কলকাতা: ধাপে ধাপে সবক্ষেত্রেই উঠে যাচ্ছে বিধিনিষেধ। খুলে গিয়েছে স্কুলকাছারি, বাজারহাট। ফলে প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষই কাজের জন্য রাস্তায় বের হচ্ছেন। ১৬ নভেম্বর থেকে খুলে যাচ্ছে রাজ্যের স্কুল কলেজগুলিও। কিন্ত লোকাল ট্রেন (Local Train) নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্যই করছে না রাজ্য সরকার। নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, স্টাফ স্পেশালের নামে ৫০ শতাংশ ট্রেন চলছে। অথচ সেখানে যে পরিমাণ মানুষ উঠছেন তাতে হিতে বিপরীত হচ্ছে। গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়ানো কিংবা বসা! কোভিড বিধি মানার কোনও সম্ভাবনাই নেই। উল্টে বিক্ষিপ্ত দুর্ঘটনাও ঘটে যাচ্ছে প্রায়শই।
যাত্রীদের অভিযোগ, ট্রেনটা যদি সরকার চালানোর অনুমতি দিত তা হলে এই দুর্ভোগ তাঁদের হতো না। অফিস খোলা মানেই সেখানে ১০০ শতাংশ হাজিরা দিতে হবে। অথচ এই গন্তব্যে পৌঁছতেই হাড়মাস এক হয়ে যাচ্ছে মানুষগুলোর। কেউ কেউ তো এই স্টাফ স্পেশালকে কটাক্ষ করছেন করোনা স্পেশাল বলে। তাঁদের অভিযোগ, সরকার যে উদ্দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ রেখেছেন, সেই উদ্দেশ্য তো সফল হচ্ছেই না, উল্টে বিপদ বাড়ছে মানুষের।
নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, “একজন সাধারণ নাগরিক হিসাবে সরকারের কাছে প্রশ্ন রাখব, যখন সমস্ত কিছুই খুলে দেওয়া হচ্ছে তা হলে লোকাল ট্রেনটা বন্ধ রেখে আর লাভ কী! স্কুল কলেজ খুললে পরিবহণ পরিষেবাও আগের মতো স্বাভাবিক করে দেওয়া দরকার। আমরা রোজ ট্রেনে যাতায়াত করি। আমাদের কথাও সরকারের একটু ভাবা দরকার। এই ভিড় ট্রেনে উঠতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। মানুষ পড়ে যাচ্ছে। ”
লোকাল ট্রেন চালু করার ক্ষেত্রে রেল সবরকম ভাবে প্রস্তুতি সেরে রেখেছে। কিন্তু যেহেতু নবান্ন থেকে তা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তাই সেখান থেকে অনুমতি না মিললে রেলের কিছু করার নেই। রেলের তরফে এমনটাই দাবি করা হয়েছে। পূর্ব রেলের আধিকারিকদের দাবি, ‘লোকাল ট্রেন চালু করার বিষয়ে আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত। তবে এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে অনুমতি দরকার। অতীতে আমরা রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়ে লোকাল ট্রেন চালু করার বিষয়ে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু সেই সময় রাজ্য সরকার এই বিষয়ে কোনও উত্তর দেয়নি। রাজ্য সরকারের অনুমতি পেলেই আমরা পুরোদমে ট্রেন চালাতে পারব।’
পূর্ব রেলের সিপিআরও একলব্য চক্রবর্তী বলেন, “লোকাল ট্রেন নিয়ে রাজ্য সরকার এখনও কিছু জানায়নি। আমরা ট্রেন পরিষেবা নিয়ে সমস্ত প্রস্তুতিই সেরে রেখেছি। সরকার বললেই আমরা ট্রেন চালিয়ে দেব। মেইল, এক্সপ্রেস ট্রেন প্রায় ৯৮ শতাংশ চলছে। কারণ ওটা আমাদের হাতে। আমরা চালাব। লোকাল ট্রেনটা রাজ্য সরকারের হাতে। তাই আমাদের অপেক্ষা করা ছাড়া কিছুই করার নেই।”
তবে লোকাল ট্রেন চালালে খুব কি বড় বিপদের ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে? এ প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটু রয়ে সয়ে চালানোই ভাল। সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ যোগীরাজ রায়ের কথায়, “আরও দু’ তিন সপ্তাহ পরিস্থিতির দিকে নজর রেখেই লোকাল ট্রেন চালানোটা ঠিক হবে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, করোনা বাড়ছে। এর নতুন স্ট্রেন কিন্তু অনেক বেশি সংক্রামক। দেখাই যাচ্ছে, এক পরিবারে একজন সংক্রমিত হলে বাকিরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই সামনের দু’ তিন সপ্তাহ একটু পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতে হবে। আবার কোনও তৃতীয় ওয়েভ শুরু হতে যাচ্ছে কি না। তবেই লোকাল ট্রেন চালু করা উচিৎ বলে আমার মনে হয়।”
আরও পড়ুন: Digha Helicopter Service Fraud: কলকাতা টু দিঘার ‘উড়ন্ত দুর্নীতি’, লালবাজারে অভিযোগ পরিবহণ দফতরের