AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Supreme Court: ‘ভাষা কোনও ধর্ম নয়’, সরকারি সাইনবোর্ডে উর্দু লেখা নিয়ে বড় রায় সুপ্রিম কোর্টের

Supreme Court: মহারাষ্ট্রের আকোলা জেলার পাতুরের প্রাক্তন কাউন্সিলর বর্ষতাই সঞ্জয় বাগাড়ে। পৌর পরিষদের নেমপ্লেটে মারাঠির পাশাপাশি উর্দু ব্যবহার করায় তার আদালতে মামলা করেন তিনি। তাঁর দাবি পৌর পরিষদের কাজ কেবল মারাঠিতেই পরিচালিত হতে পারে এবং সাইনবোর্ডেও উর্দুর ব্যবহার নিষিদ্ধ।

Supreme Court: 'ভাষা কোনও ধর্ম নয়', সরকারি সাইনবোর্ডে উর্দু লেখা নিয়ে বড় রায় সুপ্রিম কোর্টের
| Updated on: Apr 16, 2025 | 1:29 PM
Share

ভাষা কোনও ধর্ম নয়। উর্দুকে মুসলিম ভাষা হিসেবে বিবেচনা করা বাস্তবতা এবং বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের ভাবনা থেকেও ‘করুণ বিচ্যুতি’ বলেও মন্তব্য করে সর্বোচ্চ আদালত। মহারাষ্ট্রের একটি পৌর পরিষদের নেমপ্লেটে উর্দু ব্যবহারের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল বাদীপক্ষ। সেই আবেদন খারিজ করার সময় এই মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া এবং বিচারপতি কে বিনোদ চন্দ্রনের বেঞ্চ।

মহারাষ্ট্রের আকোলা জেলার পাতুরের প্রাক্তন কাউন্সিলর বর্ষতাই সঞ্জয় বাগাড়ে। পৌর পরিষদের নেমপ্লেটে মারাঠির পাশাপাশি উর্দু ব্যবহার করায় তার আদালতে মামলা করেন তিনি। তাঁর দাবি পৌর পরিষদের কাজ কেবল মারাঠিতেই পরিচালিত হতে পারে এবং সাইনবোর্ডেও উর্দুর ব্যবহার নিষিদ্ধ।

এর আগে, প্রাক্তন কাউন্সিলরের আবেদন খারিজ করে দেয় নিম্ন আদালত এবং বম্বে হাইকোর্টেও। এরপরেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি।

সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে রায় জানানোর সময় সুপ্রিম কোর্ট বলে, ‘ভাষা ধর্ম নয়’। এমনকি ধর্মের প্রতিনিধিত্বও করে না। আদালত বলে, “ভাষা একটি সম্প্রদায়ের, একটি অঞ্চলের, মানুষের। কোনও ধর্মের নয়। ভাষাই সংস্কৃতি। ভাষা হল একটি সম্প্রদায় এবং তার জনগণের সভ্যতার অগ্রগতি পরিমাপের মাপকাঠি। উর্দুর ক্ষেত্রেও তাই, যা গঙ্গা-যমুনি তাহজীবের সর্বোত্তম নমুনা, অথবা হিন্দুস্তানি তাহজীব, যা উত্তর ও মধ্য ভারতের সমভূমির সম্মিলিত সাংস্কৃতিক নীতি। কিন্তু ভাষা কোনও কিছু শেখার হাতিয়ার হওয়ার আগেও এর আদি এবং প্রাথমিক উদ্দেশ্য সর্বদাই যোগাযোগের মাধ্যম।”

আদালত আরও বলে, “পৌর পরিষদ নেমপ্লেটে উর্দু রেখেছিল কারণ অনেক স্থানীয় বাসিন্দা ভাষাটি বুঝতেন। পৌর পরিষদ যা করতে চেয়েছিল তা হল কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন করা”

আদালত নিজের পর্যবেক্ষণে জানায়, উর্দুর বিরুদ্ধে এই কুসংস্কার থেকে ভুল ধারণা জন্ম নিয়েছে থেকে যে উর্দু ভারতের জন্য অপরিচিত। আদালতের আশঙ্কা এই মত ভুল। মারাঠি এবং হিন্দির মতো উর্দুও একটি ইন্দো-আর্য ভাষা। এই মাটিতে জন্ম হয়েছে উর্দু ভাষার। ভারতে উর্দু বিকশিত এবং সমৃদ্ধ হয়েছে কারণ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের মানুষদের ধারণা বিনিময় এবং নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতে চেয়েছিলেন। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, এটি আরও বেশি পরিশীলিত হয়েছে। অনেক প্রশংসিত কবির পছন্দের ভাষা হয়ে উঠেছে।

জনসাধারণের ব্যবহৃত ভাষা উর্দুতে পরিপূর্ণ। যদিও অনেকেই তা জানে না। আদালতের কথায় এটা বলা ভুল নয় যে উর্দু বা উর্দু শব্দ জন্ম নেওয়া শব্দ ব্যবহার না করে কেউ হিন্দিতে দৈনন্দিন কথোপকথন করতে পারে না। ‘হিন্দি’ শব্দটি নিজেই ফার্সি শব্দ ‘হিন্দবী’ থেকে এসেছে।

হিন্দি এবং উর্দুর মিশ্রণ এক সময়ে পিউরিটানদের বাধার সম্মুখীন হয়েছিল। পরে হিন্দি আরও সংস্কৃত এবং উর্দু আরও ফার্সি হয়ে ওঠে। আদলত বলে, “ঔপনিবেশিক শক্তিগুলি ধর্মের ভিত্তিতে দুটি ভাষাকে বিভক্ত করার জন্য বিভেদকে কাজে লাগিয়েছিল। হিন্দি এখন হিন্দুদের ভাষা এবং মুসলিমদের উর্দু হিসাবে বোঝানো হচ্ছে। যা বাস্তবতা থেকে, বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য থেকে এবং সর্বজনীন ভ্রাতৃত্বের ধারণা থেকে ‘করুণ বিচ্যুতি’।”

আদালত জানায় একটি পৌর পরিষদ স্থানীয় সম্প্রদায়কে পরিষেবা প্রদান করে। তাঁদের তাৎক্ষণিক দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ করে। যদি পৌর পরিষদের আওতাধীন এলাকার মধ্যে বসবাসকারী ব্যক্তি বা একদল লোক উর্দু সম্পর্কে পরিচিত হন, তাহলে সরকারি ভাষা অর্থাৎ মারাঠি ছাড়াও উর্দু ব্যবহার করা হলে কোনও আপত্তি থাকা উচিত নয়। অন্তত পৌর পরিষদের সাইনবোর্ডে। ভাষা হল ধারণা বিনিময়ের একটি মাধ্যম যা বিভিন্ন মতামত এবং বিশ্বাসের মানুষকে আরও কাছে নিয়ে আসে। এটি তাঁদের মধ্যে ভেদাভেদের কারণ হওয়া উচিত নয়।

আবেদনটি খারিজ করে আদালত বলে, “২০২২ সালের আইন বা আইনের কোনও বিধানের অধীনে উর্দু ব্যবহারের উপর কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই বলে হাইকোর্ট যে যুক্তি দিয়েছে তার সঙ্গে আমরা সম্পূর্ণ একমত। আমাদের মতে আপিলকারীর পুরো মামলাটি আইনের ভুল ধারণার উপর ভিত্তি করে। তাই আমরা বর্তমান মামলায় হস্তক্ষেপ করার কোনও কারণ দেখতে পাচ্ছি না।”