কলকাতা : গত লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্যে একধাক্কায় অনেকটাই আসন বাড়িয়েছিল বিজেপি। বাংলার রাজনীতিতে ক্রমশ প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছিল গেরুয়া শিবির। বামেদের পিছনে ফেলে প্রধান বিরোধীও হয়ে ওঠে বিজেপি। বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি মসনদ দখলের মরিয়া চেষ্টা চালায়। সরকার গঠনের প্রত্যাশা অধরা থাকলেও বিধানসভায় আসন সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে পদ্ম শিবিরের। তবে পুর নির্বাচনে সেই গেরুয়া অনেকটাই ফিকে। মাত্র সাত মাসের ব্যবধানে বিজেপির ভোট শতাংশ কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। যদিও বিজেপি বারবার দাবি করছে, যে অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোট হয়েছে তাতে শাসক দলের জয় স্বাভাবিক। তবে বিজেপির ভোটের হার নিয়ে প্রশ্ন উঠছে রাজনৈতিক মহলে।
১৪৪ টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল গেরুয়া শিবির। এর মধ্যে ১১৬ আসনে বিজেপি প্রার্থীদের জমানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। তিনটি আসনে বিজেপি জয়ী হয়েছে ঠিকই তবে, পুরনো কয়েকটি আসনও হাতছাড়া হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ছিল ২৯ শতাংশ, পুরসভা নির্বাচনে সেটাই কমে হয়েছে ৯ শতাংশ। পুর নির্বাচনের ফল বলছে, বিরোধী অভিমুখ ক্রমশ ঘুরে যাচ্ছে বামেদের দিকে।
২০১৫-র পুরভোটে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ছিল ১৫ শতাংশ, বিধানসভা নির্বাচনে সেটা বেড়ে হয় ২৯ শতাংশ। আর পুরসভা নির্বাচনে সেটাই নেমেছে ৯ শতাংশে। অন্যদিকে বামেদের ঝুলিতে ২০১৫ পুরভোটে ছিল ২৪ শতাংশ ভোট। বিধানসভা নির্বাচনে সেটা কমে দাঁড়ায় ৭ শতাংশে আর এবার পুরসভা নির্বাচনে কিছুটা বেড়ে হল ১১ শতাংশ।
বিধানসভা নির্বাচনে ৭৭টি কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিল বিজেপি। কিন্তু গত কয়েক মাসে বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতা নজরে এসেছে। অনেক নেতাই পদ্মের হাত ছেড়েছেন। তবে, মাত্র কয়েক মাসে সাংগঠনিক শক্তিক্ষয়ে কী পরিণতি হয়েছে, সেই ছবি দেখা গেল পুর নির্বাচনের ফলে।
২০১৫-র পুরভোটে ৭টি ওয়ার্ডে জয়ী হয়েছিল বিজেপি। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে ৫১ টি ও একুশের বিধানসভা নির্বাচনে ১২ টি ওয়ার্ডে এগিয়ে ছিল বিজেপি। তবে এবার বিজেপির ঝুলিতে এল মাত্র ৩টি ওয়ার্ড। জয়ী হয়েছেন ৫০ নম্বর ওয়ার্ডে সজল ঘোষ, ২২ নম্বর ওয়ার্ডে মীনাদেবী পুরোহিত ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিজয় ওঝা। তবে হাতছাড়া হল বড়বাজার, শোভাবাজার, চিৎপুর, বালিগঞ্জের মতো এলাকা।
মঙ্গলবার বিকেলে বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “কলকাতা ও হাওড়ায় তৃণমূল বেশি শক্তিশালী। সেই কারণেই এখানে আলাদা করে আগে ভোট করানো হয়েছে। আপনারা জেলার দিকে গেলে দেখবেন, অনেক জায়গায় আমরা শক্তিশালী। শিলিগুড়ি বা আসানসোল বোর্ড আমরা দখল করব। সেগুলিতে তারা ভোট করালেন না। মানুষের কাছে একটা ভ্রম তৈরি করা হচ্ছে, যে বিজেপি নয়, সিপিএম প্রধান বিরোধী।” তাই কলকাতায় ফল খারাপ হলেও, অন্যান্য পুরসভায় ভোট হলেই আসল ছবিটা ধরা পড়বে বলে মনে করছে পদ্ম শিবির।
আরও পড়ুন : KMC Election Result 2021: গুটিকয়েক ভোটের জন্য বামেদের হাতছাড়া হল যে সব ওয়ার্ড