কলকাতা: ‘বাংলায় গণতন্ত্র থাকবে কিনা এটাই প্রশ্ন।’ সাংবাদিক বৈঠকে (Press Conference) বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন বিজেপির (BJP) সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায় (Mukul Roy)। এদিনের বৈঠকে মুকুল বলেন, ‘হিন্দু বা মুসলিম নয়, বাংলায় গণতন্ত্র থাকবে কিনা এটাই বড় প্রশ্ন। আপনি বিহার যান, ইউপি যান, যেখানেই যান, ভারতের মানুষ জানতে চায় বাংলার কী হবে?’
বিজেপির(BJP) সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার কনভয়ে হামলা নিয়ে সরগরম জাতীয় রাজনীতি। সেই ঘটনার ‘সাক্ষী’ মুকুলের দাবি, বাংলায় কোনও আইন নেই। অবিলম্বে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হওয়া দরকার। প্রসঙ্গত, বাংলায় আইন শৃঙ্খলার অবনতির কথা ধরে বিজেপি (BJP) রাজ্য নেতৃত্ব ইদানীং ঘনঘন ৩৫৬ ধারা দাবি করছে। তবে বাংলা সফরের পর জগৎ প্রকাশ নাড্ডা স্পষ্টই জানিয়েছিলেন, রাষ্ট্রপতি শাসন দিয়ে নয়, গণতান্ত্রিক উপায়েই মমতা সরকারকে পরাস্ত করার বিষয়ে তাঁরা আত্মবিশ্বাসী।
আরও পড়ুন : তিন দিন ধরে দাঁতের যন্ত্রণা, উদাসীন জেল কর্তৃপক্ষ, আদালতে সরব খালিদ
শুক্রবারের সাংবাদিক বৈঠকে মুকুল (Mukul Roy) বলেন, ‘এবারে তৃণমূল ১০০ আসন পাবে কিনা সন্দেহ। আমার তো মনে হয় পাবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘যেভাবে গণহারে সবাই দলত্যাগ করছে, তাতে দলের অস্তিত্বটাই থাকবে কিনা সন্দেহ।’ মুকুলের পাল্টা সাংবাদিক বৈঠক করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারও। তিনি বলেন, ‘যাঁরা মনে করছেন ভারতীয় জনতা পার্টিতে গিয়ে জিতে যাব, তাঁদের বেস্ট অব লাক জানাই। কারণ, বাংলার মানুষ বেইমানদের পছন্দ করে না।’
আরও পড়ুন : মমতা লড়ুক, আমরাও লড়ব, বিজেপি বিরোধিতার প্রতিযোগিতা হোক: দীপঙ্কর ভট্টাচার্য
উল্লেখ্য, শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল ছাড়ার পর ভাঙন আরও স্পষ্ট হচ্ছে তৃণমূলে। একে একে বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, বালির বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়া-সহ অনেকেরই দলত্যাগ নিয়ে জল্পনাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃহস্পতিবারই সমস্ত দলীয় ও প্রশাসনিক পদ ত্যাগ করেছেন আসানসোলের জিতেন্দ্র তিওয়ারি। এদিন তৃণমূলের প্রাথমিক সদস্যপদ ছেড়েছেন ব্যারাকপুরের বিধায়ক শীলভদ্র দত্তও। ফলে দলের অন্দরের এই ভাঙন ক্রমশ চাপ বাড়াচ্ছে। এমতাবস্থায় তড়িঘড়ি কালীঘাটে দলের কোর কমিটির বৈঠকও ডাকা হয়েছে।
আরও পড়ুন : ‘সম্প্রীতিতেই’ ‘সমঝোতা’ দেখছে ভারত-বাংলাদেশ, মোদী-হাসিনা বৈঠকে পারস্পরিক ‘কৃতজ্ঞতার’ সুর বিদ্যমান
শুক্রবারের গেরুয়া শিবিরের বৈঠকে উঠে আসে একাধিক মামলার প্রসঙ্গও। এদিনের বৈঠকে মুকুল জানান, ‘এ রাজ্যে যারাই তৃণমূল ছাড়ছে, তাদের বিরুদ্ধেই মামলা করছে সরকার। অর্জুনের উপর ৬৫টার বেশি মামলা জারি হয়েছে। আমার উপর ৫৫ টা। যখন তৃণমূল করতাম, তখন কোনও মামলা হয়নি। সবটাই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’ উল্লেখ্য, রাজ্যের বিভিন্ন থানায় জামিন অযোগ্য ধারায় বিজেপির পাঁচ নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়, মুকুল রায়, অর্জুন সিং, পবন সিং এবং সৌরভ সিং-এর নামে প্রায় শতাধিক মামলা জারি করেছিল রাজ্য পুলিস। সকল মামলার বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে পাল্টা মামলা দায়ের করে বিজেপিও। সুরাহা না পেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন বিজেপির পশ্চিমবঙ্গের সহ-পর্যবেক্ষক অরবিন্দ মেনন। শুক্রবার, সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি সঞ্জয় কিষাণ কলের বেঞ্চ সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকারকে নোটিস ইস্যু করার নির্দেশ দেয়। মামলার পরবর্তী শুনানির আগে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা যাবে না বলেই নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
আরও পড়ুন : গণধর্ষণই করা হয়েছিল হাথরসের তরুণীকে, চার্জশিটে জানাল সিবিআই
ডায়মন্ডহারবারে জেপি নাড্ডার কনভয়ে হামলার জেরে রাজ্যের তিন আইপিএস অফিসারকে ডেপুটেশনে পাঠিয়েছে কেন্দ্র। সেই প্রসঙ্গে মুকুল বলেন, ‘কেন্দ্র যখন ঘটনাটি বিচার-বিশ্লেষণ করছে, তখন ভেবেচিন্তেই করবে। এক্ষেত্রে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তই বহাল থাকবে।’ কেন্দ্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশে আরও একধাপ এগিয়ে তিনি বলেন, ‘অমিতজী যখন মুসলিমদের তিন তালাক রদ করলেন, তখন ভারতীয় মুসলিম মহিলারা বুঝেছিলেন নরেন্দ্র মোদী তাঁদের সমস্যা বোঝেন। বাংলার মানুষও বুঝবে কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল। সোনার বাংলা গড়তে বিজেপিই ভবিষ্যৎ।’
আরও পড়ুন : EXCLUSIVE: ‘আমি অর্জুন, অভিমন্যু নই, চক্রব্যূহ ভেঙে বেরতে জানি’
এদিনের বৈঠকে, ভগবানপুর পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি শেখ হারুল হোসেন, সিটিং মেম্বার সুলতানা বেগম সহ মোট ১৮ জন তৃণমূল কর্মী একযোগে গেরুয়া শিবিরে যোগ দেন। সাংবাদিক সম্মেলনে পদ্ম শিবিরের নতুন মুখদের তালিকা ঘোষণার পর কথা শুরু করেন মুকুল রায়। উপস্থিত ছিলেন ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ অর্জুন সিংও।