কলকাতা: এক দিকে একটানা আন্দোলনে ব্যহত সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল আর জি করের (RG Kar Hospital) চিকিৎসা পরিষেবা। অন্যদিকে, সামনে আসে হাসপাতালের একের পর এক কেলেঙ্কারি (Scam)। কিছুদিন আগেই ফাঁস হয় স্টেন কেলেঙ্কারি । অভিযোগ হাসপাতালে ৬৬ লক্ষ টাকার স্টেন্ট নয়ছয় হয়েছে। আর এবার সামনে এল কোটি কোটি টাকার আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ। জানা গিয়েছে, সরকার নির্ধারিত সংস্থা থেকে চিকিৎসা সংক্রান্ত সরঞ্জাম না কিনে, কেনা হচ্ছে অন্য সংস্থা। তার জন্য দিতে হচ্ছে অনেক বেশি টাকা। মূলত অস্থিবিভাগের বিরুদ্ধেই এই অভিযোগ উঠেছে। হাঁটু প্রতিস্থাপনের (Knee replacement) সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রেই এই উঠেছে এই অভিযোগ। লেঙ্কারির পর্দা ফাঁস করল টিভি নাইন বাংলা।
জানা গিয়েছে, সাধারণত হাসপাতাল কোন সংস্থা থেকে চিকিৎসা সংক্রান্ত সরঞ্জাম বা ওষুধ কিনবে, তা ঠিক করে দেয় স্বাস্থ্য ভবন। আরজি করের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয় না। কিন্তু দেখা যাচ্ছে গত কয়েক বছর ধরে সেই সব আরজি করে সংস্থা থেকে সরঞ্জাম বা ওষুধ না কিনে কেনা হচ্ছে অন্য সংস্থা থেকে। সরকার বহুজাতিক সংস্থার নাম ঠিক করে দিলেও সেখান থেকে কেনা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। আর তার জন্য গুনতে হচ্ছে অনেক বেশি টাকা।
তথ্য বলছে, সরকার নির্ধারিত সংস্থায় যে সরঞ্জামের দাম ৭৭ হাজার ৫০০ টাকা, সেই সরঞ্জাম কেনা হচ্ছে ৯৫ হাজার টাকা বা ৯৯ হাজার ৭৫০ টাকা দিয়ে। আবার অন্য একটি সরঞ্জামের দাম সরকার নির্ধারিত সংস্থায় ৫০ হাজার ৩৪২ টাকা। কিন্ত কেনা হচ্ছে অন্য দুটি সংস্থা থেকে, যেখানে দাম ৭৪ হাজার ১৮২ টাকা বা ৬২ হাজার ৬৬৮ টাকা। প্রত্যেক মাসে ২০ থেকে ২৫ টি হাঁটু প্রতিস্থাপন হলে সরঞ্জামের দাম পড়ছে অনেকটাই বেশি। প্রয়োজনের থেকে কয়েক কোটি টাকা বেশি খরচ হচ্ছে।
এই কেলেঙ্কারিতে সরাসরি হাসপাতালের প্রাক্তন ডেপুটি সুপারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন বর্তমান অধ্যক্ষ। অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ বলেন, ‘অনেক বেশি দাম দিয়ে সরঞ্জাম কেনা হয়। ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা বেশি পড়ে।’ এই সব কেলেঙ্কারিক কথা হাসপাতালের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার সুপ্রিয় চৌধুরী জানতেন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। পাশাপাশি, অস্থি বিভাগের প্রাক্তন প্রধান সন্দীপ রায় ও অধ্যাপক মানস বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও অভিযোগ তুলেছেন তিনি। অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের কথায়, ‘আর জি করের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আছে কেলেঙ্কারি, তদন্ত হলে সবার মুখোশ খুলে যাবে’।
তবে কেলেঙ্কারি দায় নিতে অস্বীকার করেছেন আর জি করের প্রাক্তন ডেপুটি সুপারে সুপ্রিয় চৌধুরী। তিনি জানিয়েছেন, এই অস্থি বিভাগ থেকে যেমন সরঞ্জাম চাওয়া হত, তেমনটাই কেনার ব্যবস্থা করতেন তিনি। প্রয়োজনের বাইরে গিয়ে কিছু কেনেননি বলে জানান তিনি। এই প্রসঙ্গে রোগী কল্যান সমিতির চেয়ারম্যান সুদীপ্ত রায় বলেন, ‘আমি আসার পর বিষয়টা জানতে পেরেছি। ইতিমধ্যেই অন্তর্বর্তী তদন্তও শুরু করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চান, প্রশাসন দুর্নীতি মুক্ত থাকুক, অপরাধী ধরা পড়লে কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে।’
কিছুদিন আগেই আরজি করের স্টেন্ট কেলেঙ্কারির অভিযোগ সামনে আসে। সেই কেলেঙ্কারির পর্দা ফাঁস করে টিভি নাইন বাংলা। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, সময় মতো ব্যবহার না হওয়ায় হাসপাতালের ইন্ডোর এমার্জেন্সি ফার্মাসিতে পড়ে পড়ে নষ্ট হয়েছে ২২১টি স্টেন্ট। ইন্ডোর এমার্জেন্সি ফার্মাসিতে স্টেন্ট থাকা সত্ত্বেও নতুন করে স্টেন্টের বরাত দেওয়া হয়েছিল। যার প্রত্যেকটির দাম ছিল ৩০ হাজার টাকা। এবার ফের সামনে এল আরও এক কেলেঙ্কারি।