিক সদস্য করে তুলেছেন, তাতে বলা যায় তাঁকে পুত্রের চোখেই দেখতেন রতন টাটা। আর এই সম্পর্কের সূচনা হয়েছিল অদ্ভূতভাবে। পড়াশোনা শেষ করে, ২০১৪ সালে পুনেতে ‘টাটা এলক্সি’তে অটোমোবাইল ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন শান্তনু। টাটা এলক্সিতে কাজ করতে করতেই, দ্রুতগামী বাস-গাড়ির কারণে পথকুকুরদের মৃত্যুর সমাধানের জন্য উদ্যোগী হন তিনি।
রাতের অন্ধকারে পথকুকুরদের যাতে আরও ভালভাবে দেখা যায়, তার জন্য কুকুরদের তিনি বিশেষ কলার পরাতে চেয়েছিলেন। এমনকি রাস্তায় যদি আলো নাও থাকে, তাহলেও তাদের দেখা যাবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। কুকুরের প্রতি রতন টাটার ভালবাসার কথা কারও অজানা নয়। নিজের উদ্যোগের জন্য তাই রতন টাটার সমর্থন চেয়েছিলেন শান্তনু। এই বিষয়ে ‘মোটোপস’ নামে একটি সংস্থা তৈরির প্রস্তাব দিয়ে রতন টাটাকে চিঠি দিয়েছিলেন তিনি। রতন টাটা শান্তনুর প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে, আলোচনা জন্য তাঁকে মুম্বইয়ে ডেকে পাঠান। আর এই প্রথম সাক্ষাত থেকেই শুরু হয়েছিল অসমবয়সী বন্ধুত্বের। শেষ পর্যন্ত, শান্তনু নাইডুকে তাঁর সহকারী এবং জেনারেল ম্যানেজার হিসাবে নিয়োগ করেছিলেন রতন টাটা।
শান্তনু নাইডু একবার মজা করে রতন টাটাকে, হ্যারি পটার সিরিজের ডাম্বলডোরের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। টাটার গভীর প্রজ্ঞা এবং তরুণদের সঙ্গে মেলামেশার প্রবণতার ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন তিনি। আর রতন টাটাও একইভাবে মজা করতেন শান্তনুকে নিয়ে। তিনি বলেছিলেন, “পরিষ্কার বুঝতে পারি, আমার অফিসের কাজ শান্তনুর পছন্দ নয়। তাই, ও কুকুরদের সন্ধান করে, ওদের সাহচর্য চায়।” মোটোপসের পর ২০২২ সালে, ‘গুডফেলোস’ নামে আরেকটি স্টার্টআপ চালু করেছেন। এই স্টার্টআপ সংস্থাটি প্রবীণ নাগরিকদের সাহচর্যের চাহিদা পূরণ করে। বলাই বাহুল্য, তাঁর এই উদ্যোগকেও সম্পূর্ণ সমর্থন করেছিলেন রতন টাটা।