
নয়া দিল্লি: এক বছর আগে বাংলাদেশে যা হয়েছিল, তা নিয়ে ক্ষমা চাইলেন সে দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)। তবে ওই ছাত্র গণ আন্দোলনে প্রাণহানির জন্য নিরাপত্তা বাহিনীকেই দুষলেন তিনি। একইসঙ্গে দাবি করলেন, জনতার উপরে তিনি গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন নিরাপত্তা বাহিনীকে, এ কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
দেশ ছাড়ার পর এই প্রথম সাক্ষাৎকার দিলেন শেখ হাসিনা। তিন আন্তর্জাতিক স্তরের সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন যে জুলাই আন্দোলন ছিল সহিংস বিদ্রোহ। এর জন্য তিনি ব্যক্তিগত কোনও দায় স্বীকার করেন না। হাসিনা বলেন, “একজন নেতা হিসেবে আমি অবশ্যই সামগ্রিক দায় স্বীকার করি, কিন্তু আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে যে আমি নিজে নিরাপত্তা বাহিনীকে গুলি চালাতে বলেছিলাম জনতার উপর, এটা ঠিক নয়।”
আদালতে যে অডিয়ো রেকর্ডিং পেশ করা হয়েছিল, যেখানে শেখ হাসিনাকে বিক্ষোভকারীদের উপরে গুলি চালানোর নির্দেশ দিতে শোনা গিয়েছে, সেই প্রশ্নের উত্তরে তিনি সাক্ষাৎকারে দাবি করেন যে এই রেকর্ডিংগুলোতে প্রসঙ্গের বাইরে থেকে কথা কেটে নেওয়া এবং বিকৃত করা হয়েছে।
তিনি জানান, প্রথমে তাঁর আওয়ামী লিগ সরকারই স্বাধীন তদন্ত শুরু করেছিল, কিন্তু পরে তা বন্ধ করে দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। গত বছরের গোটা আন্দোলন, তাঁর সরকারের পতন নিয়ে হাসিনা বলেন, “চেইন অব কমান্ডের মধ্যে কিছু ভুল অবশ্যই হয়েছিল। সামগ্রিকভাবে, সরকারি কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্ত ছিল পরিমিত, সৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, এবং যতটা সম্ভব প্রাণহানি কমানোর লক্ষ্যে। প্রাথমিক পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা, যাঁদের সুপ্রতিষ্ঠিত কার্যক্রমের নির্দেশিকা মেনে চলার কথা ছিল। নির্দেশিকায় বিশেষ পরিস্থিতিতে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া ছিল। এমনটা হতে পারে যে জটিল পরিস্থিতির মধ্যে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, যেগুলি ভুল ছিল।”
গণআন্দোলনে প্রায় ১৪০০ আন্দোলনকারী ছাত্র-যুব ও সাধারণ মানুষের মৃত্যুতে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে শেখ হাসিনা ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সরাসরি খুনের অভিযোগ আনা হয়েছে, ছাত্র আন্দোলনের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মূল পরিকল্পনাকারী হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আবেদন করা হয়েছে মৃত্য়ুদণ্ডের। তবে হাসিনার দাবি, ছাত্র আন্দোলনের সময়ে ১৪০০ মৃত্যুর সংখ্যা ‘অতিরঞ্জিত’। তাঁর কথায়, ‘এই সংখ্যা ট্রাইব্যুনালের প্রচারের কাজে লাগে, কিন্তু বাস্তবে তা বাড়িয়ে বলা।’
মুজিব কন্যা বলেন, “যদি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আমাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়, তাতে আমি অবাক হব না বা ভয়ও পাব না। এটি প্রহসনের বিচার, যার পিছনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা কাজ করছে। এই ট্রাইব্যুনাল একটি প্রহসনের আদালত, যেটি পরিচালনা করছে আমার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের নিয়ে গঠিত একটি অনির্বাচিত সরকার। এই প্রতিদ্বন্দ্বীদের অনেকেই আমাকে সরাতে যেকোনও কিছু করতে পারে।”
বাংলাদেশে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গিয়েছে। আগামী ১৩ নভেম্বর মামলায় রায়দান। মামলায় শুনানি চলাকালীন হাজিরা দেননি হাসিনা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই রায় ঘোষণা হবে। হয়তো কঠোর শাস্তি, এমনকী মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। তবে হাসিনার মতে, “সহিংস বিদ্রোহের মুখে দেশ রক্ষায় সাংবিধানিক কর্তব্য পালনের জন্য গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত কোনও নেতাকে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত নয়।”