
ভারতীয় বায়ুসেনার উইং কমান্ডার নিকিতা পান্ডে। যুক্ত ছিলেন অপারেশন সিঁদুরে। স্থায়ী কমিশনের দাবিতে দারস্থ হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় সরকার এবং ভারতীয় বায়ুসেনাকে নির্দেশ দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে তাঁকে এখনই কাজ থেকে অব্যহতী দেওয়া যাবে না।
উইং কমান্ডারের দাবি স্বল্পমেয়াদি কমিশনের পরে তাঁর স্থায়ী কমিশনের আবেদন খারিজ হয়ে গিয়েছিল। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি এন কোটিশ্বর সিংহের বেঞ্চ এই রায় দিয়েছে। এই বিষয়ে বৈষম্যের অভিযোগ তুলেছিলেন উইং কমান্ডার নিকিতা। কেন্দ্রীয় সরকার এবং বায়সেনার কাছের এই বিষয়ে জবাব তলব করেছে সর্বোচ্চ আদালত।
আদালত জানায় বায়ুসেনা একটি পেশাদার বাহিনী, সেখানে নিকিতার মতো অফিসারদের চাকরির অনিশ্চয়তা ভাল কথা নয়।
বিচারপতি কান্ত বলেন, “আমাদের বিমান বাহিনী বিশ্বের সেরা সংস্থাগুলির মধ্যে একটি। অফিসাররা খুবই প্রশংসনীয়। তাঁরা সমন্বয়ের যে মান প্রদর্শন করেছেন, আমি মনে করি তা অতুলনীয়। তাই, আমরা সর্বদা তাঁদের স্যালুট জানাই। এঁরা জাতির জন্য বড় সম্পদ। এঁদের কারণেই আমরা রাতে ঘুমোতে পারি।”
আদালত জানিয়েছে, স্বল্পমেয়াদি কমিশনে নিয়োগের পর অফিসারদের জন্য একটি ‘কঠিন জীবন’ শুরু হয়। বিচারপতি কান্ত বলেন, “মনের মধ্যে এই ধরনের অনিশ্চয়তা সশস্ত্র বাহিনীর জন্য ভাল না-ও হতে পারে। আমরা এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নই, তবে সাধারণ মানুষ হিসাবে একটি পরামর্শ দিতে চাই। এ ক্ষেত্রে একটি ন্যূনতম মাপকাঠি থাকা উচিত, যেখানে কোনও আপস হবে না।”
এই দিন আদালতে নিকিতা পান্ডের হয়ে সওয়াল করেন আইনজীবি মেনকা গুরুস্বামী। তিনি জানান, তাঁর মক্কেল একজন অভিজ্ঞ ফ্লাইট কন্ট্রোলার। ‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং ‘অপারেশন বালাকোট’-এর সময় যে ইন্টিগ্রেটেড এয়ার কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সিস্টেমস মোতায়েন করা হয়েছিল, নিকিতা তাঁর অংশ ছিলেন। মেনকা আদালতকে আরও জানান যে, নিকিতা প্রায় ১৩ বছর ৫ মাস ধরে চাকরি করছেন। কিন্তু ২০১৯ সালে লাগু হওয়া নতুন অনুসারে তাঁকে বাধ্য করা হচ্ছে এক মাস পরে অব্যহতি নিতে। তাঁর স্থায়ী কমিশন আটকে যাচ্ছে। মেনকা জানান, নিকিতা অভিজ্ঞ এয়ার ফাইটার কন্ট্রোলারদের মধ্যে গোটা দেশে দ্বিতীয় র্যাঙ্কে রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার কেন্দ্র এবং বায়ুসেনার তরফে সওয়াল করেন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ঐশ্বর্য ভাটি। নিকিতা কেন স্থায়ী কমিশন পাচ্ছেন না, তা অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেলের কাছে জানতে চায় সুপ্রিম কোর্ট।
ভাটি জানান, তিনি নিজেও সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি জানান আবেদনকারী নিকিতাকে নির্বাচন বোর্ড অযোগ্য বলে মনে করেছে। এরপরেই ওই আধিকারিক সরাসরি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। বাছাই সংক্রান্ত দ্বিতীয় একটি বোর্ড বিষয়টি বিবেচনা করবে বলেও আদালতে জানান ভাটি। সে ক্ষেত্রে আদালতের পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত বায়ুসেনার ওই মহিলা আধিকারিককে কাজ থেকে সরানো যাবে না বলে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আগামী ৬ অগস্ট এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে।
শীর্ষ আদালত জানিয়েছে যে নিকিতার পক্ষে কোনও মত তৈরি করা হবে না। মামলার সমস্ত বিরোধের পথ খোলা রাখা হয়েছে।
সশস্ত্র বাহিনীর বেশিরভাগ অফিসার মেধাবী অফিসার হওয়ায় অফিসারদের চাকরিতে বহাল থাকার বিষয়ে মিসেস ভাটির কোনও আপত্তি ছিল না। তবে প্রশ্ন হল কে বেশি যোগ্য এবং বাহিনীকে তরুণ রাখার প্রয়োজনীয়তা।
ভাটি জানান, আইএএফ একটি ‘পিরামিড কাঠামো’ অনুসরণ করেছে। ১৪ বছর চাকরি করার পরে নির্দিষ্ট অফিসারদের চাকরি থেকে সরে যেতে হয়। তার জায়গায় নতুন অফিসার নিয়োগ হন।
বিচারপতি কান্ত ভাটিকে জানান, সশস্ত্র বাহিনীর স্থায়ী কমিশনে সব এসএসসি অফিসারদের স্থান দেওয়ার ক্ষমতা থাকা উচিত। মহিলা অফিসারদের অত্যন্ত ভালো পারফর্মেন্সের কথাও তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে মহিলা অফিসারদের স্থায়ী কমিশন না থাকার কারণে, শর্ট সার্ভিস কমিশনে নিয়োগ হচ্ছে। এই কারণেই ১০, ১২ এবং ১৫ বছর পর আন্তঃসম্পর্কিত প্রতিযোগিতা দেখা দেয়। এমন নীতি হওয়া উচিত যাতে যোগ্য হলে অনেক এসসিসি অফিসারকেও স্থায়ী কমিশনে স্থান দেওয়া যেতে পারে। যদি ১০০ জন এসসিসি অফিসার যোগ্য হয় তাহলে ১০০ জনকেই স্থায়ী কমিশনে নেওয়ার ক্ষমতা থাকা উচিত।”
যার উত্তরে আইনজীবি ভাটি জানান, এসসিসিদের মধ্যে প্রায় ৯০-৯৫ শতাংশ অফিসার যোগ্য। কিন্তু নিজেদের মধ্যে তূল্যমূল্য বিচারে পিছিয়ে পড়েন কেউ কেউ। স্থায়ী কমিশনের জন্য সীমিত সংখ্যক পদ রয়েছে।