নয়া দিল্লি: রাজধানী সফরে গেলেই কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধী(Sonia Gandhi)-র সঙ্গে দেখা করেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় (Mamata Banerjee)। কিন্তু এবারই হল তার ব্যতিক্রম। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) থেকে শুরু করে দিল্লির মুখ্য়মন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল(Arvind Kejriwal)-র সঙ্গে দেখা করার পরিকল্পনা থাকলেও, সেই সফরসূচিতে সনিয়া গান্ধীর জন্য কোনও সময় বরাদ্দ করা হয়নি। আর এই ঘটনার পরই প্রশ্ন উঠেছে বিরোধী ঐক্য নিয়ে। এরইমাঝে মুখ্যমন্ত্রীর সাফ জবাব, “ওনার (সনিয়া গান্ধী) সঙ্গে প্রতিবারই কেন দেখা করব? সংবিধানে এমন কোনও নিয়ম নেই।”
গতকালই দিল্লিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করেন তৃণমূল নেত্রী। বিএসএফ(BSF)-র এক্তিয়ার বাড়ানো থেকে শুরু করে ত্রিপুরায় হিংসা, একাধিক বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলে কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধীর সঙ্গে দেখা করার কোনও পরিকল্পনা রয়েছে কিনা, প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “না নেই, কারণ ওনারা পঞ্জাবের বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত।” এরপরই তিনি বলেন, “সনিয়ার সঙ্গে প্রতিবারই আমরা দেখা করব কেন? এটা কোনও সাংবিধানিক নিয়ম নয়।”
কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধীর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুসম্পর্ক থাকলেও পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের পরই রাজ্যের গণ্ডি পার করে জাতীয় স্তরের রাজনীতিতে নিজের জায়গা তৈরির কাজ শুরু করেছে তৃণমূল। আর তাতেই বেজায় চটেছে কংগ্রেস , কারণ তৃণমূলে যোগ দেওয়া নেতাদের মধ্যে অধিকাংশই কংগ্রেসের। গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লুইজিনহো ফালেইরিও থেকে শুরু করে অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বা সুস্মিতা দেব, সকলেই কংগ্রেসের পরিচিত মুখ ছিলেন।
দিল্লি সফরে গিয়ে প্রতিবারের মতো এবার সনিয়া গান্ধীর সঙ্গে দেখা করার পরিকল্পনা না থাকাতেই বিরোধী জোটের ভাঙন নিয়ে জল্পনা প্রবল হয়েছে। এরই মধ্যে আসন্ন উত্তর প্রদেশ নির্বাচনেও কংগ্রেসকে নয়, বরং অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টিকেই সমর্থনের কথা বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গতকালই তিনি বলেন, “উত্তর প্রদেশে বিজেপিকে হারাতে যদি তৃণমূল সাহায্য করতে পারে, তবে আমরা অবশ্যই যাব। যদি অখিলেশ আমাদের সাহায্য চায়, তবে অবশ্যই করব। তবে আমি মনে করি কিছু জায়গায় স্থানীয় দলগুলিকেও লড়াইয়ের সুযোগ দেওয়া উচিত। যদি আমাদের প্রচারে যেতে বলা হয়, তবে আমরা যাব।”
এদিকে, বিরোধী জোটের টালমাটাল অবস্থার মধ্যেই মুম্বই যাওয়ার কথা জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী ৩০ নভেম্বর মুম্বই যাবেন মমতা। সেখানে শরদ পাওয়ারের সঙ্গে দেখা করবেন মমতা। দেখা হতে পারে উদ্ধব ঠাকরেদের সঙ্গেও। উল্লেখ্য, প্রায় প্রতিটি রাজ্যেই একের অন্যের বিরুদ্ধে লড়ছে বিরোধীরা। এ বলে আমায় দেখ, তো সে বলে আমায় দেখ। একমাত্র মহারাষ্ট্রেই শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেস জোট ঠিকঠাক রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মুম্বই যাত্রায় কংগ্রেসের বন্ধুদের কি কাছে টানতে পারবেন মমতা?
আর যদি কাছে টানতে পারেনও, তাহলেও কি কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে কোনও বিরোধী জোট সম্ভব? সেক্ষেত্রে বাকি আঞ্চলিক দলগুলিকে কি পাশে পাবেন মমতা? আবার কংগ্রেস বিরোধী ঐক্যে থাকলে, কেজরিওয়াল অথবা অখিলেশ কি তা মেনে নেবেন? এমনই বেশ কিছু প্রশ্ন উঠে আসছে। আর সেই সঙ্গে ঘন কালো মেঘ ভিড় জমাচ্ছে বিরোধী ঐক্যের আকাশে।