কলকাতা : ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকতেই পারে, তবে দলের বাইরে জানানোটা নিয়ম নয়। বিজেপির হাওড়া সদর সভাপতির মন্তব্যের পর এমনটাই বলেছিলেন বিজেপি সর্ব ভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ। একটি ভিডিয়োতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছিলেন বিজেপির হাওড়া সদর সভাপতি সুরজিৎ সাহা। একদিকে বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে কথা বলার এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। পাশাপাশি, নারদ-কাণ্ডের কথা মনে করিয়ে শুভেন্দুকে আক্রমণ করতে ছাড়েননি তিনি। আর সেই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সুরজিৎ সাহাকে বহিষ্কার করল বঙ্গ বিজেপি।
আজ বুধবার সকালেই ভিডিয়োটি প্রকাশ্যে আসে। এ দিন বিকেলেই তাঁকে বহিষ্কার করেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। যদিও এ দিন বহিষ্কারের পরও কোনও অনুতাপ নেই সুরজিৎ সাহার। বিজেপি নেতার দাবি, এটা যদি অন্যায় হয়, তাহলে এমন অন্যায় তিনি বারবার করতে রাজি। বিজেপিতে তৃণমূলিকরণ হচ্ছে বলেও এ দিন অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি।
এ দিন বহিষ্কারের খবর শোনার পর তিনি বলেন, ‘আমি কোনও দল বিরোধী কাজ করিনি। আমার সামনে আমার দলের কর্মীদের অপমান করা হয়েছে। আমি শুধু প্রতিবাদ করেছি। এটা যদি আমার অন্যায় হয়, তাহলে এমন অন্যায় দলের প্রত্যেক কর্মীর করা উচিৎ।’ পাশাপাশি তাঁর দাবি, তিনি একজন ইলেকটেড প্রেসিডেন্ট। তাই তাঁকে এ ভাবে বহিষ্কার করা যায় না। আগে শোকজ করতে হয়। কারণ জানাতে হয়।
সুরজিৎ এ দিন আরও জানান, জন্মলগ্ন থেকে তিনি বিজেপি করছেন, তাই তাঁকে বহিষ্কার করা হলেও মন থেকে মুছে ফেলা যাবে না। একই সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, সেই সব রাজনীতিকদের সঙ্গে কাজ করতে চাই না, যারা সময়ে সময়ে দল বদল করে।’ দলে শুভেন্দুর গুরুত্ব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কতটা গুরুত্ব পাচ্ছে সেটা জানা নেই। তবে, বিজেপিতে তৃণমূলিকরণ হচ্ছে।’
মঙ্গলবার বৈঠকে বসেছিল রাজ্য বিজেপি। হাওড়া ও কলকাতা পুরভোটের জন্য কমিটি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে সেই বৈঠকে। মঙ্গলবারের ওই বৈঠক থেকেই বিতর্কের সূত্রপাত।
সূত্রের খবর, এ দিনের বৈঠকে শুভেন্দু অধিকারী নাকি হাওড়ার কয়েকজন বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে তৃণমূলের সঙ্গে গোপন আঁতাতের অভিযোগ তুলেছেন। এরপর বুধবার প্রকাশ্যে এসেছে হাওড়া জেলার বিজেপি সভাপতি সুরজিৎ সাহার সেই বিস্ফোরক ভিডিয়ো। যেখানে তিনি সরাসরি শুভেন্দু অধিকারীর নাম করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ দিন তিনি বলেন, তৃণমূলের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ শুভেন্দুকে প্রমাণ করতে হবে জনসমক্ষে, নাহলে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
নারদ-কাণ্ড নিয়েও শুভেন্দুকে বিঁধতে ছাড়েননি সুরজিৎ সাহা। তিনি বলেন, ‘প্রমাণ করতে হবে আপনি কত বড় সৎ। আপনাকে তো নারদে হাতে করে টাকা নিতে দেখা গিয়েছিল। ভারতীয় জনতা পার্টির কাউকে টাকা নিতে দেখা যায়নি।’ পুরভোটের আগে এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বিজেপির জন্য বড় ধাক্কা বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তাই সম্ভবত তড়িঘড়ি বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিতে দেখা গেল বিজেপিকে।
আরও পড়ুন: ‘মমতা কিছু বললে উত্তর দেব, অন্যরা ছোটখাটো’, কুণালকে পাল্টা শুভেন্দু অধিকারী