নয়া দিল্লি: দু’দিনের ভারত সফরে এসে নিজেকে বলিউড তারকার থেকে কম কিছু মনে করছেন না ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন (Boris Johnson)। বৃহস্পতিবার গুজরাটে তিনি যে উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছেন, তার জন্য এদিন তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী(Narendra Modi)-কে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন যে, ওই বিশাল অভ্যর্থনা পেয়ে তিনি নিজেকে সচিন তেন্ডুলকর বা অমিতাভ বচ্চনের মতোই মনে করছিলেন। এদিন মুখোমুখি বৈঠকে বসেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। প্রতিরক্ষা থেকে শুরু করে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক অংশীদারী সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেন তারা।
এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ‘খাস দোস্ত’ বলেই উল্লেখ করেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তিনি বলেন, “আমি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও ভারতবাসীদের ধন্যবাদ জানাতে চাই বিশাল অভ্যর্থনার জন্য। ভারতে পা রাখতেই যেভাবে সব জায়গায় আমার হোর্ডিং দেখতে পেয়েছি, তা দেখে নিজেকে সচিন তেন্ডুলকর বা অমিতাভ বচ্চন বলে মনে হচ্ছিল। গুজরাটের মানুষ আমাকে স্বাগত জানানোর জন্য দারুণ ব্যবস্থা করেছিলেন। আমি এর আগে কখনও এই ধরনের অভ্যর্থনা দেখিনি।”
শুক্রবারই ভারত ও ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক মজবুত করা নিয়ে আলোচনা করেন। একইসঙ্গে ইন্দো-প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চলে নিরাপত্তা বাড়ানোর উপরও জোর দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বাণিজ্য-ভিসা চুক্তি নিয়েও দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হয়। এদিন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, “ভারত যখন আজাদি কা অমৃত মহোৎসব উদযাপন করছে, সেই সময়ে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর এই সফর অবশ্যই ঐতিহাসিক।”
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীও বলেন, “আসন্ন দিওয়ালির মধ্যেই আমরা নতুন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি শুরু করতে পারব বলে আশা করছি… আমি আধিকারিকদের আর্জি জানিয়েছি যাতে কাজ দিওয়ালির মধ্যে শেষ হয়। বেশ কিছু পণ্যের দাম কমিয়েছে ভারত, এর পরিবর্তে আমরাও বেশ কিছু পণ্যের দাম কমাচ্ছি। ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে মিলিত সহযোগিতায় স্বাস্থ্য় ব্যবস্থার উন্নতির লক্ষ্যেও কাজ নিয়ে আশাবাদী আমরা।”
রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়েও দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী জানান, তারা দুইজনই ইউক্রেনের যুদ্ধ থামানোর প্রয়োজনীয়তার উপরে জোর দিয়েছেন। আলোচনা ও কূটনীতির মাধ্যমেই বিরোধ মেটানোর উপরই তারা জোর দিয়েছেন বলে জানান। প্রতিটি দেশের সার্বভৌমত্ব যাতে বজায় থাকে, সেই প্রসঙ্গেও সওয়াল তুলেছেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী।
জানা গিয়েছে, ভারত ও ব্রিটেন নতুন করে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার নয়া অংশীদারী চুক্তি করা হবে। এই প্রসঙ্গে বরিস জনসন বলেন, “আমরা দুই দেশই ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে স্বাধীন ও মুক্ত রাখতে বিশ্বাসী। দুই দেশই যেহেতু নিত্যনতুন ও কঠিন ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে, তাই স্থল, জল, আকাশ, মহাকাশ ও সাইবার-এই পাঁচ ক্ষেত্রেই পরবর্তী প্রজন্মের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিরাপত্তা বজায় রাখতে ব্রিটেন ভারতকে সাহায্য করবে। আধুনিক প্রযুক্তির যুদ্ধ বিমান থেকে শুরু করে হেলিকপ্টার ও সাবমেরিনও সরবরাহ করা হবে।”