কলকাতা: আমফান দুর্নীতি নিয়ে মামলা। এবার তা নিজের হাতেই নিয়ে নিল কলকাতা হাইকোর্ট। রাজ্যের বক্তব্যে অসন্তুষ্ট আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই মামলা গ্রহণ করে। আমফানের পর তার ত্রাণ বণ্টন নিয়ে ২০২০ সালে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে বসিরহাটের ঘোরারসে। তা নিয়ে রাজ্যের রিপোর্ট তলব করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। কিন্তু রাজ্যের জবাবে সন্তুষ্ট নয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। তাই এবার আদালতই বিষয়টি দেখবে।
আমফানের পর সরকারের তরফে বসিরহাট-২ ব্লকের ঘোরারস কুলিন গ্রামে পাঁচটি ট্রাকে ত্রাণ পাঠানো হয়েছিল। সেই ত্রাণ বণ্টন নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। নাম জড়ায় স্থানীয় গ্রামপঞ্চায়েত উপপ্রধান সাম্বিল হোসেনের। অভিযোগ ওঠে, সেই ত্রাণের সামগ্রী না দিয়ে উপপ্রধান তা নিজের বাড়িতে রেখে দেন। পরে তা সুযোগ বুঝে অন্যত্র পাঠাতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ধরা পড়ে যান। স্থানীয়রা উপপ্রধানের বিরুদ্ধে ত্রাণ সামগ্রী চুরি করার অভিযোগ তোলেন।
কিন্তু সোমবার আদালতকে রিপোর্ট দিয়ে রাজ্য জানায়, এখানে আদৌ কোনও চুরির ঘটনা ঘটেনি। ত্রাণ সামগ্রী ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে পাঠানোর হচ্ছিল ট্রাকে করে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি এই রিপোর্টে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এটা এক ধরনের আইওয়াশ। ট্রাকে করে এ ভাবে ত্রাণ সামগ্রী কেউ নিয়ে যাবেন, এটা বিশ্বাস যোগ্য নয়। তদন্তের নামে প্রহসন চলছে।
পাল্টা অভিযুক্তের আইনজীবী বলেন যে অভিযোগ তাঁর মক্কেলের বিরুদ্ধে উঠেছে তা একেবারেই মিথ্যা। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের উপর ভিত্তি করে এই মামলা হয়েছে। এরপরই ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, এই মামলা আদালত নিজের তত্ত্বাবধানেই রাখবে।
সুপার সাইক্লোন আমফানে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের জন্য ত্রাণের ঘোষণা করে রাজ্য সরকার। জেলায় জেলায় শুরু হয় ত্রাণ বিলির কাজ। এরপরই ত্রাণ বণ্টন নিয়ে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে শুরু করে। সেই অভিযোগের সিংহভাগই শাসকদলের বিরুদ্ধে যায়। নবান্নে বসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কার্যত স্বীকার করে নেন সে কথা। তাঁর বক্তব্য ছিল, তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে কিছুটা গোলমাল হয়ে গিয়েছে। এরপর নতুন করে ত্রাণপ্রাপকদের তালিকা তৈরিরও নির্দেশ দেন তিনি।
ত্রাণ বিলির ক্ষেত্রে স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠেছিল সেই সময়। উত্তর ২৪ পরগনা , দক্ষিণ ২৪ পরগনার একাধিক জায়গা থেকে এই অভিযোগ ওঠে। ক্ষতিগ্রস্তদের একাংশ এবং বিরোধীরা অভিযোগ তোলে, সাইক্লোনে ক্ষতি না হলেও, ঘরবাড়ি মেরামতের জন্য সরকারের ত্রাণ পেয়েছেন তৃণমূল নেতাদের আত্মীয়, পরিজনরা।
এরকমই অভিযোগ ওঠে, বসিরহাটের ঘোরারস কুলিন গ্রামে। সরকারের পাঠানো ত্রাণ সামগ্রী গ্রামপঞ্চায়েতের উপপ্রধান সাম্বিল হোসেনের বাড়ির গোডাউনে মজুত করা ছিল বলে অভিযোগ তোলেন স্থানীয়রা। সম্প্রতি মালতীপুর স্টেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে দু’টি ট্রাক বোঝাই সামগ্রী গ্রামবাসীরা উদ্ধার করে। তাঁদের অভিযোগ, ত্রাণ সামগ্রী পাচার হয়ে যাচ্ছিল। গ্রামবাসীদের অভিযোগ পেয়ে মাটিয়া থানায় স্বতঃপ্রণোদিত অভিযোগ দায়ের হয়। যদিও মামলাকারীদের বক্তব্য, পুলিশ এফআইআর করেছে ঠিকই। তবে সেখানে কোনও উপযুক্ত ধারা যুক্ত করেনি তারা। এরপরই আদালতের দ্বারস্থ হয় তারা।
আরও পড়ুন: Bhawanipur By Poll: ‘ভবানীপুরের চেয়ে আফগানিস্তান ভাল’, ভোট প্রচারের শেষদিনে দিলীপের সভায় ধুন্ধুমার!