সৌরভ দত্ত: হৃৎপিণ্ডের অসুখ নতুন নয়। কিন্তু সে ভাবে উপসর্গ না থাকায় তা ধরতে পারেননি ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক তথা অধুনা ক্রিকেট প্রশাসক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly)। এদিন শরীরচর্চা করার সময় বুকে ব্যথা অনুভব করায় উডল্যান্ডসের চিকিৎসক সপ্তর্ষি বসুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন সৌরভের স্ত্রী ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়। অসুস্থতার কথা শুনে সৌরভকে আলিপুরের বেসরকারি হাসপাতালে আনার পরামর্শ দেন সেখানকার চিকিৎসকেরা। ঘড়ির কাঁটায় তখন পৌনে একটা।
বিকালে সাংবাদিক বৈঠক করেন হাসপাতালের সিইও রূপালি বসু-সহ সাত সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড। সেই মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যেরা হলেন কার্ডিওলিজস্ট সরোজ মণ্ডল, সিসিইউ চিকিৎসক সৌতিক পাণ্ডা, এস বি রায়, কার্ডিওলজিস্ট আফতাব খান, কার্ডিওথোরাসিক সার্জন ভবতোষ বিশ্বাস, কার্ডিয়াক অ্যানাস্থেসিস্ট পলাশ কুমার এবং আশিস পাত্র। মেডিক্যাল বোর্ডের পরিভাষায় ‘স্থিতিশীল’ রয়েছেন প্রাক্তন অধিনায়ক।
বেসরকারি হাসপাতাল সূত্রের খবর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের হৃৎপিণ্ডের ধমনীতে তিনটি ব্লক রয়েছে। এই তিনটি ব্লকের অবস্থান হল, রাইট করোনারি আর্টারি, লেফট সার্কামফ্লেক্স এবং লেফট অ্যান্টেরিয়র ডিসেন্ডিং। এদিনের ঘটনার জন্য দায়ী রাইট করোনারি আর্টারি। বেসরকারি হাসপাতাল সূত্রের খবর, রাইট করোনারি আর্টারিতে যে ব্লক ছিল সেখানে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়ে বিপত্তি ঘটে। চিকিৎসকেরা সেই বিপত্তির ঘটনাক্রম ব্যাখ্যা করে জানান, ধমনী ব্লক থাকলেও তা দিয়ে এতদিন রক্তপ্রবাহে কোনও সমস্যা হচ্ছিল না। কিন্তু ইতিমধ্যে সংকুচিত হয়ে আসা মুখে রক্ত জমাট বেঁধে বিপত্তি ঘটে। দাদার হার্ট অ্যাটাকের সেটিই কারণ। রক্তের জমাট বাঁধা অংশ দূর করে সেখানে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক করতে প্রাইমারি অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করে মেডিকেটেড (৩৪×৪ মিলিমিটার) স্টেন্ট বসানো হয়েছে। ধমনীর বাকি দু’টি ব্লক দূর করার ক্ষেত্রে ইলেক্টিভ অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করা হতে পারে। পরবর্তী চিকিৎসা পদ্ধতি কী হবে তা আলোচনার ভিত্তিতে চূড়ান্ত হবে বলে জানিয়েছে মেডিক্যাল বোর্ড। বেসরকারি হাসপাতাল সূত্রের খবর, ওই দুটি ব্লকের পরিমাণ ৭০ শতাংশের বেশি।
আরও পড়ুন: ‘ওর মতো একটা বাচ্চা ছেলের এরকম হবে!’ সৌরভের ঘটনা চোখ খুলে দিল মমতার
প্রবীণ কার্ডিওলজিস্ট রবীন চক্রবর্তী বলেন, “৬০ শতাংশ মানুষ হৃৎপিণ্ডে ব্লক থাকলেও বুঝতে পারেন না। সৌরভের তো তবু্ও রাইট করোনারি আর্টারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই একই ঘটনা লেফট অ্যান্টেরিয়র ডিসেন্ডিংয়ে হলে ৬০ শতাংশ মাংসপেশী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। রাইট করোনারি আর্টারির ক্ষেত্রে যে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা ৩০ শতাংশ। সময়মতো চিকিৎসা হওয়ায় দুশ্চিন্তার কারণ নেই। নিয়মিত ওষুধ এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে উনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। উডল্যান্ডসের আইসিইউয়ের ৫১৬ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন ভিভিআইপি রোগী প্রসঙ্গে কার্ডিওলজিস্ট সরোজ মণ্ডল বলেন, “ক্রিটিক্যাল ব্লক ছিল। যেখানে মূল ব্লক ছিল প্রাইমারি অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করে তা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে।”
আরও পড়ুন: সারা দেশেই বিনা মূল্যে করোনা ভ্যাকসিন! বড় ঘোষণা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর