কলকাতা: স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর (Narendra Modi) ঘোষিত ভার্চুয়াল বৈঠকে থাকছেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যেপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বুধবারের বৈঠকে তিনি ‘শ্রোতা’ হয়ে হাজির থাকলেও বৃহস্পতিবার নবান্নের সভাঘরে স্পষ্টই জানান, এরপরের বৈঠকে থাকছেন না মমতা। বলেন, “আমার সঙ্গে অত রাজনীতি করা উচিত নয়”। মুখ্যমন্ত্রীর তীব্র সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে কটাক্ষ হানলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)।
ঘটনায় দিলীপের মন্তব্য, “এটা তো কোনও নতুন বিষয় নয়। দিদির টাকার দরকার নেই এখন। টাকার প্রয়োজন হলেই ঠিক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন। এ আর নতুন কী! উন্নয়নের জন্য ডাকা হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মোদীর সঙ্গে দেখা করেন না। বিপদে পড়লেই মোদীর শরণাপন্ন হন মমতা। সব পাবলিসিটি স্টান্ট!”
প্রসঙ্গত, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে বৈঠকে বৃহস্পতিবার রাজ্যের তরফে নবান্ন সভাঘরে বৈঠক ডাকা হয়। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জয় গোস্বামী, সুরঞ্জন দাস, নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি, অজয় চক্রবর্তী, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু-সহ প্রমুখরা। ৭৫ বছরের স্বাধীনতা দিবস পালন নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি, মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন, নেতাজি সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য ও নথি যা রাজ্যের কাছে ছিল তা প্রকাশ করা হয়েছে, কিন্তু কেন্দ্রের তরফে এখনও এমন কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।
এই প্রসঙ্গেই বুধবার কেন্দ্রের ডাকা অমৃতমহোৎসবের বৈঠকের কথাও ওঠে। মমতার মন্তব্য, ‘‘ভারত সরকার যা করছে করুক, তাতে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। আমরা আমাদের মতো করব। ঋষি অরবিন্দের জন্য ওই একই কমিটি। আমাদের কমিটির বৈঠক হয়ে গিয়েছে। সব সিদ্ধান্তই নিয়ে নেওয়া হয়েছে। আমার নতুন করে বলার কিছু নেই। কালকে বলতে দিলে আমি বলতাম। কিন্তু আগামিকাল যে বৈঠকটি আছে, সেটা শুধু একজনের উপরে। যেটা নিয়ে আমরা ইতিমধ্যেই আলোচনা সেরে ফেলেছি। সুতরাং আগামিকাল আমি থাকছি না। প্রতিদিন হয় না।’’ শেষে তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘আমার সঙ্গে অত রাজনীতি করা উচিত নয়।’’
প্রসঙ্গত, শুক্রবার স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের পরিকল্পনার জন্য আরও একটি বৈঠক ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই বৈঠকেই আপাতত থাকবেন না মমতা এমনটা নিজেই সাফ জানান তিনি। বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল প্রস্তুতি বৈঠকে বক্তাদের মধ্যে ছিলেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, অশোক গেহলট, জগম্মোহন রেড্ডি, এইচ ডি দেবগৌড়া, শরদ পওয়ার, অমরিন্দর সিং, লতা মঙ্গেশকর-সহ আরও অনেকে। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে তৈরি প্রস্তুতি কমিটির অন্যতম সদস্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কিন্তু বুধবার বলার সুযোগ পাননি তিনি। তাই জানিয়ে দেন, শুক্রবারের বৈঠকে আর থাকছেন না তিনি। একইসঙ্গে ঋষি অরবিন্দকে নিয়ে রাজ্য সরকার কী কী করতে উদ্যোগী হয়েছে,তা সম্পূর্ণ বিবরণ নথিভুক্ত করে কেন্দ্রের নজরে আনতে মুখ্যসচিব হরেকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে নির্দেশ দেন মমতা।
উল্লেখ্য, মোদী-মমতা বৈঠকে এই সংঘাত প্রথম নয়। এর আগে নির্বাচন আবহেও প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে দেখা যায়নি মুখ্যমন্ত্রীকে। পরবর্তীতে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কেবল ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ সেরেই বেরিয়ে এসেছিলেন মমতা। এমনকী, উপস্থিত ছিলেন না তৎকালীন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। যা নিয়ে বিস্তর জলঘোলাও হয়। এরপর ফের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর অনুপস্থিতি নতুন কোনও রাজনৈতিক সংঘাতের মোড় নিতে পারে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ।