নয়া দিল্লি: খারাপ আবহাওয়ার কারণেই আকাশপথে হুসেনিওয়ালাতে যেতে পারছিলেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi), তাই সড়কপথেই গন্তব্যে পৌঁছনোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কিন্তু মাঝপথেই বিক্ষোভের জেরে উড়ালপুলের উপর ২০ মিনিট আটকে থাকা এবং বাধ্য হয়ে ভাটিন্ডায় ফিরে আসাকে কেন্দ্র করে তুমুল শেরগোল শুরু হয়েছে দেশজুড়ে। প্রশ্ন উঠেছে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা (Security Breach) নিয়েও। এবার সেই বিতর্ক পৌঁছল সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court)। শুক্রবারই এই মামলার শুনানি হতে চলেছে।
এ দিন সকালেই প্রবীণ আইনজীবী মনিন্দর সিং সুপ্রিম কোর্টে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় গাফিলতির জন্য পঞ্জাব সরকারকে দায়ী করে একটি আর্জি দাখিল করেন। আর্জিতে তিনি বলেন “প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় বড়সড় খামতি ছিল পঞ্জাব সরকারের তরফে। ভবিষ্যতে যাতে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।”
এরপরই প্রধান বিচারপতি এনভি রমণ পিটিশনের একটি কপি পঞ্জাবেও দাখিল করার নির্দেশ দেন। সূত্রের খবর, আগামিকালই শীর্ষ আদালতে এই আর্জির শুনানি শুরু হতে পারে।
গতকালের ঘটনার পরই পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ সিং চন্নি নিজেদের ঘাড় থেকে দোষ ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, “নিরাপত্তায় কোনও খামতি ছিল না। বিক্ষোভকারীরা যেখানে বসেছিলেন তার অনেক আগেই প্রধানমন্ত্রীর কনভয় থামিয়ে দেওয়া হয়। কোনও ধরনের বিক্ষোভ বা অবরোধ তুলতে কমপক্ষে ১০ থেকে ২০ মিনিট সময় লাগে। প্রধানমন্ত্রীকে এই কথা জানানো হয়েছিল, এবং তাঁকে অন্য রাস্তা দিয়ে গন্তব্যে নিয়ে যাওয়ার কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।”
পরে বিজেপির একের পর এক আক্রমণের মুখে পড়ে তিনি বলেন, “সরকারের তরফে যথাযথ ব্যবস্থাই নেওয়া হয়েছিল। ৭০০০ আসনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল, কিন্তু মাত্র ৭০০ জন উপস্থিত ছিল সভা শুরু হওয়ার আগে। জনসমাগম না হওয়ার কারণেই নানা অজুহাত দিয়ে সভা বাতিল করা হয়েছে।”
তবে চরম সমালোচনার মুখে পড়ে পঞ্জাব সরকারের তরফে দুই সদস্যের একটি তদন্তকারী দল তৈরি করা হয়েছে। এই তদন্তকারী দলের সদস্য হলেন পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মেহবাত গিল এবং স্বরাষ্ট্র দফতরের মুখ্যসচিব অনুরাগ ভর্মা। আগামী তিনদিনের মধ্যে তারা সরকারের কাছে রিপোর্ট জমা দেবেন বলে জানা গিয়েছে।
বুধবার সকালে নির্দিষ্ট সময়ে ভাটিন্ডাতে অবতরণ করে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বিমান। সেখান থেকে হুসেনিওয়ালাতে জাতীয় শহীদ স্মৃতি সৌধে যাওয়ার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রীর। হেলিকপ্টার করে সেখানে যাওয়ার কথা থাকলেও খারাপ আবহাওয়ার কারণে দৃশ্যমানতা না থাকায় সড়ক পথেই হুসেনিওয়ালার উদ্দেশে রওনা দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দুই ঘণ্টার মধ্যেই গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়ার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রীর, কিন্তু গন্তব্যের ১০ কিলোমিটার আগেই, তাঁর কনভয়টি যখন একটি উড়ালপুলের উপর পৌঁছয়, তখন দেখা যায় যে সামনেই বেশ কিছু বিক্ষোভকারী পথ অবরোধ করেছে। বাধ্য হয়ে ওই উড়ালপুলের উপরেই ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে ঝুঁকি তৈরি হওয়ার কারণে সেখান থেকে তাঁকে ভাটিন্ডাতেই ফিরিয়ে আনা হয়।
বিমানবন্দরের আধিকারিকরা সংবাদ সংস্থা এএনআইকে জানিয়েছেন, ভাটিন্ডা বিমানবন্দরে ফেরার পর প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁদের বলেছেন, “ভাটিন্ডা বিমানবন্দর পর্যন্ত জীবিত ফিরতে পেরেছি, এর জন্য আপনাদের মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাবেন।”
ক্ষুদ্ধ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক:
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে একটি দল রাজ্য পুলিশ কত সংখ্যক কর্মী মোতায়েন, পিকেট লাইন, কোথায় কোন অফিসার নিযুক্ত ছিলেন, ব্য়ারিকেড ও অন্য়ান্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাগুলি নিয়েছিল, তা খতিয়ে দেখছে।