কলকাতা: সফরসূচি ছিল সোমবারের। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রবিবার রাতেই বিপ্লব- রাজ্যে রওনা হচ্ছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। সূত্রের খবর এমনটাই। যুব তৃণমূলের সভানেত্রী সায়নী ঘোষের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার মামলা রুজু হওয়া এবং তাঁর গ্রেফতারির খবর পেয়ে তড়িঘড়ি ত্রিপুরা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন অভিষেক বলে খবর। যদিও আজ তিনি আদৌ ত্রিপুরা যেতে পারবেন কিনা এ নিয়ে জটিলতা রয়েছে। কারণ, আগরতলায় বিমান অবতরণের সময় নিয়েও শুরু হয়েছে দ্বন্দ্ব।
এর আগে বিপ্লব দেবের ত্রিপুরায় জয়া দত্ত, সুদীপ রাহাদের গ্রেফতারির প্রেক্ষিতে সেখানে ছুটে গিয়েছিলেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার সায়নীর পাশে দাঁড়াতে এদিন রাতেই ত্রিপুরা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কিন্তু বিমান অবতরণের অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে জানা গিয়েছে।
উল্লেখ্য, সায়নীর বিরুদ্ধে গাড়ি দিয়ে ধাক্কা মারার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে ত্রিপুরা পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার মামলা রুজু করেছে। আপাতত তাঁকে আগরতলা পূর্ব মহিলা থানায় রাখা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। তাঁর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করেছে ত্রিপুরা পুলিশ। জানা গিয়েছে, ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০ বি, ৫০৬, ১৫৩ এবং ৩০৭ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। রবিবার রাতে পুলিশ হেফাজতেই কাটাতে হবে তৃণমূলের যুব নেত্রীকে।
এদিকে এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন সায়নী। তাঁর কটাক্ষ, “রাজনৈতিক লড়াই জিনিসটাই বিজেপির সিলেবাসে কোনদিনও ছিল না এবং ভবিষ্যতেও থাকবে না। ক্ষমতার দম্ভে, প্রশাসন ও গুন্ডাবাহিনীকে ব্যবহার করে, ভয় দেখিয়ে ভারতবর্ষের মানুষকে চুপ করিয়ে রাখা যাবে না। গণতন্ত্রকে এভাবে ভুলুণ্ঠিত হতে তৃণমূলের সৈনিকরা দেবে না।”
.@BjpBiplab has become so UNABASHEDLY BRAZEN that now even SUPREME COURT ORDERS DOESN’T SEEM TO BOTHER HIM.
He has repeatedly sent goons to attack our supporters & our female candidates instead of ensuring their safety! DEMOCRACY BEING MOCKED under @BJP4Tripura. #NotMyINDIA pic.twitter.com/E9JA4HgTf9
— Abhishek Banerjee (@abhishekaitc) November 21, 2021
অন্যদিকে এক টুইটে বিপ্লব দেবের প্রশাসনকে তীব্র আক্রমণ করেছেন অভিষেক। এক টুইট বার্তায় তিনি লিখেছেন, “বিপ্লব দেব এতটাই নির্লজ্জ হয়ে উঠেছে যে, এখন সুপ্রিম কোর্টের আদেশ নিয়েও তিনি আর মাথা ঘামান বলে মনে হয় না। তিনি আমাদের সমর্থকদের এবং আমাদের মহিলা প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে বারবার তাঁদের উপর আক্রমণ করার জন্য গুন্ডা পাঠিয়েছেন! গণতন্ত্রকে উপহাস করছে ত্রিপুরার বিজেপি। এটা আমার ভারত নয়।”
উল্লেখ্য, শিয়রেই আগরতলা পুরসভা নির্বাচন। আগামী ২৫ নভেম্বর পুরভোটের দিন ঠিক হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনী প্রচারের শেষ দু’দিনেও বহাল রইল অশান্তি। তৃণমূলের উপর বিজেপির আক্রমণের অভিযোগ ঘিরে রবিবার দিনভর অশান্তি ছড়াল আগরতলায়। প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে ত্রিপুরায় তৃণমূলের নেতা-নেত্রীদের হয়রান করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কুণাল ঘোষরা।
তৃণমূল নেতারা যে হোটেলে ছিলেন, সেখানে হানা দেয় পুলিশ। পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি সায়নী ঘোষকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রথমে সায়নীকে আগরতলা পূর্ব মহিলা থানায় গিয়ে হাজিরা করা হয়। সেই সময় থানার বাইরে তীব্র ঝামেলা শুরু হয়। খণ্ডযুদ্ধ বাধে।
সায়নী ঘোষ-সহ অন্যান্য তৃণমূল-নেত্রীরা থানায় পৌঁছোনোর পরেই বিজেপির দুষ্কৃতীরা মাথায় হেলমেট পরে ও হাতে লাঠি নিয়ে চড়াও হয় থানা চত্বরে বলে অভিযোগ। থানায় ঢুকে তৃণমূলের উপর হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। বাইরে তৃণমূল নেতাদের উপর তুমুল ইট-বৃষ্টিও চলে। তৃণমূল নেতা সুবল ভৌমিকের গাড়িও ভাঙচুর হয়। যদিও বিজেপি পাল্টা অশান্তির জন্য দায়ী করেছে তৃণমূলকে।
এদিকে অভিষেকের সভা ভেস্তে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই এই অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি বলে দাবি করেছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুস্মিতা দেব। সুস্মিতা দেবের, “ত্রিপুরার পুলিশ নিরপেক্ষ নয়।” এর মধ্যে সায়নী ঘোষের গ্রেফতারি ঘিরে তীব্র টানাপোড়েন শুরু হল।