কলকাতা: “প্রথম একাদশে থাকতে চাই। রিজার্ভ বেঞ্চে বসতে চাই না। তাই বড় সুযোগ পেয়ে তৃণমূলে এলাম।” সাত বছর বিজেপিতে থাকার পর কেন তিনি দল বদল করলেন, রবিবাসরীয় বিকেলে তার পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা এক লাইনেই দিয়ে দিলেন বাবুল সুপ্রিয় (Babul Supriyo)। এ দিন শহরের একটি হোটেল সাংবাদিক বৈঠক করে স্পষ্ট ভাষায় প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা আসানসোলের সাংসদ বলেন, “আমি প্রথম একাদশে থেকে খেলতে চাই। যদি মোহনবাগানের প্রথম একাদশে সুযোগ না পাই, তাহলে মোহনবাগান বি-টিমের হয়ে খেলব না। দরকারে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে খেলব।” তাঁর বক্তব্য খুব সাফ, “কারোর কাছে নিজেকে আমায় প্রমাণ করার দরকার নেই। কিন্তু আমি সুযোগকে কাজে লাগাতে চাই। মমতাদি এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝেছেন যে আমার মধ্যে এখনও অনেক কাজ বাকি রয়েছে। সেই জন্য আমি তাঁদের ধন্যবাদ জানাতে চাই।”
রাজ্য তথা জাতীয় রাজনীতিকে রীতিমতো নাড়িয়ে দিয়ে গতকালই তৃণমূলে যোগ দেন বাবুল সুপ্রিয়। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৃণমূলে শামিল হন দু’বারের বিজেপি সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তিনি প্রথম একাদশে খেলতে চান, এই শর্তে। যদিও ‘প্রথম একাদশ’ বলতে তিনি ঠিক কী বলতে চান, সেটা খোলসা করেননি বাবুল। সেই সিদ্ধান্তভার তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরই ন্যস্ত করেছেন তিনি। কিন্তু তৃণমূলের প্রথম একাদশ আদতে কোনটা, তা নিয়ে কিছুই বললেন না তিনি।
বাবুলের মতে, তিনি বর্তমানে বিজেপির প্রথম একাদশে নেই। বস্তুত, তাঁকে প্রথম একাদশ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল বলেই ইঙ্গিত করছেন সাংসদ। তবে কি মন্ত্রিত্ব খোয়ানোর কারণেই বিদ্রোহ? রবিবারের সাংবাদিক বৈঠকে সরাসরি এই প্রশ্নও ছুড়ে দেওয়া হয়েছিল বাবুলের উদ্দেশ্যে? সদুত্তর দেননি বাবুল সুপ্রিয় বড়াল। তৃণমূলের প্রথম একাদশের অর্থ কি তাঁকে রাজ্য সরকারে কোনও মন্ত্রিত্ব দেওয়া হবে? এই প্রশ্ন ধেয়ে আসলেও এড়িয়ে যান লোকসভার সাংসদ। বরং বারবার করেই শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের মুখাপেক্ষী হন তিনি।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে এসেছিল বাবুলের আজকের সাংবাদিক বৈঠকে। সেটা হল- তাঁকে কি অর্পিতা ঘোষের ছেড়ে আসা আসনে রাজ্যসভায় প্রার্থী করতে পারে তৃণমূল? কারণ রাজনৈতিক মহলে যা জল্পনা ছড়িয়েছে, তাতে ওই আসনে কোনও হেভিওয়েট রাজনীতিককেই দেখা যেতে পারে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। একই প্রশ্ন বাবুলকে করা হলে তিনি কিছুটা হালকা মেজাজেই সেটা উড়িয়ে দেন। যেন এমনটা বোঝাতে চাইলেন যে- সাংসদ পদই যদি চাহিদা হত তবে আমি লোকসভার সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার প্রস্তুতি কেন নিতাম?
আরও পড়ুন: Abhijit Murder Case: বাড়িতে গিয়ে ১২ জনের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা দিল সিবিআই
এখানেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের আরেকাংশ অন্য সম্ভাবনা টের পেতে শুরু করেছেন। সেটা হল, রাজ্য সরকারে কোনও মন্ত্রিত্ব অপেক্ষা করে থাকতে পারে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর জন্য। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, পুজোর পরই বাকি চারটি বিধানসভা আসনে উপনির্বাচনের ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন। তেমনটা যদি হয়, তবে বাবুলকে যে কোনও আসনে প্রার্থী করে জেতানো যায়, তবে মমতার মন্ত্রিসভায়ও তাঁকে ঠাঁই দেওয়া যাবে।
আপাতত এমনই সব জল্পনা ও সম্ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছে বঙ্গ রাজনীতির আকাশে। যার মধ্যে কোনওটাই অসম্ভব নয়। আর রাজনীতিকে যে অসম্ভব বলে কিছুই হয় না, সেটার প্রমাণ ২৪ ঘণ্টা আগে বাবুল সুপ্রিয় নিজেই দিয়ে ফেলেছেন।
আরও পড়ুন: Jitendra Tiwari: সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সরেছে মোদী-পদ্মের ছবি, জিতেন্দ্রর গতিপ্রকৃতিতে জল্পনা!