Contai Physical Harassment Case: ‘নির্যাতিতাকে বিয়ে করুক তৃণমূল ছাত্রনেতা’, কাঁথি ধর্ষণ মামলায় হাইকোর্টে দাবি নাবালিকার পরিবারের

Contai Physical Harassment Case: এরপরই সওয়াল করেন নির্যাতিতার আইনজীবী। তিনি বলেন, "পকসো একটি বিশেষ আইন। এই আইনে প্রভূত ক্ষমতা রয়েছে। কারও বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ উঠলে পুলিশ তাকে 41A নোটিস দিয়ে ডেকে পাঠাবে ? নাকি সরাসরি গ্রেফতার করবে ?"

Contai Physical Harassment Case: 'নির্যাতিতাকে বিয়ে করুক তৃণমূল ছাত্রনেতা', কাঁথি ধর্ষণ মামলায় হাইকোর্টে দাবি নাবালিকার পরিবারের
কলকাতা হাইকোর্ট।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Feb 06, 2023 | 12:37 PM

কলকাতা: যদি প্রেমেরই সম্পর্ক থাকে, তাহলে নির্যাতিতাকে বিয়ে করুন অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা। কাঁথির নাবালিকা ধর্ষণ মামলায় এবার সওয়াল করলেন নির্যাতিতার আইনজীবী। মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি ছিল। প্রধান বিচারপতির প্রশ্নের মুখে পড়েন মূল অভিযুক্ত। প্রধান বিচারপতি এদিন প্রশ্ন করেন, “২০ জানুয়ারি সিঙ্গল বেঞ্চে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসে আপনারা বলেছিলেন, যে অভিযুক্ত আত্মসমর্পণ করবেন, আর এখানে আগাম জামিনের আবেদন করছেন! দুই আদালতে আপনাদের অবস্থান দু’রকম কেন ?” অভিযুক্তের আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন প্রধান বিচারপতি। অভিযুক্তের  আইনজীবী সওয়াল করেন, “সেটা আমাদের আইনজীবীরা বলেছিলেন নাকি আদালত নথিবদ্ধ করেছিল, সেটা স্পষ্ট নয়।” এরপরই প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, পরে সেই নির্দেশ পুনর্বিবেচনার আর্জি জানাননি কেন? প্রধান বিচারপতির এই প্রশ্নে নিরুত্তর ছিলেন অভিযুক্তের আইনজীবী। অভিযুক্তের আইনজীবী সওয়াল করেন, বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার নির্দেশের কারণে আগাম জামিন পাওয়া সমস্যা হচ্ছে। উল্লেখ্য, নিম্ন আদালতে অভিযুক্তের আগাম জামিনের মামলা বিচারাধীন। হাইকোর্টের বিচারপতি মান্থার সিঙ্গল বেঞ্চ এই মামলায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বিচারপতির ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয় পুলিশকে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ওই নেতাকে দ্রুত গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। অভিযুক্তের আইনজীবীর বক্তব্য, বিচারপতি মান্থার নির্দেশে আগাম জামিন পেতে অসুবিধা হচ্ছে। তিনি আরও সওয়াল করেন, অভিযুক্ত এবং অভিযোগকারীর মধ্যে অনেকদিন ধরেই ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল। এই অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি জানান, ১০ জানুয়ারি এফআইআর হয়েছে, আর অভিযুক্ত ১২ জানুয়ারি তার ফোন পুলিশ আধিকারিকদের কাছে জমা করেছেন। সেক্ষেত্রে ভিডিয়ো দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল করার যে অভিযোগ উঠছে, তা ভিত্তিহীন, সেরকম কোনও সুযোগই নেই।

অভিযুক্তের আইনজীবী প্রধান বিচারপতির কাছে আরও সওয়াল করেন, তদন্তকারী আধিকারিক যদি মনে করেন গ্রেফতার করার প্রয়োজন নেই, তাহলে কেন তিনি গ্রেফতার করবেন ? তাঁর আরও সওয়াল, জামিন বা আগাম জামিন আইনি অধিকার। সেই অধিকার সিঙ্গল বেঞ্চ খর্ব করতে পারে না।

রাজ্যের তরফে এই মামলার তদন্তের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে প্রধান বিচারপতির কাছে জানানো হয়। রাজ্যের তরফে জানানো হয়, গোপন জবানন্দি নেওয়া হয়েছে,আদালতের নির্দেশ মেনে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, হুমকির অভিযোগ পুলিশ খতিয়ে দেখছে, জেনারেল ডায়েরি করা হয়েছে। রাজ্যের তরফে আদালতে এও জানানো হয়, নির্যাতিতার তরফে তদন্তে সহযোগিতা করা হচ্ছে না।

এরপরই সওয়াল করেন নির্যাতিতার আইনজীবী। তিনি বলেন, “পকসো একটি বিশেষ আইন। এই আইনে প্রভূত ক্ষমতা রয়েছে। কারও বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ উঠলে পুলিশ তাকে 41A নোটিস দিয়ে ডেকে পাঠাবে ? নাকি সরাসরি গ্রেফতার করবে ?”

নির্যাতিতার আইনজীবী আরও বলেন,”নির্যাতিতা আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। আমি স্বীকার করছি, যে নির্যাতিতা এবং অভিযুক্তর মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। গর্ভপাত করাতে বাধ্য করা হয়েছিল। যদি ভালোবাসার সম্পর্ক থাকে তাহলে অভিযুক্ত বলুন যে তিনি নির্যাতিতাকে বিয়ে করবেন।” সওয়াল করেন নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবীর।

আদালতকে তিনি জানান, অভিযোগ করার চার দিনের মধ্যে নির্যাতিতার পরিবারকে বাড়ি থেকে উৎখাত করা হয়। আর অভিযুক্ত বহাল তবিয়তে রয়েছেন। তিনি তৃণমূল ছাত্র সংগঠনের সভাপতি, অন্যতম অভিযুক্ত। বাবা একটি ব্যাঙ্কে ম্যানেজার পদে কর্মরত। তিনি প্রধান বিচারপতিকে এও জানান, নির্যাতিতার বাড়িতে হামলা হচ্ছে, হুমকি ফোন আসছে। অভিযোগ প্রত্যাহার করতে বলা হচ্ছে। পুলিশ যে নিস্পৃহ, তাও আদালতের কাছে জানান তাঁরা। জেলার পুলিশ সুপারকে ফোন করে সাহায্য চাইতে হয়েছে।

নির্যাতিতার আইনজীবীর বক্তব্য, যে ভিডিয়ো দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে, সেই ভিডিয়ো অন্য ফোনে স্থানান্তর করে করা হচ্ছে। ফাঁকা ফোন যদি পুলিশকে দেওয়া হয় তাহলে কী হবে? ভিডিও তো অভিযুক্তর কাছেই থেকে যাবে।

এদিন গোটা বিষয়টি শোনেন প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব। এই মামলার শুনানি শেষ। তবে রায়দান আপাতত স্থগিত রেখেছেন প্রধান বিচারপতি।

প্রসঙ্গত, কাঁথিতে এক নাবালিকাকে দিঘার হোটেলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ ও পরে সেই ভিডিয়ো দেখে ব্ল্যাকমেল করার অভিযোগ ওঠে তৃণমূল ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে। এবার নির্যাতিতার আইনজীবী অভিযুক্ত যাতে নির্যাতিতাকে বিয়ে করেন, তার দাবি জানালেন।