
নয়াদিল্লি: ভারতের সঙ্গে যখন আমেরিকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ফাটল যখন ক্রমশ চওড়া হচ্ছে, ঠিক সেই সময়ই ভারত সফরে আসছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বিদেশমন্ত্রক জানিয়েছে, ৪-৫ ডিসেম্বর ভারত সফর করবেন পুতিন। বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে। পুতিনের ভারত সফর চলাকালীন-ই বাড়তি ‘এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম’ কেনার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। আলোচনা হতে পারে সুখোই ৩০ এমকেআই ফাইটার জেটের আধুনিকীকরণের বিষয়েও। যাকে ভারতীয় সেনা এখন ডাকে সুপার-সুখোই বলে।
তবে দুটি বিষয়ের কোনওটা নিয়েই যেন আনুষ্ঠানিক কোনও ঘোষণার অপেক্ষা কেউ না করেন, মনে করিয়ে দিয়েছেন প্রতিরক্ষা সচিব রাজেশ কুমার সিং। ভারতীয় বায়ুসেনা সবমিলিয়ে ২৫৯টি এরকম অত্যাধুনিক সুখোই কেনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। যার মধ্যে ক্যাবিনেট কমিটি ৮৪টি বিমান কেনার বিষয়ে চূড়ান্ত ছাত্রপত্র দেওয়া এখন সময়ের অপেক্ষা।
দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে প্রতিরক্ষা সচিব স্পষ্ট করেছেন, পুতিনের এই ভারত সফরের অন্যতম মূল লক্ষ্যই হল প্রতিরক্ষা খাতে ভারত ও রাশিয়ার বহু বছরের বন্ধুত্বকে ঝালিয়ে নেওয়া। দুই দেশ-ই একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত চুক্তিতে সই করতে পারে। তবে প্রকাশ্যে সে সব নিয়ে কোনও বড় ঘোষণা সম্ভবত মোদী সরকার করবে না। প্রতিরক্ষা সচিব বলেছেন, ‘অতিরিক্তি এস-৪০০ সিস্টেম কেনার বিষয়ে তো আলোচনা হবে। ডিফেন্স সিস্টেম সরবরাহে দেরি যাতে না হয়, বাড়তি ব্যাটারি মজুত- এই সব নিয়ে আলোচনা হবে। তবে এখনই কোনও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়তো হবে না। প্রতিশ্রুতি মাফিক এস-৪০০ ডিফেন্স সিস্টেমের ব্যাটারি ২০২৬-২৭ আর্থিক বছরের মধ্যে সম্পন্ন হয়ে যাবে বলে কেন্দ্রের আশা।
গুরুত্বপূর্ণ সুখোই ৩০-র আপগ্রেডের বিষয়টিও আলোচনার টেবিলে উঠবে। এমনিতেই নির্ধারিত সময়ের চেয়ে রুশ সরবরাহে খানিকটা দেরি হয়েছে। সেই কাজে গতি আনায় জোর দেবে ভারত। সুখোই-এর নয়া ভার্শনে তার রেডার উন্নত হচ্ছে। ধেয়ে আসা মিসাইলকে দূর থেকেই চিহ্নিত করার ক্ষমতাও বাড়ছে। থাকবে ফুল ডিজিটাল ককপিট, জুড়বে লং রেঞ্জ অস্ত্র এমকে-৩ মিসাইল, ব্রহ্মস, রুদ্রম ও রুশ আর-৩৭ এম মিসাইল। মিগ-২১-এর অবসর গ্রহণের পর থেকেই নয়া যুদ্ধবিমানের দাবিতে বারবার হয়েছেন বায়ুসেনা কর্তারা। বিশেষত, চিন ও পাকিস্তান যখন নিজেদের বায়ুশক্তিকে ক্রমশ বাড়াচ্ছে। তেজস-এম-কে ১ ও ভারতের নিজস্ব ফিফ্থ জেনারেশনের যুদ্ধবিমান আকাশে ওড়ার আগে রুশ সুখোই নিঃসন্দেহে ভারতীয় বায়ুসেনার বড় ভরসা। পুতিনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলেও এখনই তা নিয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না করার পিছনে ভারতের সূক্ষ কূনৈতিক কৌশল থাকলে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। আমেরিকার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতি হলেও সি-হক হেলিকপ্টার ও তেজসের ইঞ্জিনের জন্য সম্প্রতি যে ৯০০০ কোটি টাকার চুক্তি ভারত আমেরিকার সঙ্গে করেছে, তার আগে ট্রাম্পকে চটাতে চায় না ভারত।