
নয়াদিল্লি ও কলকাতা: অগস্টেই বাংলায় শুরু হতে পারে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ। এই নিয়ে গুঞ্জন ক্রমশ বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজে যুক্ত বুথ লেভেল অফিসারদের (BLO) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলে রাজ্যসভায় সরব হলেন শমীক ভট্টাচার্য। তাঁর অভিযোগ, জাতীয় নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের কাজে হুমকি দিয়ে রাজ্যে সাংবিধানিক সংকট তৈরি করা হচ্ছে। এই মর্মে রাজ্যসভায় মুলতবি প্রস্তাব জমা দেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি তথা রাজ্যসভার সাংসদ শমীক। জরুরি ভিত্তিতে রাজ্যসভায় আলোচনা চেয়ে নোটিস দেন তিনি।
রাজ্যসভায় জমা দেওয়া নোটিসে শমীক অভিযোগ করেছেন, প্রকাশ্যে নির্বাচন কমিশনের কর্তৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, আধিকারিকরা শুধু রাজ্য সরকারের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য। জাতীয় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মানতে বাধ্য নয়। এটা নির্বাচন কমিশনের মতো স্বশাসিত সংস্থার সাংবিধানিক স্বায়ত্বশাসনের উপর সরাসরি আঘাত বলে নোটিসে অভিযোগ করেন তিনি।
স্বচ্ছ ভোটার তালিকা তৈরির এভাবে বিরোধিতা যথেষ্ট সন্দেহজনক বলে শমীক মন্তব্য করেন। অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের ভোটব্যাঙ্ক নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে তাঁর অভিযোগ। তাঁর বক্তব্য, এটা শুধু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বিপদে ফেলছে না। জাতীয় নিরাপত্তাকে ক্ষতি করছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের বিশ্বাসের উপর প্রভাব ফেলছে।
দ্রুত এই নিয়ে রাজ্যসভায় আলোচনার দাবি জানান তিনি। একইসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, বাংলায় ভুয়ো ভোটার নিয়ে তদন্ত করা দরকার। স্বচ্ছ ভোটার তালিকা নিশ্চিত করা দরকার। পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকের স্বায়ত্বশাসন রক্ষা করা দরকার।
প্রসঙ্গত, দিন চারেক আগে বীরভূমের বোলপুরে প্রশাসনিক সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিএলও-দের উদ্দেশে বলেছিলেন, ““ভোটার লিস্টটা দেখবেন, মানুষকে যেন হেনস্থা করা না হয়।” রাজ্য প্রশাসনকে যাতে সবটা জানানো হয়, সেই বার্তা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “কোনও নির্দেশ এলে মুখ্যসচিবকে জানাবেন। আমাদের না জানিয়ে হুটপাট সিদ্ধান্ত নিয়ে নিচ্ছেন। কখনও এই জিনিস হয়নি। কখনও এই জিনিস হয়নি। ভয় দেখালেই আপনারা ভয় পাবেন! তাহলে ঘরে বসে থাকুন।” এছাড়া জেলাশাসকদের বার্তা দিয়ে তিনি বলেছিলেন, “পশ্চিমবঙ্গ থেকে এক হাজার লোককে ট্রেনিংয়ের জন্য দিল্লি নিয়ে গিয়েছে। আমি জানতামই না। অনেক সময় ডিএম খেয়াল রাখছেন না।”
সেইসময় বিজেপির প্রাক্তন সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, “প্রত্যেক রাজ্যের বিএলও-দের ডাকতে পারে, সেই অধিকার রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। পশ্চিমবঙ্গ আলাদা নয়। কেন মুখ্যমন্ত্রী বিএলও-দের হুমকি দেবেন?”
তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ এই নিয়ে বলেন, “এই যে অন্য রাজ্যের ভোটার এখানে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এটা নিয়ে প্রথম সরব কে হয়েছেন? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হয়েছেন। কার দল কলকাতা ও দিল্লি নির্বাচন কমিশনের কাছে ডেপুটেশন দিয়েছে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেস দিয়েছে। অতীতেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ভোটারদের সচিত্র পরিচয়পত্র দিতে হবে, ভুয়ো ভোটার বাতিল করতে হবে। আজও একইভাবে তিনি বলছেন, ভোটার তালিকা নিখুঁত রাখতে হবে, বৈধ ভোটার রাখতে হবে, অন্য রাজ্য থেকে ভোটার রাখা যাবে না এবং বৈধ ভোটার কাউকে বাদ দেওয়া যাবে না।”