কাশ্মীরে (Kashmir) জঙ্গি (Terrorist) হামলার ঘটনা নতুন নয়। প্রায়শই সেনা-জঙ্গি গুলির লড়াইয়ের (Encounter) খবরে ঘুম ভাঙে উপত্যকার। তবে গত কয়েকদিনে যে ছবি ধরা পড়েছে তাতে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। সাধারণত সেনাবাহিনীই (Indian Army) হয়ে থাকে জঙ্গিদের মূল টার্গেট। ভারতের নিরাপত্তা ঘেরাটোপ ভেঙে অনুপ্রবেশ করাই পাক জঙ্গিদের মূল লক্ষ্য। কিন্তু গত কয়েকদিনে দেখা গেল অন্য ছবি। খুন হতে হল একের পর এক নিরপরাধ সাধারণ মানুষকে। মনে করা হচ্ছে উপত্যকাকে নতুন করে অশান্ত করতে উঠে পড়ে লেগেছে পাকিস্তান (Pakistan)। আর তাদের সেই পরিকল্পনায় ব্যবহার করা হচ্ছে নতুন অস্ত্র, যার নাম হরকত ৩১৩ (Harkat 313)।
লস্কর-ই-তইবা, জয়েশ-ই-মহম্মদ কিংবা হিজবুল মুজাহিদীনের নাম পরিচিত। ভারতে একের পর এক ছোট-বড় নাশকতার পিছনে এই সংগঠনগুলিই মূল ষড়যন্ত্রীর কাজ করে। তাই ভারতীয় গোয়েন্দা আর নিরাপত্তা বাহিনীর বিশেষ নজর থাকে এদের গতিবিধির ওপর। সম্ভবত সে জন্যেই নতুন মোড়কে জঙ্গি হামলার চেষ্টা চালাচ্ছে পাকিস্তান। পাক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের পরিকল্পনামতো তাই তৈরি হয়েছে নতুন জঙ্গি সংগঠন। মূলত ভারতের বাইরে থেকে জঙ্গিদের নিযুক্ত করা হচ্ছে এই সংগঠনে। সেনাবাহিনী বা পুলিশের চোখে ধুলো দেওয়াই এদের লক্ষ্য। যদিও ভারতীয় গোয়েন্দারা সেই পরিকল্পনা বুঝে গিয়েছেন অনেকটাই।
গোয়েন্দা সূত্রে খবর সেনাবাহিনী বা সাধারণ মানুষ তো বটেই, নয়া এই জঙ্গি সংগঠনের মূল লক্ষ্য অন্যভাবে ভারতের ক্ষতি করা। শুধু মানুষকে হত্যা করা নয়, কেন্দ্রীয় সরকারের একের পর এক প্রকল্পে ক্ষতি করাই এদের অন্যতম লক্ষ্য। যেমন উরিতে হাইড্রো পাওয়ার প্লান্টের ওপর হামলা চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই প্রকল্পের শিলান্যাস করেছিলেন। কয়েক কোটি টাকার সেই প্রকল্প তছনছ করে দিতে চায় জঙ্গিরা।
শুধু হাইড্রো পাওয়ার প্লান্ট নয়, সম্প্রতি জরুরি ভিত্তিতে অবতরণের জন্য অনন্তনাগের যে ল্যান্ডিং স্ট্রিপ তৈরি হয়েছে সেটাও ধ্বংস করে দিতে চায় তারা। ইতিমধ্যেই হামলার আশঙ্কা করে জারি করা হয়েছে সতর্কতা। উল্লেখ্য, সম্প্রতি রাস্তা, বাঁধ কিংবা সেতু থেকে শুরু করে একাধিক প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা খরচ করছে কেন্দ্র। উপত্যাকার সেইসব প্রজেক্টই জঙ্গিদের অন্যতম টার্গেট।
ইসলামে এই ৩১৩ সংখ্যার বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। জানা যায়, আলবদরের প্রথম যে যুদ্ধে লড়েছিল মুসলিমরা সেখানে মহম্মদের সঙ্গী ছিলেন ৩১৩ জন সেনা।
এক আধিকারিকের জানান, এই সংগঠনের নাম তিনি প্রথমবার শুনলেন। এই সংগঠনে বিদেশি জঙ্গিদের জায়গা দেওয়া হয়েছে বলেই জানতে পেরেছেন তাঁরা। তবে তাঁর মতে আসলে লস্কর-ই-তইবার থেকে নজর সরানোর জন্যই এই নতুন নাম বা নতুন মোড়ক ব্যবহার করা হচ্ছে।
সূত্রের খবর, আইএসআই চায়, সেই সব জঙ্গিদের কাজে লাগাতে, যারা সেনাবাহিনীর সন্দেহের তালিকায় নেই। যে সব কাশ্মীরিদের কোনও অপরাধের তেমন কোনও পুরনো রেকর্ড নেই, অথচ যারা দীর্ঘদিন ধরে উপত্যকায় সন্ত্রাসকে সমর্থন করে আসছে, তাদেরই এই হত্যার কাজে লাগাতে চায় আইএসআই। এই কাজে লাগানোর জন্যই নতুন জঙ্গি সংগঠন তৈরি করা হয়েছে বলে গোয়েন্দাদের অনুমান। গোয়েন্দাদের চোখে ধুলো দিতে তাদেরকে কাজে লাগানো হবে।
গোয়েন্দা সূত্রে খবর গত ২১ সেপ্টেম্বর সেই বৈঠক হয়েছে মুজফফরাবাদে। ভারতীয় গোয়ান্দাদের হাতে যে তথ্য এসেছে তাতে জানা যাচ্ছে, আইএসআই -এর অফিসারদের সঙ্গে জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের গোপনে বৈঠক হয়েছে সে দিন। সেই বৈঠকে জম্মু ও কাশ্মীরে বড়সড় হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছে বলেই সূত্রের খবর। লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে যাতে উপত্যকায় এক সঙ্গে বহু মানুষকে হত্যা করা সম্ভব হয়। কাশ্মীর পুলিশ, সেনাবাহিনী বা গোয়েন্দাদের সঙ্গে কাজ করে, এমন কাশ্মীরিদের চিহ্নিত করে যাতে হত্যা করা যায়, সেই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। উত্তর কাশ্মীরের যে সব নাগরিক বিজেপি বা আরএসএস ঘনিষ্ঠ, তাঁদেরকেও টার্গেট করা হবে। জানা গিয়েছে, অন্তত ২০০ জনের একটি হিট-লিস্ট তৈরি করা হয়েছে। যাদেরকে মেরে উপত্যকায় অস্থিরতা তৈরি করতে চায় পাকিস্তান।
তবে এত সব চেষ্টা সত্ত্বেও হরকতের খোলনলচে খুঁজে বের করে ফেলছেন গোয়েন্দারা। তাই আদৌ কতটা সফল হবে আইএসআই, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
আরও পড়ুন: Kashmir: আরও বেশি হত্যালীলা চলবে কাশ্মীরে, উপত্যকায় হুঁশিয়ারি ইসলামিক স্টেটের