নয়া দিল্লি: কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে কেন্দ্রের সঙ্গে আন্দোলনকারী কৃষকরা একাধিকবার আলোচনায় বসলেও মিলছে না কোনও সমাধানসূত্র। এবিষয়ে অসন্তুোষ প্রকাশ করল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)-ও। বুধবার কৃষি আইন সম্পর্কিত একটি আবেদনের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে (SA Bobde) বলেন, “পরিস্থিতির কোনও উন্নয়নই হয়নি।”
নভেম্বরের শেষভাগ থেকে দিল্লির সীমান্তে আন্দোলন করছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কৃষকরা। তাঁদের প্রধান দাবি, কেন্দ্রের নয়া তিন কৃষি আইন (Farm Laws) প্রত্যাহার করতে হবে। এই বিষয়ে নানা টানাপোড়েনের মাঝেও ইতিমধ্যেই সাতবার বৈঠকে বসেছে কেন্দ্র ও কৃষক পক্ষ। কিন্তু মেলেনি কোনও সমাধান সূত্র। বুধবার কৃষি আইনকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে দাখিল হওয়া একটি আর্জির শুনানিতে প্রধান বিচারপতি বোবদে বলেন, “আদালতের উদ্দেশ্য ছিল আন্দোলনকারী কৃষকদের সঙ্গে সরকারের আলোচনাকে উৎসাহিত করা। কিন্তু পরিস্থিতির কোনও উন্নয়নই হয়নি। আমরা বর্তমান পরিস্থিতি বুঝতে পারছি এবং ফের আলোচনায় বসার জন্য উৎসাহ দিচ্ছি।”
শীর্ষ আদালতের নির্দেশের জবাবে সরকার পক্ষের তরফে উপস্থিত অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল বলেন, “আমরা কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা করছি। আশা করছি, দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনায় শীঘ্রই কোনও সমাধানসূত্র পাওয়া যেতে পারে।” সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, “দুই পক্ষের মধ্যে একটি সুস্থ আলোচনা চলছে।”
আরও পড়ুন: ২৪ বছর আগের মাইকেল জ্যাকসনের কনসার্টের টাকা ফেরাবে শিবসেনা সরকার
৩০ ডিসেম্বর ষষ্ঠ দফার বৈঠকে কৃষকরা চারটি দাবি জানালেও কেবল বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল প্রত্যাহার ও খড়কুটো পোড়ানোর বিরুদ্ধে শাস্তি মকুব-এই দুটি বিষয়েই আলোচনা হয়। কৃষি আইন প্রত্যাহার ও ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের (Minimum Support Price) আইনি গ্যারান্টি নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। ৪ জানুয়ারি সে বিষয়ে বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নেয় দুই পক্ষ।
গত সোমবার সপ্তম দফা বৈঠকে বসলেও কৃষি আইন প্রত্যাহারে রাজি হয়নি সরকারপক্ষ। বৈঠক থেকে বেরিয়ে কিষাণ মজদুর সংঘর্ষ কমিটির প্রধান সরওয়ান সিং পান্ঢের বলেন, “বৈঠক চলাকালীন কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমার সাফ বলেছেন যে আইন প্রত্যাহার করা হবে না। চাইলে আমরা এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টেরও দারস্থ হতে পারি।”
গতমাসে সীমান্তে আন্দোলনরত কৃষকদের সরানোর দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে একটি আর্জি দাখিল হলে, তার শুনানিতে শীর্ষ আদালত জানায়, কৃষকরা তাদের আন্দোলন বজায় রাখতে পারে। আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার অধিকার সকলেরই রয়েছে। তবে এই আন্দোলনে যেন কোনও ক্ষয়ক্ষতি বা কারোর প্রাণহানি না হয়। পাশাপাশি আদালতের শুনানি শেষ না হওয়া অবধি কেন্দ্র যেন এই আইন কার্যকর করার উপর জোর না দেয়, তাও জানানো হয়।
শীর্ষ আদালত কৃষকদের উদ্দেশ্যে বলে, “আমরা আপনাদের সঙ্গে রয়েছি। আপনাদের প্রতিবাদ করার অধিকার রয়েছে। তবে এই আন্দোলনের একটা উদ্দেশ্য রয়েছে এবং তা নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন। আপনারা বছরের পর বছর ধরে কেবল সীমান্তে বসে থাকতে পারেন না।”
সুপ্রিম কোর্টের তরফে এর আগেও কেন্দ্র-কৃষক দুই পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করার জন্য একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তবে তা আর গঠন হয়নি। অন্যদিকে, কৃষকরা জানিয়েছে তাঁরা বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাটবেন এবার। আগামীকাল থেকেই দিল্লির চারটি সীমান্তে ট্রাক্টর মিছিল (Tractor March) শুরু হচ্ছে। এছাড়াও শপিং মল ও পেট্রোল পাম্পগুলিও একে একে বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে কৃষক সংগঠনগুলির তরফে।
আরও পড়ুন: ধর্মান্তকরণ বিরোধী আইনের বৈধতা যাচাই করবে সুপ্রিম কোর্ট, দুই রাজ্যে পাঠানো হল নোটিস