কলকাতা: ভবানীপুরের লি রোডের ব্যবসায়ী খুনের ঘটনায় পুলিশের হাতে নয়া তথ্য। ব্যবসায়ীর ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এখন পুলিশের হাতে। তাতেই উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। শরীরের একাধিক জায়গায় আঁচড়ের দাগ ছিল নিহত ব্যবসায়ী শান্তিলাল বৈদ্যের। কীভাবে ওই দাগ হল, তা জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে, তার দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে তাঁকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। পাশাপাশি ব্যবসায়ীর শরীরের একাধিক জায়গায় আঁচড়ের চিহ্ন রয়েছে। সেই আঁচড়ের চিহ্ন দেখে তদন্তকারীরা মনে করছেন, খুনের আগে অভিযুক্তের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়েছিল বৃদ্ধের। গেস্ট রুমের যে ঘর থেকে ব্যবসায়ীর দেহ উদ্ধার হয়েছে, সেখানে গিয়ে দেখা গিয়েছে চিনামাটির সামগ্রী ভাঙা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ঘরে ধস্তাধস্তিরও প্রমাণ মিলেছে। নিজেকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা যে ব্যবসায়ী করেছিলেন, সেটা একপ্রকার নিশ্চিত তদন্তকারীরা।
খুনের পর আততায়ী হলুদ ট্যাক্সি ব্যবহার করে পালানোর চেষ্টা করেছিল। সেই ট্যাক্সিটিকেও চিহ্নিত করেছে পুলিশ। সেই ট্যাক্সির চালকের সঙ্গে কথা বলেছেন তদন্তকারীরা। চালক দাবি করেছেন, দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় ঘোরার পর ওই ব্যক্তিকে হাওড়ার দিকে ছেড়ে আসেন তিনি। সেখান থেকে আততায়ী কোথায় গেল, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
তদন্তে উঠে এসেছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। গেস্ট রুমের ঘরে একটি খাটের ওপর কম্বল খোলা অবস্থায় ছিল। সেই কম্বলের ওপরে জৈবিক তরলের দাগ পাওয়া গিয়েছে। সেটিকে ডিএনএ টেস্টের জন্য পাঠানো হয়েছে। ঘর থেকে মিলেছে নারকেল তেল, লুব্রিক্যান্ট। আরও একটি বিষয়, ওই যুবকের সঙ্গে ৯ ফেব্রুয়ারিও একই গেস্ট হাউসে ওঠেছিলেন ব্যবসায়ী। ওই ব্যবসায়ী একাধিকবার ওই গেস্ট হাউসে এসেছিলেন বলে তথ্য প্রমাণ পেয়েছেন তদন্তকারীরা। গেস্ট হাউস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। সিসিটিভি ফুটেজও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ইতিমধ্যে পুলিশের হাতে এসেছে আরও বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর তথ্য। শান্তিলালের বেশ কিছু ঘনিষ্ঠ ছবি ও ভিডিয়ো ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি। এক্ষেত্রে পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ ও পরিবারের সদস্যদের বয়ানের ভিত্তিতে ঘটনার একটি পর্যায়ক্রম তৈরি করেছে।
সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে পান খেতে যাবে বলে বাড়ির নীচে নামেন শান্তিলাল বৈদ্য। সন্ধ্যা ৭ টা ৫ মিনিটে বাড়ির ল্যান্ডলাইনে ফোন আসে। বিবেক কুমার নামে তাঁর এক ভাইপো ফোন ধরেন। ফোনে ২১ মিনিটের কথাবার্তা হয়। সেখানে ২৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণের দাবি করা হয়। শান্তিলালের বেশ কিছু ঘনিষ্ঠ ছবি ও ভিডিয়ো ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দেয় অভিযুক্ত। রাত ১০ টা নাগাদ ভিক্টোরিয়া সাউথ গেটে মুক্তিপণ নিয়ে আসতে নির্দেশ ফোনে। অপহরণকারী ভিক্টোরিয়া সাউথ গেটে পৌঁছয় রাত ১০টা ১৫ মিনিটে। পরিবারের দাবি, টাকা ভর্তি ব্যাগটা নেওয়ার পর শান্তিলাল বৈদ্যের ফোন তাঁদের মুখের ওপর ছুড়ে দিয়ে চলে যায় অপহরণকারী।
তদন্তকারীরা মনে করছেন, খুনী পেশাদার নয়। অন্তত ফিঙ্গার প্রিন্ট দেখে তেমনটাই মনে করছেন তদন্তাকারীরা। ভিক্টোরিয়া সাউথ গেটে ট্যাক্সি নিয়ে টাকা নিতে গিয়েছিল অপহরণকারী। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ওই ট্যাক্সিটিকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা।
আরও পড়ুন: Kolkata Bus Accident: ব্রিজের রেলিংয়ে ধাক্কা মেরে উল্টে গেল যাত্রীবোঝাই বাস, পার্কসার্কাসে দুর্ঘটনা