কলকাতা: হাইকোর্টে স্বস্তি প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ সভাপতির। আদালত অবমাননা মামলা থেকে অব্যহতি দেওয়া হল পর্ষদ সভাপতি (West Bengal Primay Education) মানিক ভট্টাচার্যকে। তবে মামলা থেকে অব্যহতি মিললেও সোমবার পর্ষদ সভাপতিকে আদালতের তিরষ্কারের মুখে পড়তে হয়। পর্ষদের সর্বোচ্চ পদাধিকারির কোনও রকম ‘ইগো’ থাকতে পারে না বলেই তোপ দেগেছেন বিচারপতি।
২০১৪ সালের টেট পরীক্ষা নিয়ে মামলায় প্রশ্নপত্রতেই ভুল ছিল বলে জানা যায়। সেই প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে বিচারপতি (Calcutta High Court) সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায় নির্দেশ দেন, ভুল প্রশ্নের উত্তর যারা দিয়েছেন তাদের পূর্ণাঙ্গ নম্বর দিতে হবে। এর আগেও ২০১৪ সালের প্রাথমিক টেট মামলায় গাফিলতির অভিযোগে নিজের পকেট থেকে প্রত্যেক মামলাকারীকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ভুল প্রশ্নপত্রের উত্তরদাতাদের নম্বর না দেওয়ার কারণে পরবর্তী সময় আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করা হয় মানিক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে।
এরপরই গত ১০ সেপ্টেম্বর কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, মানিক ভট্টাচার্যকে সশরীরে আদালতে হাজির হতে হবে। সোমবারই ছিল সেই হাজিরার দিন। এদিকে ১০ তারিখের আদালতের নির্দেশের পরই নিয়োগপত্র হাতে পান মামলাকারী নীলোৎপল গুছাইত। স্কুল শিক্ষা দফতর তা নিয়োগপত্র তাঁর হাতে তুলে দেয়। এদিন নীলোৎপলও উপস্থিত ছিলেন এজলাসে।
এদিন শুনানি চলাকালীন পর্ষদ সভাপতি জানান, মামলাকারী নীলোৎপল গুছাইত তাঁর নিয়োগপত্র পেয়ে গিয়েছেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, পর্ষদের শীর্ষে রয়েছেন এমন একজনকে আদালতে এসে হাজিরা দিতে হচ্ছে। তাও আদালত অবমাননার দায়ে। এ বিষয়ে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, এটা খুবই খারাপ দেখায়, একজন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে থাকা কোনও ব্যক্তিকে যখন আদালতে আসতে হয়।
একটি মামলাই যদি দু’বছর ধরে চলতে থাকে, আদালতের নির্দেশের পরও নিয়োগপত্র হাতে পেতে যদি এতটা সময় লাগে, সেক্ষেত্রে এরকম মামলাগুলির ভবিষ্যৎই বা কী! এদিন এজলাসে এ প্রশ্নও ওঠে। পর্ষদ সভাপতি নিজেও এ বিষয়টি মেনে নিয়েছেন। যদিও পর্ষদের তরফে দাবি করা হয়, আদালতের রায়ের পর পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছিল তারা। এরই মধ্যে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের হওয়ায় সে প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়। অর্থাৎ মামলার জটেই এই নিয়োগপত্র দেওয়া আটকে যায়।
যদিও ১০ সেপ্টেম্বরের নির্দেশের পর পর্ষদের পদক্ষেপে খুশি আদালত এদিন জানিয়েছে, পর্ষদ সভাপতি পিতৃতুল্য। তিনি নিজেও আইন কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। এখানে অনেকেই তাঁর ছাত্র। আদালত অবমাননার দায়ে এরকম একজনকে ডেকে পাঠাতে আদালতেরও ভাল লাগে না। বিচারপতি এদিন নির্দেশ দেন, ‘যোগ্য প্রার্থীদের চাকরির ব্যবস্থা করুন। এখন সম্ভব না হলে ভবিষ্যতে যে শূন্য পদগুলি তৈরি হবে সেখানে নিয়োগের ব্যবস্থা করুন। এই চাকরিপ্রার্থীরা কতদিন আর লড়াই করবে? আপনার প্রচুর ক্ষমতা, আপনার সঙ্গে কতদিন লড়াই করতে পারবে? ” এর উত্তরে মানিক ভট্টাচার্য বলেন, “এটা আমার দুর্ভাগ্য, যে আমাকে আদালতের সামনে হাজিরা দিতে হচ্ছে। মামলাকারীরা আমার সন্তান সম।”
আরও পড়ুন: জিজ্ঞাসাবাদ করতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দফতরে হাজির সিবিআই