নয়া দিল্লি: কোনও মহিলার সঙ্গে সম্মতিতে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হলেই কি যা খুশি তাই করা যায়? শুধুমাত্র যৌন সম্পর্ক স্থাপনের অনুমতি বা সম্মতি পাওয়া মানে এটা নয় যে পুরুষসঙ্গী ওই মহিলার প্রজননগত অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন। বা ওই মহিলাকে শারীরিকভাবে অত্যাচার করা যাবে। সম্প্রতি এক ধর্ষণের অভিযোগের বিরুদ্ধে জামিনের আবেদন জানানো এক ব্যক্তির আর্জি খারিজ করে পর্যবেক্ষণে এমনটাই জানিয়েছে দিল্লির এক নিম্ন আদালত। পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, একজন মহিলা তাঁর যৌনতার স্বাধীনতা ব্যবহার করে নিজের যৌনসঙ্গীর সঙ্গে লিপ্ত হতে পারে। কিন্তু সেই পুরুষসঙ্গী এটা ধরে নিতে পারেন না যে মহিলার প্রজননের অধিকার বা অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার অধিকারের ক্ষেত্রেও তাঁকে সম্মতি দেওয়া হয়েছে।
আদালত সাফ জানিয়েছে, গর্ভপাতের যন্ত্রণা ভোগ করতে ওই মহিলা যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হননি। অভিযুক্ত ব্যক্তির জামিনের আর্জি খারিজ করে দিয়ে অতিরিক্ত দায়রা আদালতের বিচারক বিশাল গোগনে এই পর্যবেক্ষণ করেন। যেখানে বলা হয়, একজন মহিলা পূর্ণ সম্মতিতে সহবাস করলেও সেটা কখনই তাঁর সঙ্গীকে যৌন হেনস্থায় সায় দেয় না। কোনও মহিলা তাঁর সঙ্গীর সঙ্গে যখন যৌন সম্পর্কে প্রবেশ করে তখন সে নিজের প্রজননের অধিকার-সহ বাকি অধিকার ত্যাগ করে না। ধর্ষণের অভিযুক্ত ব্যক্তির জামিন খারিজ করে বলে আদালত। ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণের পাশাপাশি তিনবার গর্ভপাত করানোর অভিযোগও তুলেছিলেন অভিযোগকারিণী। এমনকি, তাঁর পুরুষসঙ্গী তাঁকে মারধর করতেন বলেও অভিযোগ করেছেন চতুর্থবার অন্তঃসত্ত্বা হওয়া (৮ মাস) ওই মহিলা।
আদালতের পর্যবেক্ষণ, “শুধুমাত্র যৌন সম্পর্ক স্থাপনের সম্মতি থাকলেও একাধিকবার অন্তঃসত্ত্বা করে গর্ভপাত করানোর মাধ্যমে কেবল যৌনতার সম্মতি লঙ্ঘিত হয়েছে। একজন মহিলা নিজের ইচ্ছায় যৌন সম্পর্কে জড়াচ্ছেন মানে অনুমান করে নেওয়া যায় না যে তাঁর প্রজনন অধিকার লঙ্ঘন করার সম্মতিও দেওয়া হয়েছে। যদিও কোনও অভিযুক্ত গর্ভপাতের অভিযোগ ওঠার পরও যৌন সম্পর্ক অব্যাহত রাখে, তখন যৌন সম্পর্কের সম্মতি আপসেই বাতিল হয়ে যায়।” আদালত আরও জানায়, “আমরা এমন একজন অভিযোগকারিণীর দৃষ্টিকোণ থেকে অভিযোগগুলি বোঝার চেষ্টা করছি, যিনি শুধুমাত্র নির্যাতন ও ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন এমনটা নয়। উপরন্তু তিনি একক মাতৃত্বের জন্যও লড়াই চালাচ্ছেন।”
যে কারণে আদালতের পর্যবেক্ষণ, “অভিযুক্ত ব্যক্তি যৌন হেনস্থা করেছেন এবং অভিযোগকারিণীর প্রজননের অধিকারও লঙ্ঘন করেছেন। অভিযোগকারিণীর বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করলে অভিযুক্তের জামিনের আর্জি ধোপে টিকছে না। তাই ভুয়ো ধর্ষণের এই দাবি খারিজ করা হচ্ছে। যদিও অভিযোগকারিণী অভিযুক্তের সঙ্গে বিবাহ সম্পর্কিত কোনও সম্পর্ক স্থাপন হওয়ার ধারণার বশবর্তী ছিলেন কি না সেই বিষয়টি নিয়ে তর্ক এবং বিচার চলতে পারে। তবে যে বিষয়ে সন্দেহ নেই তা হল- অভিযোগকারিণী একাধিক গর্ভপাতের যন্ত্রণা ভোগ করার জন্য যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হননি।”