AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

TV9 bangla Explained on One Nation, One Election: এক দেশ, এক নির্বাচনে কী সুবিধা? কী অসুবিধা? আদৌ কি সম্ভব?

TV9 bangla Explained on One Nation, One Election: ২০২২ সালে মুখ্য় নির্বাচন কমিশনার সুশীল চন্দ্র জানিয়েছিলেন, এক সময়ে গোটা দেশে নির্বাচনের আয়োজন করতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত নির্বাচন কমিশন। তবে এই প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের জন্য সংবিধানে কিছু বদল আনতে হবে।

TV9 bangla Explained on One Nation, One Election: এক দেশ, এক নির্বাচনে কী সুবিধা? কী অসুবিধা? আদৌ কি সম্ভব?
অলঙ্করণ: অভিজিৎ বিশ্বাসImage Credit: TV9 বাংলা
| Updated on: Sep 01, 2023 | 3:37 PM
Share

নয়া দিল্লি: হঠাৎ জরুরি অধিবেশনের ডাক দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার (Union Government)। আগামী ১৮ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর এই অধিবেশন হতে চলেছে। সূত্রের খবর, এই জরুরি অধিবেশনে ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ (One Nation, One Election) বিল পেশ করতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার। ইতিমধ্য়েই কেন্দ্রের তরফে একটি কমিটিও তৈরি করা হয়েছে এই প্রস্তাবনার বাস্তবায়ন আদৌ সম্ভব কি না, তা খতিয়ে দেখার জন্য। এই কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ (Ramnath Kovind)। ইতিমধ্যেই শাসক ও বিরোধী দলের প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু হয়েছে। কেউ কেউ যেমন এই প্রস্তাবকে সমর্থন জানাচ্ছেন, কেউ আবার এই বিলের তীব্র বিরোধিতা করছেন। শাসক-বিরোধীর তরজা তো লেগেই থাকবে। কিন্তু এই “এক দেশ, এক নির্বাচন” কী? এই বিলের মাধ্য়মে কী করতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার? এই ব্যবস্থা চালু হলে সুবিধাই বা কী হবে আর সমস্যাই বা কোথায়।

‘এক দেশ, এক নির্বাচন’:

‘এক দেশ, এক নির্বাচন’কে সহজ কথায় বোঝানোর অর্থ হল গোটা দেশে একটাই নির্বাচনের ব্যবস্থা। একই সময়ে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনগুলি হবে। অর্থাৎ রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের মেয়াদ একই সময়ে শেষ হবে। আমাদের দেশে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন হয় ভিন্ন সময়ে। যে রাজ্যে যখন সরকারের মেয়াদ শেষ হয়, তখন বিধানসভা নির্বাচন হয়।

এক দেশ, এক নির্বাচনের সুবিধা কী?

যদি কেন্দ্র এই বিল আনে এবং তা পাশ হয়, তবে গোটা দেশে একই সময়ে নির্বাচন হবে। এতে সবথেকে সুবিধা হবে নির্বাচনের খরচ কমবে। প্রতিটি নির্বাচনের জন্যই বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়। রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের জন্য় খরচ হয়েছিল ৬০ হাজার কোটি টাকা। প্রতিটি রাজনৈতিক দলই নির্বাচনের পিছনে বিপুল অর্থ খরচ করে। যদি একটিই নির্বাচন হয়, তবে এই খরচ একধাক্কায় অনেকটা কমে যাবে।

দ্বিতীয়ত, ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ ব্য়বস্থা চালু হলে প্রশাসনিক দক্ষতা ও কার্যক্ষমতাও অনেকাংশে বাড়বে। লোকসভাই হোক বা বিধানসভা, প্রতিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার জন্য় সরকারি কর্মীদের ব্যবহার করা হয়। এতে প্রশাসনিক কাজে প্রভাব পড়ে। যদি এক সময়ে নির্বাচন হয়, তবে প্রশাসনিক কাজের জন্য অনেকটাই সময় বাঁচবে।

তৃতীয়ত, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের নীতি ও কর্মসূচিগুলি বাস্তবায়ন এবং তা চালু রাখার ক্ষেত্রেও এই নীতি সাহায্য করবে। প্রতিটি নির্বাচনের আগেই আদর্শ আচরণ বিধি জারি করা হয়। এরফলে নতুন কোনও প্রকল্প ঘোষণা করা যায় না। যদি এক সময়েই গোটা দেশে নির্বাচন হয়, তবে বিভিন্ন সময়ে নতুন প্রকল্প শুরুর ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হবে না।

চতুর্থত, বিলের সমর্থকদের দাবি, গোটা দেশে একসঙ্গে নির্বাচন হলে ভোটারদের মধ্যে তার ভালো প্রভাব পড়বে। বাকিদের দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে আরও সকলে ভোট দিতে যাবেন। ভোটের হার বাড়বে।

সমস্যা-

এক দেশ, এক নির্বাচন ব্য়বস্থা চালুর ক্ষেত্রে প্রথম প্রতিবন্ধকতাই হল সংবিধান সংশোধন। রাজ্য়ের বিধানসভা ও লোকসভার মেয়াদকে একই সময়ের মধ্যে বাঁধতে ও নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বদল করতে সংবিধানেও বদল আনতে হবে। পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিত্ব আইন এবং সংসদের কার্যপ্রণালীতেও পরিবর্তন করতে হবে।

এক সময়ে নির্বাচনের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক দলগুলির সবথেকে বড় চিন্তা হল, তারা আঞ্চলিক সমস্যাগুলিকে তুলে ধরতে পারবেন না। প্রচারে কেন্দ্রীয় ইস্যুগুলিই প্রধান গুরুত্ব পাবে। এছাড়া নির্বাচনী পরিকল্পনাতেও সমস্যা হবে। জাতীয় স্তরের দলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রচার বা খরচ করাও সম্ভব নয় আঞ্চলিক দলের।

এক সময়ে রাজ্য় ও কেন্দ্রের নির্বাচন হলে ভোটারদের মত প্রভাবিত হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। ২০১৫ সালে করা একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, একই সময়ে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন হলে, ৭৭ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে যে ভোটাররা একই দলকে দুই নির্বাচনে ভোট দেবে। তার বদলে যদি ৬ মাসের ব্যবধানে দুই নির্বাচন হয়, তবে ৬১ শতাংশ ভোটাররা এক দলকে বেছে নিতে পারে।

হঠাৎ এক দেশ, এক নির্বাচনের প্রসঙ্গ এল কোথা থেকে?

এক সময়ে দেশে একই সঙ্গে নির্বাচন হত। ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত লোকসভা এবং বিধানসভার নির্বাচন একসঙ্গে হয়েছিল। ১৯৮৩ সালে নির্বাচন কমিশন প্রথমবার ফের যৌথ নির্বাচন প্রক্রিয়া চালু করার প্রস্তাব দিয়েছিল। সেই সময় এই প্রস্তাব সমর্থন করেনি তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার। পরে ১৯৯৯ সালে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার পক্ষে সওয়াল করেছিল ল কমিশনও।

ক্ষমতায় আসার পর থেকেই একাধিকবার এক দেশ এক নির্বাচনের পক্ষে সওয়াল করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ২০১৪ সাল থেকেই বিজেপি এই নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ইস্তাহারেও এক দেশ, এক নির্বাচনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।  এরপরে ২০১৬ সালেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একই সময়ে নির্বাচনের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। পরের বছর, নীতি আয়োগের তরফেও একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করা হয়। ২০১৮ সালে আইন কমিশনের তরফে জানানো হয়, এক সময়ে দেশজুড়ে নির্বাচন করানোর জন্য কমপক্ষে পাঁচটি সাংবিধানিক প্রস্তাবনার প্রয়োজন। ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একাধিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এই প্রস্তাবনা নিয়ে বৈঠক করেছিলেন। তবে সেই সময়ে কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি, ডিএমকে বৈঠকে যোগ দেয়নি। আম আদমি পার্টি, তেলুগু দেশম পার্টি ও বিআরএস তাদের প্রতিনিধি পাঠিয়েছিল।

২০১৬ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ সংক্রান্ত প্রস্তাব খতিয়ে দেখেছে পার্লামেন্টারি স্ট্যান্ডিং কমিটি, ল কমিশন এবং নীতি আয়োগ। ইতিমধ্যেই তিনটি আলাদা আলাদা রিপোর্ট এ বিষয়ে জমা পড়েছে। ল কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন প্রাক্তন বিচারপতি বি এস চৌহান। রিপোর্ট জমা দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল আরোরাও। দু’টি ক্ষেত্রেই এই প্রস্তাবকে ইতিবাচক সমর্থন জানানো হলেও প্রস্তাব বাস্তবায়নের একাধিক সমস্যার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। এই বিধান চালুর ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট সংবিধান সংশোধনী প্রয়োজন বলে জানানো হয়।

২০২২ সালে মুখ্য় নির্বাচন কমিশনার সুশীল চন্দ্র জানিয়েছিলেন, এক সময়ে গোটা দেশে নির্বাচনের আয়োজন করতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত নির্বাচন কমিশন। তবে এই প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের জন্য সংবিধানে কিছু বদল আনতে হবে। সংসদে আলোচনা করেই এর সিদ্ধান্ত নেওয়া শ্রেয়। ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে ল কমিশন সমস্ত জাতীয় দল, জাতীয় নির্বাচন কমিশন, আমলা, শিক্ষাবিদ ও আইন বিশেষজ্ঞদের কাছে “এক দেশ, এক নির্বাচনে”র প্রস্তাবনা নিয়ে মতামত জানতে চান।

আদৌ এই বিল পাশ সম্ভব?

বিশেষজ্ঞদের মতে, কেন্দ্র ও রাজ্যস্তরে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে স্থায়ীভাবে বদলানোর ক্ষেত্রে সংবিধানে সংশোধনী প্রয়োজন। সংসদে এই বিল পেশ করা হলে, তা পাশ করানোর জন্য দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন। সেই হিসাব অনুযায়ী, ৫৪৩ আসনের লোকসভা এবং ২৪৫ আসনের রাজ্যসভায় মোট ৬৭ শতাংশ সমর্থন নিশ্চিত করতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে। লোকসভায় মোট আসনের মধ্যে ৬১ শতাংশ বিজেপি শাসিত এনডিএ জোটের দখলে রয়েছে। রাজ্যসভায় এনডিএ জোটের আসন সংখ্যা মোট আসনের ৩৮ শতাংশ।

বিধানসভার ক্ষেত্রে দেশের অন্তত ১৪টি রাজ্যের বিধানসভায় বিল পাশ হতে হবে। বর্তমানে ১০টি রাজ্যে শাসক দল বিজেপি। এছাড়াও ৬টি রাজ্যে জোট-শরিক হিসাবে ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। ফলে বিজেপি যদি জোর দেয়, তবে বিল পাশ করা খুব একটা কঠিন হবে না।