নয়া দিল্লি: মাস পার হয়নি এখনও, এরইমধ্যে নখ-দাত বের করছে ওমিক্রন সংক্রমণ (Omicron Variant)। বিশ্বজুড়ে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে করোনা ভাইরাসের নয়া ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন। ইতিমধ্যেই ৫৯টি দেশে ওমিক্রন সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতেরও ধীরে ধীরে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টই কি তবে দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ (Third Wave of COVID-19) ডেকে আনবে? এই প্রশ্নের উত্তরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা(World Health Organization)-র দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার রিজিওনাল ডিরেক্টর ডঃ পুনম ক্ষেত্রপাল (Poonam Khetrapal) বলেন, “নতুন ভ্যারিয়েন্টের খোঁজ মিললেই পরিস্থিতি শোচনীয় হবে, এমন কোনও কথা নেই। তবে এটা সঠিক যে পরিস্থিতি আরও অনিশ্চিত হয়ে উঠবে।”
বিশ্ব জুড়ে করোনা পরিস্থিতি ও “অতি সংক্রামক” ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে আলোচনায় পুনম ক্ষেত্রপাল বলেন, “প্য়ানডেমিক এখনও রয়েছে। নতুন ভ্যারিয়েন্টের খোঁজ মেলা এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায়, করোনা নিয়ে বিপদ এখনও কাটেনি, তা বলাই চলে।”
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা সংক্রমণ নিয়ে তিনি বলেন, “সুরক্ষা-সচেতনতা নিয়ে অবহেলা করলে চলবে না। আমাদের কড়া নজরদারি, জনস্বাস্থ্য ও সামাজিক দূরত্বের মতো করোনাবিধিগুলি অনুসরণ করতেই হবে। একইসঙ্গে টিকাকরণের হারও দ্রুত বাড়াতে হবে।”
এখনও অবধি দেশে ৩৬ জন ওমিক্রন আক্রান্তের খোঁজ মিলছে। এদিন সকালেই অন্ধ্র প্রদেশেও এক আক্রান্তের খোঁজ মেলে। জানা গিয়েছে ওই ব্যক্তি সম্প্রতি আয়ারল্যান্ড থেকে ফিরেছেন। কেন্দ্রের তরফে ইতিমধ্যেই রাজ্যগুলিকে করোনাবিধি ও টিকাকরণ নিয়ে বার্তা দেওয়া হয়েছে। মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্বের মতো বিধি যাতে অনুসরণ হয়, তা নিয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। একইসঙ্গে ২৭ টি রাজ্যে, যেখানে সংক্রমণ বাড়ছে, সেখানে বিশেষ নজরদারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ওমিক্রনের আতঙ্কে বিভিন্ন দেশে যে নিয়মবিধি চালু করা হয়েছে, সে প্রসঙ্গে ডঃ ক্ষেত্রপাল বলেন, “ওমিক্রনের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য এবং যেভাবে বিশ্বজুড়ে সংক্রমণ দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে, তাতে প্যানডেমিকের গতিপ্রকৃতিতে পরিবর্তন আসতে পারে। এই মুহূর্তেই ওমিক্রনের প্রভাব কতটা হতে পারে, তা বলা সম্ভব নয়। এই বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা তৈরি করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরও তথ্য় সংগ্রহ করছে। বিভিন্ন দেশকেও তথ্য জমা দিতে বলা হয়েছে। বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার বিশেষজ্ঞ এই ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে গবেষণা করছেন। ওমিক্রন কতটা সংক্রমণ ছড়াতে পারে, সংক্রমণ কতটা গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে এবং পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কতটা, এই বিষয়গুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ওমিক্রন ভ্য়ারিয়েন্টের প্রভাবে পুনরায় সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে আরও তথ্যের প্রয়োজন বললে জানান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার রিজিওনাল ডিরেক্টর। তিনি বলেন, “প্রাপ্ত তথ্য প্রমাণে দেখা যাচ্ছে যে অতি সংক্রামক হলেও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় কম অসুস্থ হচ্ছেন ওমিক্রনে আক্রান্তরা। তবে এই বিষয়ে আরও তথ্য়ের প্রয়োজন।”
বর্তমানে আরটি-পিসিআর পরীক্ষা ও অ্যান্টিজেন ভিত্তিক পরীক্ষার মাধ্যমেই করোনা সংক্রমণ চিহ্নিত করা হচ্ছে এবং জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের মাধ্য়মে করোনার ভ্যারিয়েন্টগুলি চিহ্নিত করা হচ্ছে। তবে ওমিক্রন ভ্য়ারিয়েন্ট রুখতে আলাদাভাবে কোনও পরীক্ষা বা সতর্কতার প্রয়োজন কিনা, এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে, ডঃ ক্ষেত্রপাল বলেন, “আক্রান্তদের প্রাথমিক তথ্য ও সংক্রমণের ক্লাস্টার সম্পর্কে তথ্য জানাতে হবে। একইসঙ্গে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো, যেমন কত সংখ্যক বেড ফাঁকা রয়েছে, এই বিষয়গুলির উপরও কড়া নজর রাখতে হবে। যত দ্রুত সংক্রমণ চিহ্নিত করা যাবে, ততই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সুবিধা হবে।”