
কলকাতা: বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের দিঘা জগন্নাথ মন্দির দর্শন নিয়ে তুঙ্গে বিতর্ক। দলবদলের যেমন জল্পনা তৈরি হয়েছে, তেমনই আবার প্রশ্ন উঠেছে তাঁর মন্দিরে যাওয়া নিয়েও। তবে দিলীপ ঘোষ বলেছেন, “ভগবানকে তর্কের উপরে রাখা উচিত”। বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন সভাপতির জগন্নাথ দর্শন নিয়ে যখন বিতর্ক তুঙ্গে, তখনই উঠে এসেছে প্রয়াত সিপিআইএম নেতা সুভাষ চক্রবর্তীর তারাপীঠ দর্শনের প্রসঙ্গও।
বাম নীতি, চিন্তাধারা ভেঙে সুভাষ চক্রবর্তী তারাপীঠ গিয়েছিলেন, পুজো দিয়েছিলেন মন্দিরে। দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে এলেন দিলীপ ঘোষ। এই নিয়ে বিতর্কের জবাব দিয়ে দিলীপ ঘোষ বলেছেন, “যারা স্বতন্ত্র, স্বাভিমানী রাজনীতি করে, পার্টি তাদের দেখেই চলে। সুভাষ চক্রবর্তী বামফ্রন্টকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন, তিনি লক্ষ লক্ষ লোক নিয়ে আসতেন, নেতারা ব্রিগেডে ভাষণ দিতেন। কারোর লোক আনার ক্ষমতা ছিল না। হিংসা থাকবেই পার্টিতে। পার্টির কর্মীরা কার উপরে ভরসা করেন, কে লড়তে শিখিয়েছে, কে জিততে শিখিয়েছে, এটা দেখতে হবে। কারোর সঙ্গে কথা বললেই যদি পার্টি থেকে চলে যাওয়া হয়, ওই নীতিকে রাজনীতিকভাবে ঘৃণা করি।”
সুভাষ চক্রবর্তীর সঙ্গে দিলীপ ঘোষের তুলনা উঠতেই বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথাগত রায় বলেন, “সুভাষ চক্রবর্তীর মতো ওত বড় নেতা নন দিলীপ ঘোষ। সুভাষ চক্রবর্তী হতে গেলে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। সুভাষ চক্রবর্তীর ক্ষমতা ছিল বিজেপির মধ্যেও প্রভাব তৈরি করার।”
এদিকে, দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “দিলীপ ঘোষ কীভাবে চলবেন, তা নিয়ে আমার কোনও মাথাব্যাথা নেই। তার দলের নেতারাই প্রশ্ন তুলছেন। সেটা নিয়েও আমার দরকার নেই। কিন্তু সেই প্রশ্নের উত্তর নিজের কাছে নেই বলে অথবা ঢাল হিসাবে সুভাষ চক্রবর্তীকে ব্যবহার করা, এটায় বোঝা যাচ্ছে যে ওর নিজের কাছে যুক্তিটা বড় কম। এতদিন তো বলেননি। আজ ঢাল হিসাবে ব্যবহার করার জন্য সুভাষ চক্রবর্তীর নাম করছেন। এটা ওর সুবিধাবাদী মনোভাবের প্রতিফলন। নাহলে আগেও বলতেন। অথবা এটা ওর অস্বস্তি কাটানোর চেষ্টা।”
দিলীপ ঘোষ কী সুভাষ চক্রবর্তীর স্তরের নেতা? এই প্রশ্নের উত্তরে সুজন চক্রবর্তী বলেন, “সুভাষ চক্রবর্তী প্রয়াত হয়েছেন ১৬ বছর আগে। তখন রাজনীতিতে দিলীপ ঘোষের নাম কেউ শোনেনি। ফলে উনি এখন নিজের তুলনা করার জন্য সুভাষ চক্রবর্তীর সঙ্গে তুলনা করছেন। ওঁর মনে হয়েছে, ওঁ বলেছেন।”
প্রসঙ্গত, প্রয়াত বাম নেতা সুভাষ চক্রবর্তী বরাবরই দাপুটে নেতা ছিলেন। তাঁকে নিয়ে বিতর্কও কম ছিল না। কমিউনিস্টরা ঈশ্বরে বিশ্বাসী নয়। কিন্তু সুভাষ চক্রবর্তী গিয়েছিলেন তারাপীঠে। পুজোও দিয়েছিলেন। এই নিয়ে যখন বিতর্ক হয়, তখন তিনি বলেছিলেন, “আমি প্রথমে হিন্দু, তারপর ব্রাহ্মণ, তারপরে পার্টির”।
তাঁর এই মন্তব্য নিয়ে কম বিতর্কও হয়নি। জ্যোতি বসু বলেছিলেন “সুভাষের মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে”। জবাবে সুভাষ চক্রবর্তী বলেছিলেন, “আমি যখন পাগল, আমার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে, তা হলে আমাকে দলে রেখেছে কেন”?