আগরতলা: জাতীয় রাজনীতির জন্য হোক বা না হোক, বর্তমানে বঙ্গ রাজনীতির অন্যতম আলোচ্য বিষয় হয়ে রয়েছে ত্রিপুরা। আর সেই রাজ্যের রাজনীতিতে রীতিমতো ঝড় তুলে বৃহস্পতিবারই বিধানসভার স্পিকার পদ থেকে ইস্তফা দিলেন বিজেপি বিধায়ক রেবতীমোহন দাস। ‘ব্যক্তিগত কারণ’-এর কথা উল্লেখ করে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্তের কথা তিনি জানান। তবে এতে জল্পনা থামছে না। ত্রিপুরায় বিজেপির অন্দরে যে ডামাডোল বিগত কয়েক মাস ধরে চলছে, সেই জল্পনাই যেন যেন নতুন করে উস্কে গিয়েছে।
যদিও বিজেপিও যে দল ধরে রাখতে মরিয়া, তার প্রমাণ কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাওয়া গিয়েছে। অধ্যক্ষের পদ ছাড়ার পরই তাঁকে রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি পদে নিয়োগ করা হয়। বিজেপি রাজ্য সভাপতি মানিক সাহা রেবতীমোহনকে এই পদে নিয়োগ করেন। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, বিজেপিতে যাতে কোনও ভাবেই ভাঙন না দেখা দেয়, সেটা নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ করেছেন পদ্ম নেতৃত্ব। শুধুমাত্র বিধায়ক পদে থাকলে কখন কী হয় বলা কঠিন, তাই এটা সাংগঠনিক একটা পদ দিয়ে দলের প্রতি বাঁধন শক্ত রাখার চেষ্টা।
পশ্চিম প্রতাপগড় বিধানসভা কেন্দ্রের এই বিধায়কও একসময় সিপিএমেই ছিলেন। কিন্তু ২০১৬ সালে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। তাঁর শূন্য পদে পরবর্তী স্পিকার হিসেবে দু’জনের নাম নিয়ে গুঞ্জন রয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। একজন বর্তমান ডেপুটি স্পিকার বিশ্ববন্ধু সেন। আরেকজন বিধায়ক রতন চক্রবর্তী।
ডেপুটি স্পিকারের কাছে নিজের ইস্তফাপত্র তুলে দেওয়ার পর সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রেবতীমোহনবাবু জানান, “অনেকদিন ধরেই এই দায়িত্ব থেকে আমি অব্যাহতি চাইছিলাম। আমি এমন একজন মানুষ যে সাংগঠনিক কাজে দক্ষ। এই দায়িত্ব থেকে অব্য়াহতি দেওয়ার জন্য আমি রাজ্য বিজেপির কাছে কৃতজ্ঞ।” দলবদলের জল্পনায় জল ঢেলে তিনি বলেন, “আমি চাই যেন দল ও সংগঠন আরও শক্তিশালী হয়। আমি বিধায়ক পদও ছাড়িনি, দলের সদস্যতাও ত্যাগ করছি না।”
রেবতীবাবুর সুরেই কথা বলছে রাজ্য বিজেপির একটি সূত্রও। জানা গিয়েছে, পরিষদীয় রীতিনীতি তেমনভাবে তাঁর নখদর্পণে না থাকায় বিধানসভায় পদে পদে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় বিজেপিকে। সেই কারণে বিজেপি ও রেবতী, দুই পক্ষের ইচ্ছাতেই এই ইস্তফা গ্রহণ হয়েছে। তবে আরেকটি সূত্র আবার দাবি করছে, বেশ কয়েকদিন ধরেই নাকি ত্রিপুরার রাজনীতিতে জল্পনা শোনা যাছে যে রেবতী তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। এই প্রসঙ্গে যদিও রেবতী বা তৃণমূল কেউই কোনও মন্তব্য করেননি। কিন্তু ত্রিপুরার রাজনীতি এমন একটা সময়ে রয়েছে যেখানে প্রতি মুহূর্তে রং বদলাচ্ছে। বিজেপি বিধায়ক সুদীপ বর্মণ বেসুরোদের তালিকায় নাম লিখিয়েছেন বললে ভুল হবে না। ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পীযূষকান্তি বিশ্বাসও পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। আর এ বার চেয়ার ছাড়লেন স্পিকার।
ভবিষ্যতে কী হবে কেউই নিশ্চিত নন, তবে ত্রিপুরায় যে বড় কিছু হতে চলেছে, সেই পূর্বাভাসটা এখন থেকেই পাচ্ছেন রাজনীতির কারবারিরা। আরও পড়ুন: আইন থেকে ‘বাঁচতে’ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন! দিলীপের খোঁচার পরই বাড়ি-মুখো মুকুল