
কলকাতা: শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তিন বছরের বেশি তিনি জেলে রয়েছেন। একাধিক মামলায় জামিন পেলেও জেলমুক্তি হয়নি। এবার গ্রুপ সি নিয়োগ মামলাতেও বিপাকে পড়তে চলেছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। গ্রুপ সি নিয়োগ দুর্নীতি মামলাতে পার্থ-সহ অভিযুক্ত ২৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জগঠনের জন্য সিবিআইকে নির্দেশ দিল আলিপুর বিশেষ সিবিআই আদালত। চার্জগঠনের পর সাক্ষ্যগ্রহণের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে। এই মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেছিলেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। আদালত পার্থর আর্জি গ্রহণ করেনি।
অসুস্থতার জন্য এখন একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পার্থ। সেখান থেকেই এদিন আদালতের শুনানিতে ভার্চুয়ালি হাজির করানো হয় তাঁকে। এদিন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী দাবি করেন, “আমি কাউকে সুপারিশ করে কোথাও বসাইনি। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী হয়েছে।” বিচারক তখন বলেন, “রি-শাফেল করার অভিযোগ রয়েছে। সরানো হয়েছিল একজনকে। পরামর্শদাতার আগেই সরানোর অভিযোগ।” পার্থর আইনজীবী তখন বলেন, “যাঁকে আমার মক্কেল সরিয়েছিলেন বলে অভিযোগ, তিনি নিজেও এই মামলায় অভিযুক্ত।” সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, “একজনের সঙ্গে অন্যজনের যোগসাজশের কথা আমরা তদন্তে তুলে ধরেছি।”
এদিন বিচারক জানতে চান, “কেন নিয়োগ হয়েছিল?”। যার জবাবে সিবিআই আইনজীবী বলেন, “এই নিয়োগগুলি হয়েছিল অন্য অভিযুক্তদের সঙ্গে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে। এই অভিযোগের সপক্ষে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ আমাদের হাতে রয়েছে।”
এদিন শুনানিতে বিচারক প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে বলেন, “আপনি দোষী না নির্দোষ বলুন।” যার জবাবে পার্থ বলেন, “আমি নির্দোষ। আমি শপথ নিয়ে মন্ত্রী হয়েছিলাম। আমার সংস্কৃতিগত সম্মান আছে। সামাজিক সম্মান আছে। আমাকে বাঁচানোর দায়িত্ব আদালতের। শুধু এই ভাবে দোষীসাব্যস্ত হব, তা হতে পারে না।” সেন্ট্রাল এজেন্সির বিরুদ্ধে প্রতিহিংসার অভিযোগ তোলেন তিনি।
পার্থর কথা শুনে বিচারক বলেন, “যখন সাক্ষ্য নেওয়া হবে, তখন বলবেন। আপনাকেও বলার সুযোগ দেওয়া হবে।” প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী তখন বলেন, “আমাকে বলতে দিন। সাড়ে তিন বছর ধরে আটকে রাখা হয়েছে। আমি মন্ত্রী, তাঁরা কর্মী। বোর্ডের নির্দেশে পরিচালিত হয় এসএসসি। আর একজন লোকও পার্মানেন্ট কর্মী নন। ৫২টা বিশ্ববিদ্যালয়, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, কত তৈরি করেছি। আমি অসহায়। আমি ডক্টরেট। আমি এখানে সবাইকে শিখিয়ে দেব। আমায় বিশ্বাস করুন, এভাবে চললে আগামিদিনে বিচারব্যবস্থার উপর ভরসা থাকবে না। আমায় মুক্ত করুন। আমি অসুস্থ। আমার কোনও সামাজিক সম্মান নেই? আমার মামা শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। করজোড়ে বলছি, রেহাই দিন।” পার্থর মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন অবশ্য গ্রহণ করেনি আদালত।