
কলকাতা: বাংলায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী। তার কয়েকঘণ্টা আগে ভিনরাজ্যে পাড়ি দিলেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। শুক্রবার দমদমে সেন্ট্রাল জেলের মাঠে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভায় ডাক পাননি তিনি। তার কয়েকঘণ্টা আগে দিলীপের বাংলা ছেড়ে অন্য রাজ্যে পাড়ি দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এদিন কলকাতা বিমানবন্দরে এই নিয়ে প্রশ্নের মুখেও পড়তে হল তাঁকে। ‘অভিমান’ থেকেই কি প্রধানমন্ত্রীর বাংলা সফরের দিন অন্য রাজ্যে যাচ্ছেন তিনি? বেঙ্গালুরু উড়ে যাওয়ার আগে উত্তর দিয়ে গেলেন বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি? কী বললেন তিনি?
মাসখানেক আগে দুর্গাপুরে সভা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। গত ১৮ জুলাই ওই সভার দিন সকালেই দিল্লি উড়ে গিয়েছিলেন দিলীপ। আজ ফের রাজ্যে আসছেন মোদী। আবার মোদীর সভার কয়েক ঘণ্টা আগে এবারও ভিনরাজ্যে পাড়ি দিলেন রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি। প্রশ্ন উঠছে, বাংলায় প্রধানমন্ত্রীর সভার দিনই কেন ভিনরাজ্যে পাড়ি দেন দিলীপ? এদিন বেঙ্গালুরু উড়ে যাওয়ার আগে এই নিয়ে প্রশ্নের জবাবে দিলীপ বলেন, “আমি বেঙ্গালুরু যাচ্ছি। শ্রী শ্রী রবিশঙ্করজির সঙ্গে দেখা করতে। একটা মিটিং পেন্ডিং ছিল। ওরা চিঠি দিয়ে দেখা করতে বলেছে। কাল ফিরব।”
কিন্তু, আজই কেন? আজ শহরে যখন মোদী আসছেন। এই নিয়ে প্রশ্নের জবাবে দিলীপের জবাব, “আজকেই মিটিংয়ের ডেট। উনি চিঠি দিয়ে কনফার্ম করেছেন। শ্রী শ্রী রবিশঙ্করজি থাকবেন। তাছাড়া আমার আজ কলকাতায় কোনও কাজ নেই।”
তাহলে কি অভিমান হয়েছে দিলীপ ঘোষের?
নিজের মনের কথা বলতে গিয়ে কখনও লুকোছাপা করেননি দিলীপ। এদিনও বললেন, “দিলীপ ঘোষ কোনওদিন অভিমান করেনি। ছোটবেলা থেকে আজ পর্যন্ত কাজ করেছি। লোকের অভিমান ভাঙিয়েছি।”
দলের প্রতি দিলীপের অবদান কি ভুলে যাওয়া হচ্ছে?
দিলীপ বলেন, “আমার মতো হাজার হাজার কর্মী পার্টিতে আছেন। পার্টি তাঁদের নিয়ে ভাবে। যোগ্য মনে করলে তাঁদের কাজ দেয়। পার্টিতে আমার কোনও কাজ নেই। প্রধানমন্ত্রী আসছেন। ভাষণ দেবেন। সে তো আমি মোবাইলে শুনে নিতে পারি। উনি তো আসতেই থাকবেন। ভাষণ শোনা তো কোনও কাজ নয়। অন্য কাজ যখন পার্টি দেবে, সেই কাজে লেগে যাব।” তাঁর অনুপস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কী ভাববেন এই প্রশ্নের উত্তরে দিলীপ বলেন, “প্রধানমন্ত্রী কী বুঝবেন সেটা প্রধানমন্ত্রীর উপর ছেড়ে দিন।”
আর কয়েকমাস পর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। দিলীপ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কি না, তা নিয়ে জল্পনা বাড়ছে। নিজের পুরনো কেন্দ্র খড়্গপুর সদরে তিনি প্রার্থী হতে চাইবেন কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। এই নিয়ে এদিন দিলীপ বলেন, “পার্টি ৩ বার মনে করেছিল আমার ভোটে লড়া উচিত। এর মধ্যে দু’বার আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল কোথায় লড়তে চাই। দু’বার আমি নাম বলেছি। জিতেছি। তৃতীয় বার আমাকে কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করেনি। লড়তে বলেছিল। লড়েছি। জিতিনি। পার্টির সিদ্ধান্ত। পার্টি বুঝবে। পার্টি যদি বলে আমার ইলেকশন লড়ার দরকার নেই, তাহলে আমি অন্য কাজ করব। আমি ওসব নিয়ে ভাবি না। পশ্চিমবঙ্গে অনাচার চলছে। মানুষ পরিবর্তন চাইছে। বিজেপিকে আমরা দাঁড় করিয়েছি। আমরা যোগ্য। পরিশ্রম করে মানুষের আশীর্বাদ চেয়ে নেব।”
ভিনরাজ্যে বাংলাভাষীদের হেনস্থা ইস্যুতে সরব হয়েছে তৃণমূল। রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, ছাব্বিশের নির্বাচনে এই ইস্যুকে হাতিয়ার করতে পারে রাজ্যের শাসকদল। এদিন বেঙ্গালুরু উড়ে যাওয়ার আগে দিলীপ বলেন, “আঞ্চলিক পার্টিগুলোর আদর্শ নীতি সংবিধান কিছুই থাকে না। কিছু লোকাল ইস্যু নিয়ে দলগুলো তৈরি হয়। লোকাল ইস্যু নিয়েই ভোটে দাঁড়ায়। প্রতিবার নতুন ইস্যু আনে। সমাজ বা দেশ নিয়ে ভাবে না। রাজনীতির চিন্তা করে। দেশ ভাঙল কী রইল, এইসব কিছুই চিন্তা করে না। তৃণমূলের মতো পার্টি যতদিন থাকবে, এই আঞ্চলিকতার রাজনীতি করবে। বাংলার মানুষ চিন্তাশীল এবং দূরদর্শী। তাই এখানেই ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। আমরা একসময় খেলাধুলো, পড়াশোনা সবকিছুতে এগিয়ে ছিলাম। এখনও প্রতিভা আছে। যারা বাইরে গিয়ে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছেন। বাংলার মানুষ বুঝতে পেরেছে পরিবর্তন হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।”