কলকাতা: বেহালায় জোড়া খুনে পরতে পরতে রহস্য। মঙ্গলবার সকাল থেকে দফায় দফায় নিহতের স্বামী তপন মণ্ডলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। এরপরই বেলা বাড়তে লালবাজারে নিয়ে যাওয়া হয় নিহত সুস্মিতা মণ্ডলের স্বামী তপন মণ্ডল-সহ আরও তিনজনকে। এরই মধ্যে বিশেষ সূত্র মারফৎ জানা যাচ্ছে, তপন মণ্ডলের আংটিতে রক্তের চিহ্ন পেয়েছে পুলিশ। যা পরীক্ষার জন্য ফরেন্সিক ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে। একই সঙ্গে পুলিশ মনে করছে এই ঘটনার কারিগর পেশাদার কোনও খুনি নয়। এই ঘটনায় যে জড়িত সে ডানহাতি বলেও মনে করছে পুলিশ। মঙ্গলবার বিকেলেই এই ঘটনার তদন্ত ভার ন্যস্ত হয়েছে লালবাজারের গোয়েন্দা শাখার হাতে।
পুলিশ সূত্রে খবর, প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান কোনও পেশাদার খুনি এই ঘটনায় জড়িত নয়। ইতিমধ্যেই ফরেনসিক টিমের হাতে যে সমস্ত তথ্য উঠে এসেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যে আবাসনে এই ঘটনা, সেখানকার ড্রেনেজ পাইপলাইন থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছেন ফরেনসিক টিমের সদস্যরা। এমনও সন্দেহ করা হচ্ছে বলে সূত্রের খবর, যে এই ঘটনা ঘটিয়েছে, সে নিজের ‘মিশন’ সফল করার পর প্রমাণ লোপাটের জন্য বাথরুমে স্নান করে। সে চেয়েছে শরীর থেকে রক্তের চিহ্ন লোপাট করতে। এমনও মনে করা হচ্ছে, এই ঘটনায় প্রথমে সুস্মিতা মণ্ডলকে খুন করা হয়েছে। তার পর ছেলে তমোজিৎ মণ্ডল কোপানো হয়েছে।
এখনও অবধি পুলিশি প্রশ্নের মুখে তপন মণ্ডল জানিয়েছেন, এদিন সন্ধ্যায় বাড়ির বাইরে ছিলেন তিনি। দীর্ঘক্ষণ স্ত্রী সুস্মিতা মণ্ডলের মোবাইল ফোনের সুইচ বন্ধ ছিল, সদর দরজার তালাও বন্ধ ছিল। স্ত্রীর সঙ্গে কোনও ভাবেই যোগাযোগ করতে না পেরে প্রতিবেশীকে জানান। তাঁদের সাহায্যেই বাড়িতে ঢোকেন। তপন মণ্ডল পুলিশের প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছেন, ঘরের দরজা ভেজানো ছিল। অথচ নিহতের ছেলের গৃহশিক্ষক দাবি করেছেন, ভিতর থেকে বন্ধ ছিল ফ্ল্যাটের দরজা। পরস্পর বিরোধী একটি বয়ান সামনে উঠে এসেছে।
পর্ণশ্রী থানায় দাঁড়িয়ে সুস্মিতা মণ্ডলের বাবার দাবি, “আমি তো বুঝতেই পারছি না কী বলব! জামাইয়ের সম্পর্কে বলার মতো তো কিছু নেই। এখন পুলিশ কী ভাবছে বুঝতে পারছি না। জামাইকে লালবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। ফ্ল্যাটের বাকি সদস্যদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।” সুস্মিতার বাবা জানান, সোমবার রাত ৮টা নাগাদ তাঁকে ফোন করেন জামাই তপন মণ্ডল। জামাই জানতে চান, মেয়ে বাপের বাড়িতে গিয়েছে কি না। এরপরই এই ঘটনা। বাইরের কেউ কোনও ভাবে যুক্ত রয়েছে বলেই সন্দেহ সুস্মিতার বাবার।
লালবাজারের তদন্তকারীরা সোমবার রাতভর ঘটনাস্থলে তদন্ত করে। সেখান থেকে বেশ কিছু নমুনা সংগ্রহ করেছে। তাতেই মনে করা হচ্ছে, এই ঘটনায় একজন আততায়ীই ছিল এবং সে ডানহাতি। অর্থাৎ খুনের ঘটনা ডান হাতেই ঘটানো হয়েছে। কারণ, গলার বাঁ দিক থেকে ছুরি চালানো হয়েছে, যা ডান দিক অবধি ক্ষত তৈরি করেছে। একইসঙ্গে পুলিশের অনুমান এই আততায়ী পেশাদার নয়। কারণ, একাধিক বার ছুরি দিয়ে কোপানোর নমুনা মিলেছে।