‘ওর মতো একটা বাচ্চা ছেলের এরকম হবে!’ সৌরভের ঘটনা চোখ খুলে দিল মমতার

সৌরভের এই অসুস্থতার খবরে উদ্বেগ বেড়েছে ভক্তদের মধ্যে। মহারাজের দ্রুত সুস্থতা কামনা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় উপচে পড়ছে প্রার্থনা বার্তা।

'ওর মতো একটা বাচ্চা ছেলের এরকম হবে!' সৌরভের ঘটনা চোখ খুলে দিল মমতার
ফাইল চিত্র।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jan 02, 2021 | 9:11 PM

কলকাতা: বুকে ব্যথা নিয়ে শনিবার দুপুরে উডল্যান্ডস হাসপাতালে ভর্তি হন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। বিকেলে তাঁর অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করা হয়। বসানো হয় স্টেন্ট। পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের বোর্ড এই অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করেন। হাসপাতালের সিইও রূপালি বসু জানান, পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সরোজ মণ্ডল, এসবি রায়, আফতাব খান, ভবতোষ বিশ্বাস ও সৌতিক পণ্ডার একটি বোর্ড তৈরি করা হয়েছে। অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির পর এখন ভাল আছেন সৌরভ। আইসিইউ-এ ৫১৬ নম্বর বেডে রাখা হয়েছে তাঁকে। উডল্যান্ডস হাসপাতাল সূত্রে খবর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের হৃৎপিণ্ডে তিনটি ব্লক পাওয়া গিয়েছে। অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির পরে দু’টি ব্লক দূর করতে স্টেন্ট বসানো হয়েছে। আরেকটি ব্লকের ক্ষেত্রে চিকিৎসা পদ্ধতি কী হবে সে বিষয়ে পরবর্তী ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে  তাঁর করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে বলেই খবর।

মহারাজকে দেখতে এদিন সন্ধে ৬টা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পৌঁছন উডল্যান্ডসে। সৌরভকে দেখে বেরোনোর সময় তিনি বলেন, “ও নাকি কখনও টেস্ট করায় না। ও এত বড় একটা জায়গায়, অথচ টেস্ট করায় না সে কথা আমি তো জানতামই না। আমি অভিষেক ডালমিয়াকে বললাম, তোমরা যে কোনও বড় খেলার আগে টেস্ট করিয়ে নাও। সৌরভের আজ ঘটনাটা না ঘটলে তো জানতেই পারতাম না। ওর মতো একটা বাচ্চা ছেলের এরকম সমস্যা হবে ভাবতেই পারছি না।”

উডল্যান্ডস হাসপাতালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এর আগে সাড়ে পাঁচটা নাগাদ হাসপাতালে যান রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। সৌরভকে দেখে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে বলেন, “ঘরে ঢোকার মুখে যে চিন্তাটা ছিল, ঘরে ঢুকে দাদাকে ওঁর চিরাচরিত রূপে দেখে এখন আমি আশ্বস্ত হয়েছি। দাদাকে হাসতে দেখে ভাল লাগল।” এর আগে বাম নেতা সুজন চক্রবর্তীও হাসপাতালে যান। বেরিয়ে বলেন, “দাদা কখনো হারতে পারেন না। আমার সঙ্গে কথা হয়েছে, পরিবারের সঙ্গেও কথা বলেছি। চিকিৎসায় দ্রুত সাড়া দিচ্ছেন। আমাকে জিজ্ঞাসা করেছেন, সুজনদা কেমন আছেন। বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্রও শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিয়েছেন।” রবিবার সৌরভের সঙ্গে দেখা করতে আসছেন সৌরভ ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত প্রাক্তন মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। তিনি এদিন জানান, “সৌরভ অসুস্থ, আমি ভাবতেই পারছি না। ৩০ তারিখ ওর বাড়িতে কত কথাই না হয়েছিল। কাল রাত ১০টায় ফোনেও কথা হয়। একবারের জন্যেও বুঝিনি ওর তিনটি ব্লক আছে। শিলিগুড়ি থেকে যতটুকু খবর পাচ্ছি ওর একটা স্ট্রেইন বসানো হয়েছে। বাকি বিষয়ে ডাক্তাররা দেখছেন। এক বছর আগে আমারও একটি স্ট্রেইন বসানো হয়েছিল। সৌরভ আমাকে দেখতে এসে অনেক সাহস দিয়েছিল। আমিও ওকে সাহস দিচ্ছি। দিন দুয়েকের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আমরা সবাই উদ্বিগ্ন। এখন একটাই কামনা, ওর দ্রুত সুস্থতা। কাল কলকাতা যাচ্ছি। একবার হাসপাতালে যাব ওর খোঁজ নিতে।”

হাসপাতালের বাইরে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।

জানা গিয়েছে, শনিবার সকালে বাড়িতে জিম করার সময় বুকে অস্বস্তি বোধ করছিলেন বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। দুপুর পৌনে ১টা নাগাদ তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়কের অসুস্থতার খবরে উদ্বেগ বেড়েছে ভক্তদের মধ্যে। মহারাজের দ্রুত সুস্থতা কামনা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় উপচে পড়ছে প্রার্থনা বার্তা। টুইটারে তাঁর আরোগ্য কামনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়, কৈলাস বিজয়বর্গীয় থেকে বিরাট কোহলি, বীরেন্দ্র শেহওয়াগ, শিখর ধাওয়ানরা। খবর পেয়েই হাসপাতালে পৌঁছন লক্ষ্মীরতন শুক্লা। পরে বেরিয়ে তিনি বলেন, “বাংলার বাঘ, ভারতের বাঘ, বিশ্বের বাঘ ভাল আছেন।” দুপুর তিনটে নাগাদ বাবার সঙ্গে দেখা করতে হাসপাতালে পৌঁছন সানা গঙ্গোপাধ্যায়।

হাসপাতালে সানা গঙ্গোপাধ্যায়।

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মেডিক্যাল বুলেটিন পর্যালোচনা করে প্রবীণ কার্ডিওলজিস্ট রবীন চক্রবর্তী জানান, শরীরচর্চা করার সময় হৃৎপিণ্ডের নীচের অংশে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়েছে। চলতি ভাষায় যা হার্ট অ্যাটাক নামে পরিচিত। এখন রাইট করোনারি আর্টারি নাকি লেফট সার্কামফ্লেক্স করোনারি আক্রান্ত হয়েছে তা অ্যাঞ্জিওগ্রাফি করে জানা যাবে। যেহেতু হার্ট অ্যাটাক তাই অ্যাঞ্জিওগ্রাফি চলাকালীনই প্রাইমারি অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করতে হয়েছে। তাতে হৃৎপিণ্ডের যে সকল মাংসপেশী দুর্বল হয়েছে তা দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে। তবে চিন্তার কোন‌ও কারণ নেই। মাসখানেকের মধ্যে তিনি পুরো সুস্থ হয়ে যাবেন।

কার্ডিওলজিস্ট সব্যসাচী পাল বলেন, “ওঁর ধমনীগত ব্লক হ‌ওয়ার সম্ভাবনা বেশি‌। কোন ধমনী কতখানি ব্লক হয়েছে তা অ্যাঞ্জিওগ্রাফির রিপোর্ট এলে স্পষ্ট হবে। হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে নব্ব‌ই শতাংশ ব্লক ধরা পড়লে যে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক করা হয় তাকে বলে প্রাইমারি অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি‌। এক‌ই সঙ্গে জমাট বাঁধা রক্ত দূর করার জন্য স্টেন্ট বসানো হয়।”