নয়া দিল্লি : প্রয়াত সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি গিরিশ টি নানাবতী (Retd Justice Girish T Nanavati)। শনিবার গুজরাটের আহমেদাবাদে নিজ বাসভবনেই প্রয়াত হন তিনি। মৃত্যু কালে বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। বিচারপতি নানাবতী ১৯৮৪ সালের শিখ বিরোধী দাঙ্গা এবং ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার তদন্ত কমিশনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
প্রয়াত অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নানাবতীর ছোট ছেলে মৌলিক নানাবতী বর্তমানে গুজরাট হাইকোর্টের আইনজীবী। তিনি জানিয়েছেন, নানাবতী ফুসফুসের ফাইব্রোসিসে ভুগছিলেন এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। মৌলিক বলেছেন, “বয়স জনিত সমস্যা এবং অসুস্থতার কারণে তিনি দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন।”
২০০২ সালের দাঙ্গায় তার নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট, দুটি ভাগে জমা করা হয়েছিল। প্রথম ভাগটি জমা করা হয়েছিল ২০০৮ সালে। তাতে সবরমতি এক্সপ্রেসের অগ্নিকাণ্ডে ৫৯ জনের মৃত্যু সংক্রান্ত বিষয়ের উল্লেখ ছিল। উল্লেখ্য ওই ৫৯ জনের মধ্যে বেশিরভাগই অযোধ্যা থেকে ফিরে আসা করসেবক ছিলেন। দ্বিতীয় ভাগটি জমা দিয়েছিলেন ২০১৪ সালে। তাতে ওই ঘটনার পরে যে দাঙ্গা হয়েছিল সেই সংক্রান্ত বিষয়ের উল্লেখ ছিল। ২০১৯ সালে এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনা হয়েছিল। উল্লেখ্য, বিচারপতি নানাবতী তৎকালীন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তার মন্ত্রী পরিষদকে ক্লিন চিট দিয়েছিলেন।
প্রয়াত অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নানাবতীকে “সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারপতিদের মধ্যে একজন” এবং “আইনের দ্রুত উপলব্ধি” সহ “মহামানব” হিসাবে অভিহিত করে, গুজরাটের অ্যাডভোকেট জেনারেল কমল ত্রিবেদী বলেছেন, “তিনি ব্যক্তি হিসেবে অত্যন্ত ভাল ছিলেন। তিনি প্রত্যেকের জন্য ভাবতেন, বিশেষ করে আইনজীবীদের ভ্রাতৃত্বের বন্ধনের জন্য ভীষণভাবে ভাবতেন। তিনি খুব সোজাসাপ্টা ধরনের মানুষ ছিলেন।”
গুজরাট হাইকোর্টের বর্ষীয়ান আইনজীবী ইয়াতিন ওজা বলেন, “নানাবতী কখনও পক্ষপাতিত্ব করতেন না”। তিনি আরও বলেন, “এমন কিছুই ছিল না যা তাকে প্রভাবিত করতে পারে, এবং এমনকী সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতিতেও তিনি তার ভারসাম্য বজায় রেখেছিলেন।” নানাবতীর জীবনের কঠিনতম পর্বগুলির মধ্যে একটি ছিল গুজরাট দাঙ্গার তদন্ত। ২০০২ সালে তিনি তদন্ত কমিশনের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন।
নানাবতীর স্মৃতিচারণায় আইনজীবী ত্রিবেদী আরও বলেন, “তিনি তদন্তে একটি দুর্দান্ত অবদান রেখেছেন। নানাবতী কমিশন খুব দীর্ঘ সময় ধরে চলেছিল। কারণ, ২০০১ সালের পরে, গুজরাট অনেক টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছিল। কী ঠিক, কী ভুল, তা অনেকেরই জানা ছিল না… তার রিপোর্টটি বিচারবিভাগের কার্যকারিতার উপর আলোকপাত করেছিল। পুলিশ বিভাগ, রাজ্য সরকারের পদ্ধতির পাশাপাশি জনগণের দায়িত্বের কথা তুলে ধরেছিল।”