কলকাতা: চারিদিকে জল। মাঝে মাঝে অর্ধেক ডুবে থাকা বাড়িগুলি আর বৈদ্যুতিন তারের খুঁটিগুলি না থাকলে যে কেউ এটিকে কোনও পুকুর বা বড় কোনও দীঘি ভেবে ভুল করতেই পারেন। লাইটপোস্টগুলি দেখেই শুধু বোঝা যায়, কোন দিক দিয়ে রাস্তা গিয়েছে। অন্তত কোমর সমান জল তো জমে আছেই। দেখে বোঝার উপায় নেই। যে রাস্তা দিয়ে কিছুদিন আগে পর্যন্ত সাইকেল, বাইক যাতায়াত করত, আজ সেখানেই স্পিডবোট নেমেছে।
সরকারি হিসেব অনুযায়ী, রাজ্যের প্রায় ২২ লাখেরও বেশি মানুষ বন্যায় প্রভাবিত হয়েছেন। দামোদর, দ্বারকেশ্বর, রূপনারায়ণ নদের জল বিপদসীমার উপর দিয়ে যাচ্ছে। নদী ফুঁসছে। আগামী দিনে আরও নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আর এরই মধ্যে গোটা ঘটনার জন্য, লাখ লাখ মানুষের ঘরছাড়া হওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকেই দায়ী করছেন বিজেপি নেতারা। মুখ্যমন্ত্রীর মুখে এর আগেও ম্যান মেড বন্যার তত্ত্ব শোনা গিয়েছে একাধিকবার। আর এবার সেই একই অস্ত্রে মুখ্যমন্ত্রীকে বিঁধল রাজ্য় বিজেপি। বঙ্গ বিজেপির নবনিযুক্ত সভাপতি সুকান্ত ভট্টাচার্য আজ বলেন, ‘এই বন্যা ম্যান মেড। মেড বাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’ আজ রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে এভাবেই রাজ্য সরকার ও প্রশাসনের সংক্ষিপ্ত ও কড় সমালোচনা করলেন তিনি।
বঙ্গ বিজেপি সভাপতির বক্তব্য, রাজ্য সরকার জল ছাড়ার বিষয়ে আগে থেকেই জানত। তাও কোনওরকম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়নি। আজ রাজ্যের লাখ লাখ মানুষের এই করুণ পরিণতির জন্য কার্যত মুখ্যমন্ত্রীকেই দায়ী করলেন তিনি। সঙ্গে, এই বন্যা পরিস্থিতির জন্য দায় যে একমাত্র রাজ্য সরকারের, তাও হাবে ভাবে বুঝিয়ে দেন তিনি।
উল্লেখ্য, বাংলার দক্ষিণের জেলাগুলিতে বন্যা পরিস্থিতির জন্য ফের ‘ম্যানমেড’ তত্ত্ব তুলে খাড়া করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যার প্রেক্ষিতে পাল্টা মমতা সরকারকে কাঠগড়ায় তোলেন বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেচ দফতরের ব্যর্থতা নিয়ে সরকারের কাছে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি তাঁর অভিযোগ, ‘কোথায় খরচ করলে ভোট ব্যাঙ্কটাকে বাড়ানো যায়, এটাই এই সরকারের এজেন্ডা। লোকসভায় বিপর্যয়ের পর রাজ্য সরকার উন্নয়নের জন্য স্থায়ী পরিকাঠামোতে বিশ্বাস করে না। খরচ করতে চায় না। উন্নয়নের খাতে বাজেট বরাদ্দ ছেঁটে ফেলা হয়েছে। শুধুমাত্র ভোট ব্যাঙ্ক তৈরির রাজনীতি করছে রাজ্যের শাসক দল।’
এদিকে দক্ষিণের বন্যা নিয়ে ডিভিসিকে তোপ দেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, না জানিয়ে জল ছাড়া হয়েছে। ঝাড়খণ্ডের বোঝা বইতে হচ্ছে বাংলাকে। ডিভিসি-র দিকে অভিযোগ তুলেছেন মমতা। কিন্তু বিজেপির দাবি, তা-নয়। রাজ্যকে জানিয়েই তারপর জল ছাড়া হয়েছে। কিন্তু তারপরেও রাজ্য সরকার বিশেষ কিছুই ব্যবস্থা করেনি বলে অভিযোগ বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের।
আরও পড়ুন: Suvendu Adhikari: ‘বাঁধ করেননি, ভাতায় খরচ করেছেন’, মমতার ‘ম্যানমেড’ তত্ত্ব খারিজ শুভেন্দুর