কলকাতা: কানহাইয়া কুমার (Kanhaiya Kumar)। ভারতে বামপন্থী রাজনীতির ‘পোস্টার বয়’ বললে ভুল হবে না। সিপিআই ছেড়ে সেই কানহাইয়াই আজ যোগ দিয়েছেন কংগ্রেসে (Congress)। বামপন্থায় বিশ্বাসী এই যুব নেতাও দলবদলের মরসুমে নিজেকে বাইরে রাখতে পারলেন না। আর কানহাইয়ার রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরই মুখ খুলেছেন তাঁর একদা সতীর্থ দীপ্সিতা ধর (Dipsita Dhar)। জেএনইউ-র ছাত্র রাজনীতির ময়দানে যে কানহাইয়া লাল ঝান্ডা ধরে ‘ইনকিলাব’ শ্লোগান তুলতেন, তাঁকেই এখন কংগ্রেসে যোগ দিতে দেখে ঠিক কেমন লাগছে দীপ্সিতার? যুবা নেত্রীর সংক্ষিপ্ত জবাব, “কানহাইয়া পারলেন না।”
কী পারলেন না কানহাইয়া? এসএফআই-এর সর্বভারতীয় যুগ্ম সম্পাদকের কথায়, “বামপন্থী রাজনীতি এই মুহূর্তে যে ধরনের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, এই সময়ে বামপন্থী রাজনীতি করা খুব কঠিন। বহু মানুষ পেরেছেন, বহু মানুষ পারেননি। যাঁরা পারলেন না, তাঁদের মধ্যে কানহাইয়ার নামও চলে এল।” কানহাইয়া কি তবে আদর্শ থেকে বিচ্যুত হলেন? দীপ্সিতার জবাব, “হ্যাঁ তা তো বটেই। বামপন্থী রাজনীতিতে থাকাটা আদর্শগত জায়গা থেকেই অনেক কঠিন। এত বেশি প্রলোভন। আমাদের এখানে তো পাওয়ার জায়গাটা খুবই কম। গাড়ি-বাড়ি পাওয়া যায় না। পদও পাওয়া যায় না। যে সময়ের মধ্যে আমরা রয়েছি সেটা খুবই কঠিন সময়।”
সর্বভারতীয় স্তরে বামপন্থী রাজনীতিক মশাল যে কজন জ্বেলে রেখেছিলেন, নিঃসন্দেহে তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কানহাইয়া। জেনএনইউ-তে ছাত্র আন্দোলনের সময় তাঁর বিরুদ্ধে দেশবিরোধী শ্লোগান দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। হাজারো বিতর্ক এবং মামলায় জড়িয়ে তা থেকে নিস্তারও পেয়েছেন কানহাইয়া। কিন্তু কী এমন হল এতটা কঠিন সময় বামপন্থী রাজনীতিতে আস্থা রেখে এখন মধ্যপন্থায় চলে গেলেন সোশ্যায় মিডিয়ার ‘ভাইরাল নেতা’? সে উত্তর অবশ্য কানহাইয়াই দিতে পারবেন। তবে বামপন্থী রাজনীতিতে কোনও ‘পোস্টার বয়’, বা ‘ভাইরাল নেতা’ গোছের উপাধি মূল্যহীন বলেই এ দিন বলতে শোনা যায় বালির সিপিআইএম প্রার্থীকে।
কানহাইয়া বরং নিজের ব্যক্তিগত ‘রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্খা চরিতার্থ করতে’ কংগ্রেসে নাম লিখিয়ে থাকতে পারেন, যেটা বাম দলে থেকে তাঁর পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না, এমন কথা বলতে শোনা গিয়েছে দীপ্সিতাকে। সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “কমিউনিস্ট পার্টির পোস্টার একমাত্র কাস্তে-হাতুড়ি। তার বাইরে কোনও মুখ বামপন্থী রাজনীতির পোস্টার হতে পারে না।”
আরও পড়ুন: Kanhaiya Kumar Joins Congress: রাহুলের ‘হাত’ ধরে কংগ্রেসে যোগ দিলেন কানহাইয়া-জিগনেশ
কিছুটা স্মৃতিচারণার সুরে পুরনো দিনের কথা মনে করে শেষে দীপ্সিতা জুড়ে দেন, “আমরা যত দিন একসঙ্গে রাজনীতি করেছি, ততদিন রাজনৈতিকভাবে সৎ থাকার চেষ্টা করেছি। সেটা জেএনইউ-র মধ্যে, এবং জেএনইউ-র বাইরেও। ব্যক্তিগত সম্পর্কও রাজনীতির কারণেই। যে লড়াই ও আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে ওঁর ওঠে আসা, তাতে কানহাইয়ার কাছে মানুষের প্রত্যাশা আরও অনেকটা বেশি ছিল। যে আশা সাধারণ মানুষ তাঁর কাছে রেখেছিলেন, সেই আশা ভঙ্গ হয়েছে।”