নয়া দিল্লি: দশকের পর দশক পার হলেও পণপ্রথা (Dowry System) থেকে মেলেনি মুক্তি। শুধুমাত্র কোনও সামগ্রী নয়, পণের ব্যাখ্যা আরও বিস্তারিত হওয়া উচিত, এমনটাই জানাল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। মঙ্গলবার শীর্ষ আদালতের তরফে বলা হয়, পণ শব্দটি শুধুমাত্র কোনও সামগ্রীতেই সীমাবদ্ধ নয়, মহিলাদের কাছে যেকোনও দাবিই, তা সম্পত্তিই হোক বা দামী কোনও প্রকারের কোনও বস্তু, কিংবা বাড়ি বানানোর জন্য টাকার দাবি, সবকিছুই পণের আওতায় আসে।
প্রধান বিচারপতি এনভি রমণ(NV Ramana), বিচারপতি এ এস বোপান্না (AS Bopanna) ও বিচারপতি হিমা কোহলি(Hima Kohli)-র বেঞ্চের তরফে বলা হয়, “পণ প্রথার মতো সামাজিক অশুভ শক্তিকে প্রচার করে, বিচার ব্যাবস্থা থেকে এমন সমস্ত বিষয় উৎখাত করতে হবে। পণ শব্দটির অর্থের ব্যপ্তি আরও অনেক বেশি। শ্বশুরবাড়ি থেকে কোনও মহিলার কাছে কোনও ধরনের দাবি জানানো হলেই, তা সে সম্পত্তি সংক্রান্তই হোক বা অন্য কোনও মূল্যবান সামগ্রীর দাবি, সবই পণের অন্তর্গত। যখন ভারতীয় দণ্ডবিধিরির ৩০৪-বি ধারায় কোনও মামলা লড়া হবে, তখন এই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে যে কোনও পুরনো বা অপরিবর্তনীয় অর্থ আইনের বিধানের আসল লক্ষ্য থেকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করতে পারে। সমাজ থেকে এই ঘৃণ্য ও অশুভ শক্তিকে মূল থেকে উৎখাত করার জ্য সঠিক পথে চলা প্রয়োজন।”
পণের চাপে বধূ আত্মহত্যার একটি মামলায় মধ্য প্রদেশ হাইকোর্টের (Madhya Pradesh High Court) রায়কেই মঙ্গলবার খারিজ করে এই পর্যবেক্ষণ রাখা হয় শীর্ষ আদালতের তরফে। মধ্য প্রদেশ হাইকোর্টের তরফে ওই মামলায় অভিযুক্ত স্বামী ও শ্বশুরকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল এই কারণ দর্শিয়ে যে, নির্যাতিতা নিজেই তাঁর পরিবারের সদস্যদের বাড়ি বানানোর জন্য আর্থিক সাহায্যের আবেদন জানিয়েছিল। তাই এটিকে পণ হিসাবে গ্রাহ্য করা যাবে না।
গতকাল সুপ্রিম কোর্টের তরফে বলা হয়, মৃতা নিজেই যে পরিবারের কাছে টাকার দাবি রেখেছিল, তা সঠিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা ও বোঝা প্রয়োজন, কারণ তার উপর নিয়মিত অত্যাচার করা হচ্ছিল পরিবারের কাছ থেকে টাকা আদায়ের জন্য। বাপের বাড়িতে আত্মহত্যা করার সময় নির্যাতিতা পাঁচ মাসের গর্ভবতী ছিল। সুতরাং পণের চাপের কারণে মৃত্য়ুর মামলায় ট্রায়াল কোর্টের নির্দেশে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের নির্দেশ সঠিক ছিল বলেই জানায় শীর্ষ আদালত।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকায় বলা হয়, “আমাদের মতে ট্রায়াল কোর্টে মামলার সঠিক ব্যাখ্যা করা হয়েছিল যে মামলাকারীদের মৃতার কাছ থেকে বাড়ি তৈরির জন্য টাকা আদায় পণের অধীনেই পড়ে। এটা কখনওই এড়িয়ে যাওয়া যায় না যে মামলাকারীরা ক্রমাগত মৃতার উপর নির্যাতন চালাচ্ছিল এবং তাঁকে বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য চাপ সৃষ্টি করছিল। তাদের ক্রমনাগত চাপের কারণেই মৃতা তাঁর নিজের পরিবারের কাছে বাড়ি বানানোর জন্য টাকা চেয়েছিল।”
শীর্ষ আদালতের তরফে আরও বলা হয়, জমা পড়া প্রমাণ পর্যালোচনা করে দেখা গিয়েছে যে মৃতাকে তাঁর মা ও মামার কাছ থেকে টাকা আদায় করার জন্য ক্রমাগত চাপ দেওয়া হয়েছিল। এতে কোনও জটিলতা নেই বরং নির্যাতিতা যে কঠিন পরিস্থিতিতে কতটা অসহায় বোধ করেছিল, তাই-ই প্রমাণিত হয়। আদালতের তরফে মৃতার স্বামী ও শ্বশুরকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪-বি ও ৪৯৮-এ ধারার অধীনে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
আরও প়ড়ুন: Omicron Surge in India: ‘৯০ গুণ বেশি হতে পারে আসল আক্রান্তের সংখ্যা’, চাঞ্চল্যকর দাবি ওমিক্রন ঘিরে!