কলকাতা: নন্দীগ্রাম মামলার শুনানি বিচারপতি কৌশিক চন্দের এজলাসে হোক, তেমনটা চাননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যাঁর বিরুদ্ধে এই মামলা, অর্থাৎ শুভেন্দু অধিকারী আবার এ রাজ্যেই শুনানি হোক এমনটা চান না। এই মর্মে বুধবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে বিরোধী দলনেতা তথা নন্দীগ্রামের বিধায়ক। তিনি চান যেন নন্দীগ্রামে পুনর্গণনার মামলা অন্য কোনও রাজ্যে স্থানান্তরিত করা হোক। এই রাজ্যের আদালতে ‘বিচার প্রক্রিায় প্রভাবিত হতে পারে’ বলেই আশঙ্কা করছেন তিনি।
দীর্ঘ টালবাহানার পর বুধবার থেকে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শম্পা সরকারের এজলাসে নন্দীগ্রামের পুনর্গণনার মামলার শুনানি শুরু হয়েছে। মামলাটির শুনানি শুরু হলে বিচারপতি নির্দেশ দেন, এই মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত গণনা সংক্রান্ত সব নথি ও ভিডিয়ো ফুটেজ সংরক্ষিত রাখতে হবে। কমিশনের তরফ থেকে গণনাকেন্দ্রগুলিতে সিসিটিভি লাগানো হয়েছিল। তাই ওই সব কেন্দ্রের ফুটেজ যাতে সংরক্ষিত থাকে, সেই নির্দেশ দেওয়া হয়। আগামী ১২ অগস্ট এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে। কিন্তু তার আগেই মামলাটি আদৌ এ রাজ্যে থাকবে কি না সেই নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেল।
যদিও লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, নন্দীগ্রাম মামলাটি যে সময় হাইকোর্টের বিচারপতি কৌশিক চন্দের এজলাসে ছিল, তখন এই মামলা স্থানান্তরের আর্জি জানাননি শুভেন্দু। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবেদনে কৌশিক চন্দ মামলাটি ছেড়ে দেওয়ার পরই এই আবেদন জানালেন শুভেন্দু। আর এই আবেদন জানানোর ক্ষেত্রে বিচারপতি কৌশিক চন্দের রায়কেই হাতিয়ার করে তিনি স্পষ্টভাবে বোঝাতে চেয়েছেন, কলকাতা হাইকোর্টের বিচার প্রক্রিয়ার উপর তাঁর আস্থা নেই।
কিন্তু কিসের ভিত্তিতে এমনটা দাবি করলেন শুভেন্দু? ঘটনা হচ্ছে, মমতার আপত্তির ভিত্তিতে বিচারপতি কৌশিক চন্দ নন্দীগ্রামের মামলাটি ছেড়ে দিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু বেশ কিছু কড়া মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছিল তাঁকে। মূলত দু’টো বিষয় নিজের রায়ে উল্লেখ করেছিলেন কৌশিক চন্দ। প্রথমত, বিচার ব্যবস্থাকে বাঁচানোর নামে বেশ কিছু সুবিধাবাদী ব্যক্তি মামলায় ঢোকার চেষ্টা করছে। দ্বিতীয়ত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে গোপনীয়তা লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি। কোনও আইনজীবীকে বিচারপতি হিসেবে উন্নীত করার সময় যে মুখ্যমন্ত্রীর সম্মতি প্রয়োজন হয়, সেই বিষয়টি নিজের চিঠির মাধ্যমে প্রকাশ্য এনে ফেলেছিলেন মমতা। এর ফলে বাকি বিচারপতিরা প্রভাবিত হতে পারেন বলে উল্লেখ করেছিলেন কৌশিক চন্দ।
বিচারপতি কৌশিক চন্দের রায়কে হাতিয়ার করেই শুভেন্দুর বক্তব্য, যেখানে স্বয়ং বিচারপতি এই মন্তব্য করেছেন, এবং নন্দীগ্রামের মতো হাইভোল্টেজ আসন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এবং বিরোধী দলনেতা মামলা লড়ছেন, সেই অবস্থায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতিরা কীভাবে এই মামলার রায়দান নিরপেক্ষভাবে করবেন? এই দৃষ্টান্ত তুলে ধরেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন শুভেন্দু। সম্ভবত আগামী সপ্তাহেই মামলাটির শুনানি হতে পারে। প্রসঙ্গত, এর আগে নারদ মামলাও ভিনরাজ্যে সরানোর দাবি তুলে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল সিবিআই। কিন্তু সেবার শূন্য হাতেই কেন্দ্রীয় সংস্থাকে ফিরিয়েছিল আদালত। এ বার শুভেন্দুর ক্ষেত্রে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় নজর থাকবে সেদিকেই। আরও পড়ুন: নন্দীগ্রাম মামলায় নোটিস জারি হাইকোর্টের, নথি সংরক্ষণের নির্দেশ দিল আদালত